দোলাচলে লাঠিটিলা সীমান্তবাসী

ভারতের লোকসভায় বাংলাদেশ-ভারত স্থলসীমান্ত বিল অনুমোদনের পর মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার লাঠিটিলা-ডোমাবাড়ী সীমান্তের লোকজন অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। স্থলসীমান্ত চুক্তি অনুযায়ী সেখানে দুই দেশের সীমানা নতুন করে চিহ্নিত করা হবে। ফলে ওই সীমান্তের বিরোধপূর্ণ জায়গা বাংলাদেশ নাকি ভারতের অন্তর্ভুক্ত হবে, তা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্বিগ্ন।
ভূমি রেকর্ড জরিপ অধিদপ্তর সূত্র এবং ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, লাঠিটিলা-ডোমাবাড়ী সীমান্তের ১৩৯৭ নম্বর প্রধান খুঁটি থেকে ১৪০০ নম্বর প্রধান খুঁটির ১ নম্বর আর আই (ভারত অংশের খুঁটি) এবং ২ নম্বর আর বি (বাংলাদেশ অংশের খুঁটি) খুঁটির মধ্যবর্তী এলাকায় কোনো সীমান্ত খুঁটি নেই। ওই স্থানের প্রায় ১২০ একর জায়গার মালিকানা নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। তবে জায়গাটি বাংলাদেশের দখলে রয়েছে। সীমান্তের ওপারে ভারতের আসাম রাজ্যের করিমগঞ্জ জেলার অবস্থান। ২০১১ সালে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ জরিপ দল বিরোধপূর্ণ জায়গাটি জরিপ করে। জরিপকাজ শেষে ওই যৌথ জরিপ দল নির্দেশক মানচিত্রে (ইনডেক্স ম্যাপ) স্বাক্ষর করে। এরপর স্বাক্ষরিত সীমান্ত প্রটোকল চুক্তিতে বলা হয়েছে, লাঠিটিলা-ডোমাবাড়ীসহ (আসাম), পশ্চিমবঙ্গের দুই খাটা ৫৬ ও ত্রিপুরার মুহুরী নদী-বিলোনিয়া সীমান্তে সীমানা চিহ্নিত করা হবে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার (৭ মে) ভারতের লোকসভায় সর্বসম্মতভাবে স্থলসীমান্ত বিল অনুমোদন করা হয়।
জুড়ী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে সীমান্তঘেঁষা গ্রাম লাঠিটিলা-ডোমাবাড়ী। গ্রামের শেষ প্রান্তে পত্নীছড়া নামের ছোট একটি খাল দুই দেশের সীমানা আলাদা করে দিয়েছে। খালের ওপর রয়েছে পুরোনো একটি লোহার সেতু। প্রথম আলোর সরেজমিন পরিদর্শনে গত শনিবার (৯ মে) বিকেলে গ্রামটির প্রবেশমুখে কাঁচা রাস্তার এক পাশের মুদি দোকানে তিন-চারজন স্থানীয় লোককে গল্প করতে দেখা যায়। স্থলসীমান্ত বিল অনুমোদন সম্পর্কে তাঁদের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ষাটোর্ধ্ব সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এই বিষয় নিয়াই অনেক সময় ধরি আলোচনা করছি। পত্রিকাত পড়ছি ই-জাগা আবার মাপজোখ অইব। মাপলে আমরা পাইমু না ইন্ডিয়ায় পাইব—ইটাই তো চিন্তার বিষয়। জাগাটা আরাইলে আমরা একেবারে নিঃস্ব অই যাইমু।’
সিরাজুলের সঙ্গী আনজব আলী ক্ষোভের সঙ্গে বললেন, ‘মাপজোখ অউক—ভালা কথা। তবে ইন্ডিয়ায় পাইলে আমরা কিন্তু ভিটামাটি ছাড়তাম নায়। এতে যা অয় অইব।’
লাঠিটিলা-ডোমাবাড়ীতে দীর্ঘদিন ধরে ৭০টি পরিবার বাস করছে বলে এলাকাবাসী সূত্র জানিয়েছে। স্থানীয় গোয়ালবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য বাবুল মিয়া আশা প্রকাশ করেন, সঠিকভাবে সীমানা চিহ্নিত করা হলে এই ১২০ একর জায়গা বাংলাদেশ পাবে।
লাঠিটিলা-ডোমাবাড়ী গ্রামের পাশেই বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ৫২ ব্যাটালিয়নের লাঠিটিলা ক্যাম্প। সেখানকার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা সুবেদার আবদুল মালেক বলেন, সীমান্তখুঁটিবিহীন এলাকায় ভারত এখনো কাঁটাতারের বেড়া দেয়নি। সীমানা চিহ্নিত করার পর তারা বেড়া নির্মাণ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সীমান্তের পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।