দেশের সৌন্দর্যমণ্ডিত মন্দির কান্তজিউ

কান্তজিউ মন্দির। ছবি: ওয়ারেছ আলী
কান্তজিউ মন্দির। ছবি: ওয়ারেছ আলী

প্রকৃতির লীলাভূমি এই দেশে রয়েছে অসংখ্য ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। কান্তজিউ বা কান্তনাগর মন্দির এদের মধ্যে অন্যতম। ইটের তৈরি অষ্টাদশ শতাব্দীর এই মন্দিরটি ইন্দো-পারস্য ভাস্করশৈলীতে নির্মিত বাংলাদেশের সবচেয়ে সৌন্দর্যমণ্ডিত মন্দির।

মন্দিরের উত্তর দিকের ভিত্তিবেদির শিলালিপি থেকে জানা যায়, তৎকালীন দিনাজপুরের মহারাজা জমিদার প্রাণনাথ রায় তাঁর শেষ বয়সে মন্দিরের নির্মাণকাজ শুরু করেন। ১৭২২ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁর পোষ্যপুত্র মহারাজা রামনাথ রায় ১৭৫২ খ্রিষ্টাব্দে মন্দিরটির নির্মাণকাজ শেষ করেন। শুরুতে মন্দিরের চূড়ার উচ্চতা ছিল ৭০ ফুট। ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে মন্দিরটি ভূমিকম্পের কবলে পড়লে এর চূড়াগুলো ভেঙে যায়।

দিনাজপুর শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে দিনাজপুর-তেঁতলিয়া সড়কের প্রায় এক মাইল পশ্চিমে ঢেঁপা নদীর তীরে কান্তনগর গ্রামে অবস্থিত এই মন্দির।

আমাদের পর্যটনশিল্প বিকাশের যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকলেও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় আমরা ক্রমাগত পিছিয়ে পড়ছি। আমাদের পার্শ্ববর্তী অনেক দেশ, যেখানে এই শিল্পের ওপর নির্ভর করে অর্থনীতি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, সেখানে আমরা স্থবির হয়ে আছি। সিঙ্গাপুরের জাতীয় আয়ের ৭৫ শতাংশ, তাইওয়ানের ৬৫ শতাংশ, হংকংয়ের ৫৫ শতাংশ, ফিলিপাইনের ৫০ শতাংশ, থাইল্যান্ডের ৩০ শতাংশ আসে পর্যটন খাত থেকে। মালদ্বীপের অর্থনীতির বেশির ভাগই আসে পর্যটন খাত থেকে।

সার্কভুক্ত দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের পর্যটনশিল্প বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে অনেক পিছিয়ে রয়েছে।

কান্তজিউ মন্দির নির্মাণের ২৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখানো পর্যটনশিল্প সেভাবে বিকশিত হয়নি ওই এলাকা। সরকারের সুদৃষ্টি ও স্থানীয় সরকারের ইচ্ছার অভাবে প্রত্নতাত্ত্বিক এ স্থাপনার মূল্যায়ন হচ্ছে না। প্রতিবছর রাশ মেলায় সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করে থাকে এ মন্দির থেকে। এ স্থাপনার সঠিক সংরক্ষণ ও পরির্চযা করা গেলে দিনাজপুর জেলা অর্থনৈতিকভাবে সৃমদ্ধি লাভ করবে। বছরের প্রায় সময় বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনা থাকে মন্দিরটিতে। পর্যটকদের জন্য বিশেষ সুযোগ-সুবিধা, মন্দিরটির আশপাশের জায়গাগুলোর সৌন্দর্যবর্ধন ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হলে পর্যটকেরা বেশি আসবেন। সঙ্গে এখানকার মানুষের সৃষ্টি হবে নতুন কর্মসংস্থান।

কারোনা–কাল শেষে যেভাবে ঘুরে আসতে পারেন

ঢাকা থেকে বাস এবং ট্রেনে দিনাজপুরে যাবেন। সাধারণত ঢাকার গাবতলী ও কল্যাণপুর থেকে দিনাজপুরগামী বাসগুলো ছেড়ে যায়। বাস সার্ভিসের মধ্যে রয়েছে নাবিল পরিবহন, এস আর ট্রাভেলস, এস এ পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, কেয়া পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন ইত্যাদি। নন-এসি এবং এসি বাসে ভাড়া মানভেদে ৫০০ থেকে ২০০০ টাকা।

ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে আন্তনগর দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেন দিনাজপুরের উদ্দেশে রাত ৮টায় ছেড়ে যায়। আন্তনগর ট্রেন একতা এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে সকাল ১০টায় ছাড়ে। আর পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেন ঢাকা থেকে ছেড়ে যায় রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে। শ্রেণিভেদে এসব ট্রেনের টিকিট কাটতে ৪৫০ থেকে ৯৯০ টাকা লাগে।

দিনাজপুর থেকে অটোরিকশা বা সিএনজি ভাড়া করে সহজেই কান্তজিউ মন্দির দেখতে যেতে পারবেন। এ ছাড়া ঢাকা থেকে বিমানযোগে সৈয়দপুর এসেও ঘুরতে পারেন। সৈয়দপুর থেকে মন্দিরের দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার।

*শিক্ষার্থী: স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়