দেশে করোনার টিকা দিতে জোর প্রস্তুতি

  • টিকাদানে প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ শুরু আজ।

  • দুটি প্রশিক্ষণ নির্দেশিকা চূড়ান্ত, তিনটির কাজ চলছে।

  • টিকার নিবন্ধন কার্ড চূড়ান্ত।

  • প্রচার-প্রচারণার চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে।

প্রতীকী ছবি
রয়টার্স

দেশে করোনার টিকাদানের জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ। তারা টিকা আনার উদ্যোগের পাশাপাশি টিকা সংরক্ষণ এবং দেশব্যাপী টিকা বিতরণের প্রস্তুতি প্রায় শেষ করেছে। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, টিকা আসার পর দ্রুততম সময়ে তাঁরা দেশের মানুষকে টিকা দেবেন।

এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবে কোভিড-১৯ টিকা প্রয়োগ পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ শুরু হচ্ছে আজ বুধবার। প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে মাঠপর্যায়ে কাজের গতি আসবে বলে ধারণা করছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাতৃ, নবজাতক ও শিশুস্বাস্থ্য কর্মসূচির পরিচালক শামসুল হক গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, বুধবার প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ শুরু হবে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেবেন। ইতিমধ্যে প্রশিক্ষণ নির্দেশিকাও চূড়ান্ত হয়েছে।

প্রশিক্ষণে করোনা সংক্রমণের সাধারণ ধারণার পাশাপাশি টিকা কেন্দ্র পরিচালনা, টিকা দেওয়া, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি শেখানো হবে। পাশাপাশি টিকার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে করণীয় সম্পর্কেও ধারণা দেওয়া হবে কর্মীদের।

এ মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এ ছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাঠকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকদেরও করোনার টিকার ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এসব প্রশিক্ষণ হবে জেলা ও উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত। স্বাস্থ্য বিভাগ ছাড়াও এতে নানাভাবে সহায়তা দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ, ইউএসএআইডিসহ বেশ কয়েকটি উন্নয়ন সহযোগী।

একসঙ্গে সব মানুষকে সরকার টিকা দিতে পারবে না। তাই টিকা কারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পাবেন, তার একটি শ্রেণি বিভাগ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে ৬ মাসে দেড় কোটি মানুষকে টিকা দেওয়ার একটি কর্মপরিকল্পনাও চূড়ান্ত করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেছেন, বেশি টিকা পেলে এই কর্মপরিকল্পনায় পরিবর্তন হতে পারে।

স্বাস্থ্য বিভাগ ইতিমধ্যে ১২৯ পৃষ্ঠার কোভিড-১৯ টিকা প্রয়োগ দলিল চূড়ান্ত করেছে। এই পরিকল্পনাকে তারা ‘চলমান’ দলিল বলছে। এ ছাড়া দুটি প্রশিক্ষণ নির্দেশিকা চূড়ান্ত করেছে, তিনটি নির্দেশিকা তৈরির কাজ চলছে।

স্বাস্থ্য বিভাগের পরিকল্পনাটা কোনো ছোট এলাকায় পরীক্ষামূলক বাস্তবায়ন করা দরকার, তা করলে ভুলত্রুটি শনাক্ত করা যেত। পাশাপাশি টিকা সংরক্ষণ যেন সঠিক তাপমাত্রায় হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া টিকাদান শুরুর আগে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা দরকার, যেন মানুষ স্পষ্টভাবে জানতে পারে দেশব্যাপী কী হতে যাচ্ছে।
বে-নজির আহমেদ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক

ইতিমধ্যে করোনার টিকা গ্রহীতাদের নিবন্ধনের জন্য একটি অ্যাপ তৈরির কাজ প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে। অ্যাপটি কীভাবে ব্যবহার করতে হবে, তা ১১ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের দেখানো হয়। ওই অ্যাপে নিবন্ধনের পর টিকা গ্রহণে আগ্রহী ব্যক্তি একটি কার্ড পাবেন। টিকা গ্রহণের দিন সেই কার্ড কেন্দ্রে আনতে হবে। কার্ডও ইতিমধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে। কার্ডে ব্যক্তির সাধারণ তথ্যের পাশাপাশি সাতটি সাধারণ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একটি নির্দেশনায় বলা আছে, ‘টিকা দেয়া শেষ হলেও ভবিষ্যৎ প্রয়োজনে কার্ডটি সংরক্ষণ করুন।’ এ রকম মোট ১১ ধরনের কার্ড ও ফরম চূড়ান্ত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এখন সেগুলো ছাপার অপেক্ষায়।

মানুষকে তথ্য দেওয়ার ও মানুষকে সচেতন করার জন্য যোগাযোগসামগ্রী বা কমিউনিকেশন ম্যাটেরিয়াল তৈরির কাজ করছে একটি উপকমিটি। উপকমিটির প্রধান এবং রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরামর্শক মুশতাক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, করোনার টিকা সম্পর্কে মানুষকে জানানোর জন্য বা মানুষকে সচেতন করার জন্য প্রচার-প্রচারণার চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে। যোগাযোগসামগ্রী তৈরির কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। তাতে তিনটি বিষয়ে বিশেষ করে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কেন অগ্রাধিকারের তালিকা হচ্ছে, তা মানুষের কাছে ব্যাখ্যা করা হবে। দ্বিতীয়ত, মানুষকে বোঝানো হবে টিকা দেওয়া কেন দরকার। তৃতীয়ত, টিকা দেওয়ার পর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে কী করতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, টিকা রাখার জন্য আইস লাইনার রেফ্রিজারেটর (আইএলআর) আছে সব জেলায়। আইএলআর বড় বাক্সের মতো। আর ওয়াক ইন কুল (ডব্লিউআইসি) আছে ২৯টি জেলায়। ডব্লিউআইসি একধরনের শীতল কক্ষ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাতৃ, নবজাতক ও শিশুস্বাস্থ্য কর্মসূচির পরিচালক শামসুল হক জানিয়েছেন, আরও ১৮টি জেলায় ডব্লিউআইসি স্থাপনের কাজ চলছে।

কেন অগ্রাধিকারের তালিকা হচ্ছে, তা মানুষের কাছে ব্যাখ্যা করা হবে। দ্বিতীয়ত, মানুষকে বোঝানো হবে টিকা দেওয়া কেন দরকার। তৃতীয়ত, টিকা দেওয়ার পর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে কী করতে হবে।
মুশতাক হোসেন, রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরামর্শক

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ মাসের ২১ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যে ভারত থেকে টিকা আনবে বেক্সিমকো। জেলা পর্যায়ে বেক্সিমকো সেই টিকা পৌঁছে দেবে। স্বাস্থ্য বিভাগ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় জেলা থেকে উপজেলা বা ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত টিকা পরিবহন করবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক জনস্বাস্থ্যবিদ বে-নজির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের পরিকল্পনাটা কোনো ছোট এলাকায় পরীক্ষামূলক বাস্তবায়ন করা দরকার, তা করলে ভুলত্রুটি শনাক্ত করা যেত। পাশাপাশি টিকা সংরক্ষণ যেন সঠিক তাপমাত্রায় হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া টিকাদান শুরুর আগে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা দরকার, যেন মানুষ স্পষ্টভাবে জানতে পারে দেশব্যাপী কী হতে যাচ্ছে।