দেশে বিরোধী দল বলতে বাস্তবে কিছু নেই: সুলতানা কামাল

সুলতানা কামাল
ফাইল ছবি

মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেছেন, দেশে বিরোধী দল বলে বাস্তবিক অর্থে কিছু নেই। এমন একটি রাজনৈতিক পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে, যেখানে সরকারের কাজে বাধা দেওয়ার মতোও কেউ নেই। বাধা তারা নিজেরাই দিচ্ছে। নিজেদের মধ্যেই বাধা সৃষ্টিকারীদের অনুপ্রবেশ ঘটানো হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে কথাগুলো বলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল। ‘পায়রা বন্দর প্রকল্পের কারণে উচ্ছেদ হুমকির সম্মুখীন রাখাইন পরিবারকে রক্ষার জন্য’ শীর্ষক এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। নাগরিক সমাজের ব্যানারে ছিল এ আয়োজন।

সংবাদ সম্মেলনে আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ছয়আনিপাড়ার ছয়টি রাখাইন পরিবারকে কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে তাদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদের পাঁয়তারা চলছে। পায়রা তৃতীয় সমুদ্রবন্দরের জন্য জমি অধিগ্রহণের আওতায় পড়ায় প্রায় ৩০০ বছরের প্রাচীন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার রাখাইনপল্লি নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। বন্দরের জন্য জমি অধিগ্রহণের সময় পাড়াটিকে বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়ে এলেও কর্তৃপক্ষ তাদের দাবি তোয়াক্কা না করে কয়েক মাস আগে থেকে বারবার নোটিশ দিয়ে আসছিল।

এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সুলতানা কামাল সরকারের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন দল দাবি করে, তারা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি। তাদের দল মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিল বলেই শুধু তারা এ অবস্থান দাবি করতে পারে না। সপক্ষের শক্তি হতে গেলে মুক্তিযুদ্ধের শর্তগুলো মানতে হবে। এর মধ্যে আছে জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সব মানুষের অধিকারের প্রতি সম্মান, সহাবস্থান নিশ্চিত করা।

মুক্তিযোদ্ধা সুলতানা কামাল বলেন, ‘এসব শর্ত মানলেই শুধু সপক্ষের শক্তি হিসেবে দাবি করা সংগত হবে। আর তা মানলে আমরাও সরকারকে তার কাজে সহযোগিতা করব।’

সুলতানা কামাল বলেন, ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের অধিকারকে মূল্যহীন করে দেওয়া হচ্ছে। তাদের অধিকারের প্রতি অসম্মান করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তিনি কলাপাড়ার ছয়আনিপাড়ার রাখাইনদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

আজকের অনুষ্ঠানে ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, পটুয়াখালীর এ গ্রামে মাত্র ছয়টি রাখাইন পরিবার আছে কেন? এর কারণ হলো এখানে তারা আর থাকতে পারেনি। চলে যেতে হয়েছে। চলে যেতে বাধ্য করা হয়েছে।

প্রবীণ রাজনীতিক পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশের ধারাবাহিক উন্নতি হচ্ছে বলা হলেও আসলে বাংলাদেশ গরিব হচ্ছে। কারণ, এখানে সকল শ্রেণির মানুষের বৈচিত্র্য, তাদের অধিকার স্বীকৃত হচ্ছে না। এসব মানুষকে স্বীকার না করা তো একটি দেশের দারিদ্র্যেরই লক্ষ্মণ।

অনুষ্ঠানের সঞ্চালক আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, শুধু দুই চোখ দিয়ে নয়, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষকে অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দেখতে হবে রাষ্ট্রকে। হৃদয় দিয়ে দেখতে হবে। এটাই মানবিক রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য।

সংবাদ সম্মেলনে মূল নিবন্ধ পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস।

আরও বক্তব্য দেন বেসরকারি সংগঠন এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামুসল হুদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরিন, নাগরিক উদ্যোগের নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল, অধিকারকর্মী মেইনথেইন প্রমীলা, পটুয়াখালীর স্থানীয় রাখাইন জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধি চিং ধা মং প্রমুখ।