দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করা হচ্ছে

বাংলাদেশে করোনা মহামারিকালে জনগণের তথ্য অধিকারের ক্রমাগত লঙ্ঘন ও সংকোচন ঘটেছে বলে মনে করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন আর্টিকেল নাইনটিন। মতপ্রকাশের স্বাধীনতাও খর্ব করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস- ২০২১ উপলক্ষে আজ সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এমন প্রবণতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংগঠনটি। কাল ২৮ সেপ্টেম্বর তথ্য অধিকার দিবস পালিত হবে।

আর্টিকেল নাইনটিন বলেছে, মহামারির প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সমন্বয়হীনতা, কর্মপরিকল্পনায় অস্বচ্ছতা ও জবাবদিহির তীব্র অভাব বাংলাদেশে এই সংকটকে গভীরতর করেছে। একই সঙ্গে রাষ্ট্রের বিভিন্ন যন্ত্রের হাতে তথ্যের অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা প্রতিনিয়ত খর্ব করা হচ্ছে, যা সরকারের প্রতিশ্রুত টেকসই, স্থিতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ বিনির্মাণের পরিপন্থী।

আর্টিকেল নাইনটিনের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সল বলেন, করোনাকালে সরকার নানা অজুহাত দেখিয়ে তথ্য পাওয়ার অধিকার ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করেছে। এমনকি করোনা ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্যসেবা ও টিকার বিষয়ে অনেক সময় ভুল ও অসংগতিপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। স্বাস্থ্য খাতের চিহ্নিত অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে সরকার উল্টো সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের ওপরই খড়্গহস্ত হয়েছে। এ জন্য ২০১৮ সালের নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ শতবছরের পুরোনো দাপ্তরিক গোপনীয়তা আইনের অপব্যবহার হচ্ছে।

আর্টিকেল নাইনটিন গণমাধ্যমে প্রকাশিত মতপ্রকাশজনিত অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ ও রেকর্ড করে। সংগঠনটি ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া ১৭২টি মামলার ঘটনা রেকর্ড করেছে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ৩০৮ ব্যক্তি এসব মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন, যাঁদের মধ্যে ৪১ জন সাংবাদিক রয়েছেন। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ১১৪ জনকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাঁদের অনেকে এখনো জামিন পাননি। ২০২০ সালে ৩৬৮ ব্যক্তির বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ১৯৭টি মামলার তথ্য রেকর্ড করা হয়। এর আগে ২০১৯ ও ২০১৮ সালে রেকর্ড করা মামলার সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৬৩ ও ৩৪।

বিচারপ্রক্রিয়া নিষ্পন্ন না হওয়ায় এসব মামলার ভুক্তভোগীর বেশির ভাগ এখনো গ্রেপ্তার ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

ফারুখ ফয়সল আরও বলেন, তথ্য পাওয়া নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকার। একইভাবে ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা ও গোপনীয়তার সম–অধিকারও নাগরিকের রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে প্রায়ই ব্যক্তিগত মুঠোফোনে আড়িপাতা এবং গোপন ফোনালাপ ফাঁস হয়ে যাওয়ার মতো উদ্বেগজনক ঘটনা ঘটছে। এরই মধ্যে প্রস্তাবিত ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইন ব্যক্তিতথ্য সুরক্ষার নামে বিরুদ্ধ মত নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হবে এবং স্বাধীন মতপ্রকাশ আরও বাধাগ্রস্ত করবে বলে জনমনে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।