দোকানে নেই, তবে গুদামভর্তি সয়াবিন তেল

ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের অভিযানে দুই হাজার লিটার তেল জব্দ করা হয়। চৌমুহনীর কর্ণফুলী বাজার, চট্টগ্রাম। শনিবার দুপুরে
ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামের চৌমুহনীর কর্ণফুলী বাজারের মেসার্স জে আলম অ্যান্ড ব্রাদার্সের মালিক তৌহিদুল ইসলামকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পুরোনো দামে সয়াবিন তেল কিনে গুদামে মজুত করেছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর দোকানে কোনো তেল ছিল না।
আজ শনিবার বেলা তিনটায় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে দোকানের গুদামে ১ হাজার ৫০০ লিটার তেল পান। পরে এসব তেল ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করা হয়।

ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক দিদার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বেশি লাভের আশায় ওই দোকানি পুরোনো দামে কিনে তেল মজুত করেছিলেন। পরে সংকট সৃষ্টি হওয়ার পর বেশি দরে বিক্রি শুরু করেন। তাঁর কাছে এক, দুই, তিন ও পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল ছিল। অপরাধ স্বীকার করেছেন দোকানি। তাঁকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

অবশ্য শুধু জে আলম অ্যান্ড ব্রাদার্স নয়, বেশি দামে বিক্রি করায় কাজী এন্টারপ্রাইজ নামের এক পরিবেশক প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কর্মী মোহাম্মদ শুভকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির গুদামে পাওয়া যায় ৫০০ লিটার সয়াবিন তেল।

ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক দিদার হোসেন জানান, বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছেন মোহাম্মদ শুভ। পুরোনো তেল বিক্রি করেননি। এখন দাম বেড়ে যাওয়ায় বিক্রি করা শুরু করেন। তাই তাঁকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

সয়াবিন তেলের সংকট শুরু হওয়ার পর চট্টগ্রামের বাজারগুলোয় অভিযান শুরু করে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর চট্টগ্রাম কার্যালয়। অভিযানে দোকানের গুদাম থেকে বিপুল পরিমাণ তেল উদ্ধার করা হয়। দোকানিরা বেশি লাভের আশায় এসব তেল গুদামজাত করেন।

গতকাল শুক্রবার চৌমুহনী কর্ণফুলী বাজারের তিনটি দোকানের মালিককে জরিমানা করে অধিদপ্তর। এর মধ্যে মজুমদার স্টোরের মালিক তৌহিদুল ইসলাম দুই মাস আগে পাঁচ লিটারের সয়াবিন তেল কিনেছিলেন। কেনা পড়েছিল ৭৪০ থেকে ৭৫০ টাকা। বিক্রয়মূল্য ছিল ৭৬০। তবে তিনি এসব তেল বিক্রি না করে গুদামে ভরে রাখেন। এখন দাম বেড়ে যাওয়ার পর পুরোনো তেলগুলো ৯৮৫ টাকা দরে বিক্রি করতে শুরু করেন তিনি।

খবর পেয়ে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর তাঁর দোকানে অভিযান চালায়। গুদাম থেকে ২ হাজার ২০০ লিটার তেল উদ্ধার করা হয়। পরে তৌহিদুলকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। দোকানটিও সাময়িক সময়ের জন্য সিলগালা করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি গুদামে পাওয়া তেল ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করা হয়।

কম দামে কিনে বেশি দামে তেল বিক্রি করছিল রশিদ অ্যান্ড ব্রাদার্সও। এ দোকানে ৩০০ লিটার তেল পাওয়া যায়। দোকানের মালিক আবদুর রবকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। আর আবদুল হাকিম স্টোরে ১৯৮ টাকা লিটারের বোতল বিক্রি হচ্ছিল ২১০ টাকায়। তাই দোকানের মালিক জাকির হোসেনকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. ফয়েজ উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী তেল মজুত করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছেন। তাঁদের ধরতে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম নগরের ছোট পোল এলাকায় বোতলজাত সয়াবিন তেল খোলা হিসেবে বিক্রি করায় বিসমিল্লাহ স্টোরের মালিক নাঈম হাসানকে জরিমানা করা হয়। বুধবার চট্টগ্রামের কর্নেলহাট বাজারের ব্যবসায়ী আইয়ুব আলীকে বাড়তি দামে তেল বিক্রির অপরাধে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। আর সোমবার পাহাড়তলী বাজারের দিল্লি লেন এলাকার একটি দোকানের ৩টি গুদাম থেকে ১৫ হাজার লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করে অধিদপ্তর। পরে ওই দোকানিকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জব্দ তেল আশপাশের দোকান ও ভোক্তাদের কাছে নির্ধারিত দামে বিক্রি করা হয়।

অন্যদিকে ৮ মে নগরের ২ নম্বর গেটের কর্ণফুলী কমপ্লেক্সের খাজা স্টোর নামের একটি দোকানের নিচে থাকা গুদামে ১ হাজার লিটার তেলের খোঁজ পায় অধিদপ্তর।

৫ মে বাণিজ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠকের পর সয়াবিন ও পাম তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করে ভোজ্যতেল পরিশোধন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। তাতে বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের খুচরা দাম নির্ধারণ করা হয় ১৯৮ টাকা, যা আগে ছিল ১৬০ টাকা। আর ৫ লিটারের বোতলের দাম নির্ধারণ করা হয় ৯৮৫ টাকা, যা আগে ছিল ৭৬০ টাকা। এ ছাড়া খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৮০ টাকা ও খোলা পাম তেল ১৭২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আগে খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৩৬ টাকা ও পাম তেল ছিল ১৩০ টাকা।