‘দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসনের কারণে’ সংখ্যালঘুরা অর্পিত সম্পত্তি ফেরত পাচ্ছে না

অর্পিত সম্পত্তি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে ঢাকায় নাগরিক সমাবেশ
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসনের কারণে সংখ্যালঘুরা অর্পিত সম্পত্তি ফেরত পাচ্ছে না। আপিল ট্রাইব্যুনাল থেকে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণের রায় দেওয়া হলেও অধিকাংশ জেলা প্রশাসক তা বাস্তবায়ন করছেন না। অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন বাস্তবায়ন নাগরিক সমন্বয় সেলের এক সভায় এসব কথা বলেছেন বক্তারা। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীতে বেসরকারি সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম ইন বাংলাদেশের (এএলআরডি) কার্যালয়ে এ সভা হয়। আজ মঙ্গলবার সমন্বয় সেলের দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

সভায় বক্তারা বলেন, সর্বশেষ ২০১১ থেকে ২০১৩ সালের ১০ অক্টোবর অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের কয়েকটি সংশোধনী পাস হওয়ার মাধ্যমে অর্পিত সম্পত্তির ‘খ’ তফসিল বাতিল করা হয় । আর ‘ক’ তালিকাভুক্ত অর্পিত সম্পত্তি ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা হয়। মামলার নিষ্পত্তি ট্রাইব্যুনাল ও আপিল ট্রাইব্যুনালে ত্বরান্বিত হয়েছে। তবে প্রশাসনের একশ্রেণির দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তার কারণে এখনো অধিকাংশ সংখ্যালঘু পরিবার অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের প্রত্যাশিত প্রতিকার পায়নি। আপিল ট্রাইব্যুনাল থেকে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণের রায় দেওয়া হলেও অধিকাংশ জেলা প্রশাসক তা বাস্তবায়ন করছেন না। যদিও আইনে এই রায় কার্যকরের জন্য ৪৫ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া আছে। এ ছাড়া হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে যে আপিল ট্রাইব্যুনালের রায় অনুযায়ী তা বাস্তবায়ন করতে হবে।

সভায় বক্তারা ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর অর্পিত সম্পত্তি অবমুক্ত করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে এক মন্তব্যের প্রতিবাদ জানান। মন্ত্রী অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন নিয়ে বলেছিলেন, ‘এখন আইনটির একটু সংশোধনী লাগবে। এ নিয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে।’

সভায় বক্তারা বলেন, মামলার রায় হওয়ার পর সম্পত্তি অবমুক্ত করা যেখানে এখন সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দাবি, সেখানে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর এই ধরনের বক্তব্য গভীর উদ্বেগের ও বিস্ময় সৃষ্টিকারী। এর আগে একাধিকবার এই আইনের সংশোধনীর প্রস্তাবের নামে একশ্রেণির অসৎ আমলা আইনের বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত করার প্রয়াস চালিয়েছেন। সেই প্রয়াস বন্ধ করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে বিরক্তি প্রকাশ এবং উদ্যোক্তাদের তিরস্কার করতে হয়েছে।

সভায় বক্তব্য দেন বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবুল বারকাত, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত, মানবাধিকার সংগঠন ব্লাস্টের আইন উপদেষ্টা এস এম রেজাউল করিম, সামাজিক আন্দোলনের তবারক হোসাইন, অর্পিত সম্পত্তি প্রতিরোধ আন্দোলনের সুব্রত চৌধুরী, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের উপদেষ্টা কাজল দেবনাথ এবং এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা।

সভায় বক্তারা বলেন, ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যালঘুদের নিয়ে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের প্রধান প্রতিশ্রুতি ছিল, অর্পিত সম্পত্তি প্রকৃত মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু প্রায় তিন বছর হতে চলল। অর্পিত সম্পত্তি প্রকৃত মালিকদের ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া এখন শ্লথ হয়ে গেছে। প্রায় ১৩ বছর ধরে কাজ করা অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন বাস্তবায়ন নাগরিক সমন্বয় সেলের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৯ বছরে ২১ জেলার অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ ট্রাইব্যুনালে আসা আবেদনের ১০ শতাংশ সম্পত্তিও অবমুক্ত হয়নি।