দেশে মাসে ২৫ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা

প্রথম মাসে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মী, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং ৮০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিদের করোনার টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। তাঁদের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ২৪ লাখ। এভাবে প্রথম ছয় মাসে অগ্রাধিকার পাওয়া দেড় কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। টিকাদানের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তৈরি করা ছকে এ তথ্য আছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ইতিমধ্যে কোভিড-১৯ টিকা বিতরণ পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। এখন তা অনুমোদনের অপেক্ষায়। ওই পরিকল্পনার ওপর ভিত্তি করে মাসওয়ারি টিকা দেওয়ার ছক তৈরি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ওই ছকে দেখা যায়, প্রতি মাসে ২৫ লাখ টিকা দেওয়ার কথা ভাবছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

সরকার মোট ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। প্রথমে ৩ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। এদের মোট সংখ্যা দেড় কোটির মতো। এরপর টিকা পাওয়া মানুষের হার পর্যায়ক্রমে ৭, ১০, ২০ ও ৪০ শতাংশে উন্নীত করা হবে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা (আইইডিসিআর) প্রতিষ্ঠানের পরার্শক ডা. মুশতাক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সব মানুষকে একসঙ্গে টিকা দেওয়া সম্ভব হবে না। মোট ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনার জন্য এভাবে ভাগ ভাগ করে পরিকল্পনা করা হয়েছে।

সরকার টিকা সংগ্রহ বা কেনার জন্য এ পর্যন্ত একটি মাত্র টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে টিকা দেবে, চুক্তিতে এমন শর্ত আছে। এভাবে তারা ছয় মাসে মোট তিন কোটি টিকা দেবে। সেরাম থেকে ঠিক কবে নাগাদ টিকা আসবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে করোনা টিকার বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্স থেকে টিকা পাবে বাংলাদেশ। কোভ্যাক্স বলেছে, এ বছরের প্রথম তিন মাসের মধ্যে তারা টিকা দেবে। তবে কত টিকা দেবে, তা নিশ্চিত নয়।

টিকা বিতরণের পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সরাসরি যুক্ত চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মী এবং অ্যাম্বুলেন্সচালককে প্রথম মাসে টিকা দেওয়া হবে। একই সময়ে বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতের একই ধরনের কর্মীকে টিকা দেওয়া হবে। প্রথম মাসে ২ লাখ ১০ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধা টিকা পাবেন। এ ছাড়া ৮০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিদের টিকা দেওয়া হবে।

অগ্রাধিকারের তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসরণ করা হয়েছে।
অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা, সরকারের কোভিড-১৯ টিকা বিতরণ কোর কমিটির প্রধান

কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সরাসরি জড়িত নয় সরকারি ও বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের এমন ব্যক্তিরা দ্বিতীয় মাসে টিকা পাবে। এ ছাড়া অগ্রাধিকারের তালিকায় আছেন সম্মুখসারির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী (পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ, আনসার, ভিডিপি), প্রতিরক্ষা বাহিনী, রাষ্ট্রীয় কাজের অত্যাবশ্যকীয় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মী, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারী, দাফন ও সৎকারে জড়িত ব্যক্তি, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির জরুরি কর্মী, বন্দরের কর্মী, বিদেশ গমনেচ্ছু অদক্ষ শ্রমিক এবং জেলা-উপজেলায় জরুরি সেবায় নিযুক্ত সরকারি কর্মীরা। দ্বিতীয় মাসে তাঁদের অর্ধেককে টিকা দেওয়া হবে। বাকি অর্ধেক পাবেন তৃতীয় মাসে। যেমন মোট ৫০ হাজার সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মীকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। দ্বিতীয় মাসে ২৫ হাজার ও তৃতীয় মাসে বাকি ২৫ হাজার সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মীকে টিকা দেওয়া হবে।

দ্বিতীয় মাসে ৭৭ থেকে ৭৯ বছর বয়সী সব মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। অন্যান্য পেশার বাকি অর্ধেকের পাশাপাশি তৃতীয় মাসে যুক্ত হবেন ধর্মীয় নেতারা। এই পর্যায়ে ৭০ থেকে ৭৩ বছর বয়সী ২০ লাখ ৬ হাজার ৮৭৯ জনকে টিকা দেওয়া হবে।

পঞ্চম ও ষষ্ঠ মাসে শুধু বয়স্ক মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেছেন, ২০১১ সালের আদমশুমারির জনসংখ্যার ভিত্তিতে বয়স্কদের এই সংখ্যা ব্যবহার করা হয়েছে।

প্রতি মাসে যে নির্দিষ্টসংখ্যক ব্যক্তিকে টিকা দেওয়া হবে, তার চেয়ে কিছু বেশি টিকা জরুরি ব্যবহারের জন্য হাতে রাখবে স্বাস্থ্য বিভাগ। যেমন প্রথম মাসে হাতে রাখা হবে বাড়তি ৪৫ হাজার টিকা। এরপর প্রতি মাসে ২৫ হাজার করে টিকার মজুত রাখবে স্বাস্থ্য বিভাগ।

সরকারের কোভিড-১৯ টিকা বিতরণ কোর কমিটির প্রধান ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, অগ্রাধিকারের তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসরণ করা হয়েছে। তা ছাড়া এ বিষয়ে একটি উপকমিটি করা হয়েছে। এ উপকমিটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনার পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পরামর্শ নিয়ে তালিকা তৈরি করেছে।