দুর্ঘটনা ও নির্যাতনে ১০৪৫ শ্রমিকের মৃত্যু

বাংলাদেশের শ্রম ও কর্মক্ষেত্র পরিস্থিতি বিষয়ে সংবাদপত্র ভিত্তিক বিলস এক জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করে
ছবি: প্রথম আলো

সদ্য বিদায়ী বছরে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৭২৯ জন শ্রমিক। এর মধ্যে পরিবহনশ্রমিকই বেশি। এ ছাড়া নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা যান ৩১৬ জন শ্রমিক।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) এক জরিপ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

গেল বছর দেশের প্রথম সারির কয়েকটি জাতীয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদের ওপর ভিত্তি করে ‘কর্মক্ষেত্র পরিস্থিতি জরিপ–২০২০’ প্রস্তুত করে বিলস। আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ হলে বিলসের নেতারা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেন।

বিলসের প্রতিবেদন বলছে, গত বছরে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় নিহত ৭২৯ জন শ্রমিকের মধ্যে ৩৪৮ জন পরিবহনশ্রমিক, ৮৪ জন নির্মাণশ্রমিক, ৬৭ জন কৃষিশ্রমিক ও ৪৯ জন দিনমজুর। আর নির্যাতনে মারা যাওয়া ৩১৬ জন শ্রমিকের মধ্যে ৫২ জন অভিবাসী শ্রমিক, ৪২ জন কৃষিশ্রমিক ও ১৬ জন গৃহকর্মী।

শ্রমিক মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে বলা হচ্ছে, শ্রমিক মৃত্যুর বড় কারণ সড়ক দুর্ঘটনা। সর্বোচ্চ সংখ্যক পরিবহনশ্রমিক মৃত্যুরও বড় কারণ সড়ক দুর্ঘটনা। এ ছাড়া কর্মক্ষেত্রে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে অনেক শ্রমিক হতাহত হয়েছেন। কৃষিশ্রমিক মারা যাওয়ার বড় কারণ বজ্রপাত।

নির্যাতনে মারা গেছেন ৩১৬ জন শ্রমিক

বিলসের প্রতিবেদন বলছে, গত বছর ৫৯৬ জন শ্রমিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ শ্রমিকের সংখ্যা ৪৫৪। আর নারী শ্রমিক হলেন ১৪২ জন। কর্মক্ষেত্রে ২৩২ জন শ্রমিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কর্মক্ষেত্রের বাইরে নির্যাতনের শিকার হন আরও ৩৬৪ জন।

নির্যাতনে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক হতাহত হয়েছেন পরিবহনশ্রমিক। নির্যাতনে মারা যাওয়া শ্রমিকদের মধ্যে পরিবহনশ্রমিক ৯০, অভিবাসী শ্রমিক ৫২, তৈরি পোশাককর্মী ২৫, গৃহকর্মী ১৬, নিরাপত্তাকর্মী ১০, কৃষিশ্রমিক ৪২, নির্মাণশ্রমিক ৮, দিনমজুর ১১, মৎস্য শ্রমিক ১১ ও অন্যান্য ৫৭ জন।

গত বছরের (২০২০) তুলনায় ২০১৯ সালে বেশি সংখ্যক শ্রমিক নির্যাতনের শিকার হন। ২০১৯ সালে নির্যাতনের শিকার ১ হাজার ২৯২ জন শ্রমিকের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ৩৩২ জন।

সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, তৈরি পোশাক খাতসহ নানা সেক্টরে শ্রমিক অসন্তোষ ছিল। প্রত্যেক শ্রমিককে শ্রম আইনের আওতায় আনতে হবে।
বিলসের ভাইস চেয়ারম্যান সাংসদ শিরীন আখতার

৫৯৩ শ্রমিক আন্দোলন

বিলসের প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০১৯ সালের তুলনায় গত বছর (২০২০) শ্রমিক আন্দোলন বেশি হয়েছে। ২০১৯ সালে শ্রমিক আন্দোলন হয়েছিল ৪৩৪টি। তবে গত বছর আন্দোলনের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৯৩।

গেল বছর সব থেকে বেশি সংখ্যক শ্রমিক আন্দোলন হয়েছে তৈরি পোশাক খাতে, এ সংখ্যা ২৬৪। এরপর শ্রমিক আন্দোলন বেশি হয়েছে পাটশিল্পে, ৪৯টি। এর বাইরে চিনিশিল্পে ৪৬টি, পরিবহন খাতে ৪৫টি, কৃষি খাতে ২৩টি, নৌ পরিবহন খাতে ১৯টি, অভিবাসী শ্রমিক ১৮টি এবং স্বাস্থ্য খাতে ১৫টি শ্রমিক আন্দোলন সংঘটিত হয়। শ্রমিক আন্দোলনের নেপথ্যের কারণ সম্পর্কে বিলসের প্রতিবেদন বলছে, বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকেরা সর্বোচ্চ সংখ্যক ১৭৬টি আন্দোলন করেন।

বেকারত্ব বেড়েছে

বিলসের প্রতিবেদন বলছে, করোনায় তৈরি পোশাকখাতসহ অন্য খাতের শ্রমিকেরা প্রণোদনার আওতায় এলেও নির্মাণ শ্রমিকেরা দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন। নির্মাণশ্রমিকদের বড় অংশের এখন কোনো কাজ নেই।
এ ছাড়া গত বছর দেশে ছয়টি চিনিকল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে বেকার হয়ে পড়েছেন ৫ হাজার চিনিকল শ্রমিক। এর বাইরে রাষ্ট্রায়ত্ত সব পাটকল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ২৫ হাজার স্থায়ী শ্রমিককে স্বেচ্ছা অবসরে পাঠানো হয়েছে।


প্রত্যেককে শ্রম আইনের আওতায় আনতে হবে

কর্মক্ষেত্র পরিস্থিতি জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে বিলসের ভাইস চেয়ারম্যান সাংসদ শিরীন আখতার বলেন, সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, তৈরি পোশাক খাতসহ নানা সেক্টরে শ্রমিক অসন্তোষ ছিল। প্রত্যেক শ্রমিককে শ্রম আইনের আওতায় আনতে হবে।

প্রতিবেদন প্রকাশের সভায় আরও বক্তব্য দেন বিলস নির্বাহী পরিষদ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, বিলসের ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসাইন এবং আমিরুল হক আমিন, বিলসের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য নইমুল আহসান জুয়েল প্রমুখ। বিলসের জরিপের প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিলসের উপপরিচালক ইউসুফ আল মামুন।