দেশে জরিপভুক্ত প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ১৪ লাখ ৮২ হাজার

দেশে প্রাথমিক পর্যায়ে জরিপভুক্ত প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা ১৪ লাখ ৮২ হাজার ৭১৬ জন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ‘প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণ জরিপ কর্মসূচির’ জরিপে গত অক্টোবর মাস পর্যন্ত তাঁরা অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার ২৪তম আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস ও ১৭তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস। দিবসটি উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এই জরিপের ফল প্রকাশ করা হবে। জরিপে অন্তর্ভুক্ত ১৩ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে তাঁদের পরিচয়পত্র (আইডি কার্ড) নেবেন। এই পরিচয়পত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ‘সুবর্ণ নাগরিক’ আখ্যায়িত করা হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বুধবার পৃথক বাণী দিয়েছেন। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য:‘একীভূতকরণ: সক্ষমতার ভিত্তিতে সকল প্রতিবন্ধী মানুষের ক্ষমতায়ন’।
জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) সহায়তায় এ পর্যন্ত জরিপে অন্তর্ভুক্ত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের তথ্যভান্ডার তৈরি করা হয়েছে। তবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা বলছেন, অনেকেই এই জরিপে বাদ পড়েছেন।
২০১১-২০১২ অর্থবছর থেকে এই জরিপ শুরু হয়। প্রতিবন্ধিতার ধরন চিহ্নিতকরণ, মাত্রা নিরূপণ ও কারণ নির্দিষ্টপূর্বক প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর সঠিক পরিসংখ্যান জানার জন্যই দেশব্যাপী এ কর্মসূচি নেওয়া হয়। তবে সঠিক পরিসংখ্যান এখনো জানা যায়নি। অবশ্য এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, জরিপ একটি চলমান প্রক্রিয়া।
জরিপে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মনোনীত চিকিৎসক এবং জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের আওতাধীন প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞরা (১১ ধরনের প্রতিবন্ধিতা) প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শনাক্ত করেন। জরিপের আওতায় জাতীয় তথ্যভান্ডার ব্যবহার করে সব প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে পরিচয়পত্র দেওয়া ছিল জরিপের অন্যতম উদ্দেশ্য। এ পরিচয়পত্রের মাধ্যমেই প্রতিবন্ধিতার ধরন অনুযায়ী বিদ্যমান উন্নয়ন কার্যক্রম পুনর্বিন্যাস করার কথা। তবে আপাতত পরিচয়পত্র পাচ্ছেন ১৩ জন।
প্রতিবন্ধী নাগরিক সংগঠনের পরিষদের (পিএনএসপি) সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহবুব ওই ১৩ জনের একজন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জাতীয় জরিপ করে পরিচয়পত্র দেওয়ার বিষয়টি প্রশংসার যোগ্য। এ পরিচয়পত্রের মাধ্যমেই ভবিষ্যতে আমাদের সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিতে হবে। এ পরিচয়পত্র প্রমাণপত্র হিসেবে কাজ করবে। তবে জরিপ-প্রক্রিয়ার বিভিন্ন জটিলতা, প্রচার না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে অনেকেই জরিপ থেকে বাদ পড়েছে।’
জরিপে নাম লেখানো, ছবি তোলা, চিকিৎসকের মাধ্যমে শনাক্তকরণ হওয়ার পর একটি স্লিপ পেয়েছেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী রবিউল ইসলাম। দীর্ঘদিন আগে এ প্রক্রিয়া শেষ হলেও রবিউল এখনো জানেন না এ জরিপের উদ্দেশ্য কী। তিনি বলেন, ‘আমারে শুধু বলা হইছে, ভবিষ্যতে আমার ভালো হবে।’
জরিপ কর্মসূচির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর পরিবার/ব্যক্তির সংখ্যা নির্ধারণ, দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণ, নিবন্ধন এবং পরিচয়পত্র দেওয়া, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ছবিসহ তথ্যসংবলিত তথ্যভান্ডার তৈরি এবং তথ্যাদি প্রশাসনিক, মন্ত্রণালয়ের ব্যবহার উপযোগী করা, সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি/প্রকল্পে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্তির কৌশল সহজতর করাসহ বিভিন্ন লক্ষ্যকে সামনে রেখে এই জরিপ কার্যক্রম হাতে নেয় সরকার।
প্রথমে পাইলট ভিত্তিতে শুরু হলেও বর্তমানে দেশব্যাপী জরিপ কার্যক্রম কর্মসূচি আকারে পরিচালিত হচ্ছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এ খাতে আড়াই কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়।
এই কর্মসূচির কর্মসূচি পরিচালক আশরাফী আহমদ বলেন, একসময় সমাজসেবার পক্ষ থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হলেও তা এখন আর করা হচ্ছে না। রাস্তায় থাকা ভিক্ষুকসহ অনেকেই বাদ পড়ছেন। কর্মসূচিতে জনবল সমস্যা, প্রচার কম হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে কর্মসূচির টাকা ফেরতও গেছে। তিনি বলেন, জরিপ একটি চলমান প্রক্রিয়া। বর্তমানে ইউনিসেফের সহায়তা ছাড়া সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে তথ্যভান্ডার তৈরির সফটওয়্যার আপডেট করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
কর্মসূচি-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, যাঁরা জরিপে অন্তর্ভুক্ত হননি তাঁরা সমাজসেবা কার্যালয়ে যোগাযোগ করে বা মন্ত্রণালয় ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তৈরি করা ওয়েবসাইটে যে ফরম আছে তা পূরণ করে কাছের সমাজসেবা কার্যালয়ে জমা দিয়ে অথবা ই-মেইলে [email protected] তথ্য পাঠাতে পারবেন। পরে নির্ধারিত তারিখে তাঁদের ডাকা হবে।