দয়াগঞ্জ-দোলাইরপাড় সড়ক ক্ষতবিক্ষত!

সড়কের অনেক অংশের অবস্থাই এ রকম। দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে মঙ্গলবার ছবিটি তুলেছেন হাসান রাজা
সড়কের অনেক অংশের অবস্থাই এ রকম। দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে মঙ্গলবার ছবিটি তুলেছেন হাসান রাজা

হরতাল চলছে, ভারী যানবাহন নেই। রাস্তা প্রায় খালি। তার মধ্যেই একটি রিকশা যাত্রী নিয়ে চলতে চলতে হঠাৎ উল্টে গেল। হাঁটুতে চোট পেলেন যাত্রী আবুল কাশেম। আর আচমকা গায়ে এসে পড়ায় আঘাত পায় রাস্তার পাশে মীর হাজিরবাগ কাঁচাবাজারের সামনে দাঁড়ানো কিশোর শ্রমিক রতন।
রতন বলে, ‘হগল সময়ই ঘটে। এগুলো আমাগো সইয়া গেছে।’

এ ঘটনা গত সোমবার দুপুরের। কাঁচাবাজারসংলগ্ন এলাকা পশ্চিম যাত্রাবাড়ীর স্থায়ী বাসিন্দা মো. হানিফ বললেন, প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা ঘটার প্রধান কারণ দয়াগঞ্জ-মীর হাজিরবাগ-দোলাইরপাড় সড়কের ক্ষতবিক্ষত অবস্থা।
সিটি করপোরেশনের ৫০ ও ৫১ নম্বর ওয়ার্ডে (পুরোনো ৮৬ ও ৮৭) পড়েছে সড়কটি। আট বছর আগে ২০০৫ সালে প্রায় তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ধোলাইখাল ভরাট করে চালু করা হয়েছিল দয়াগঞ্জ-মীর হাজিরবাগ নতুন রাস্তা। বর্ষাকালে এই রাস্তার কারণে আশপাশের এলাকায় দেখা দেয় জলাবদ্ধতা, আর সারা বছর থাকে একরকম অরক্ষিত, বিধ্বস্ত।

কালভার্ট ও রাস্তা তৈরিতে ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) খরচ করেছিল ৮৮ কোটি টাকা। করপোরেশনের মতে, ১০ ফুট গভীরতার ওই কালভার্টের ভেতরে জমে আছে প্রায় চার ফুট বর্জ্য। ২০০৫ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রায় ১০ কোটি টাকা খরচ করা হয় কালভার্ট রক্ষণাবেক্ষণে। বর্তমানে খরচ হচ্ছে বছরে গড়ে ২৫ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে প্রায় ১১ কোটি টাকা খরচ হয়ে গেছে বলে সিটি করপোরেশনের হিসাব বিভাগ থেকে জানা যায়।

চোখের আড়ালে কালভার্টের ভেতরে ১১ কোটি টাকা খরচের হিসাব দেওয়া হলেও ওপরের দৃশ্যমান রাস্তা সংস্কার হয়নি বছরের পর বছর ধরে। বিশেষ করে দয়াগঞ্জ ইবনে সিনা ডি. ল্যাব প্রান্ত থেকে পশ্চিম যাত্রাবাড়ী এবং দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী হয়ে দোলাইরপাড় প্রধান সড়কের ঢাল পর্যন্ত। গত সোমবার দুপুরে এখানে প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তায় ৫০টির মতো বিপজ্জনক গর্ত দেখা যায়। এর মধ্যে দয়াগঞ্জ মোড়সংলগ্ন মিয়াবাড়ি স্টোরের কাছে, পশ্চিম যাত্রাবাড়ী প্রান্তের ৪৩/সি নম্বরের মেসার্স মতিন ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসের সামনে, জোসনা রেস্টুরেন্টের কাছে রাস্তা কোথাও ক্ষতবিক্ষত, কোথাও বড় বড় গর্ত।

দোলাইরপাড় প্রধান সড়কের ঢালে সাউথ কিং চায়নিজ এবং বিপরীত দিকে মুক্তি ডেন্টালের কাছে রাস্তার অবস্থা এতই করুণ যে এলাকার দোকানি আবদুর রবের মতে, রিকশায় চলতে গেলে সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে যান। একই অবস্থা আঁখি ফার্নিচার, হলি চাইল্ড স্কুলের সামনেও। ১৯২ দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী মায়ের দোয়া স্টোরের সামনের রাস্তাটি যেন ছোটখাটো একটি পুকুর।

মীর হাজিরবাগ প্রান্তে হালকা যান মেরামতের গ্যারেজ হাসান স্টোরের পাশে রাস্তার বড় অংশজুড়ে রয়েছে করপোরেশনের ময়লাবাহী অন্তত চারটি কনটেইনার। সেগুলোকে ঘিরে রয়েছে আরও ছয়টির মতো ভ্যান। এলাকাবাসী বলেন, প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেগুলো পড়ে থাকে। আর ময়লা জমতে থাকে। এদিকে মাস কয়েক আগে ওই রাস্তার বিভাজনে (ডিভাইডার) নতুন স্ল্যাব বসানো হলেও অনেক স্থানেই উঠে গেছে সেগুলো।

মায়ের দোয়া স্টোরের কাছে ডিভাইডারের ওপর কিছুটা বড় হয়ে ওঠা দুটি মেহগনি গাছকেও কাত হয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেল। ঈদুল আজহার আগে এখানে কাঁচাবাজারের সামনে থেকে দক্ষিণ বরাবর ফুটপাত তৈরি করা হয়। অনেক স্থানে এখনো ফুটপাতের সামনে খুঁড়ে নেওয়া মাটি পড়ে আছে।

এলাকাটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫ নম্বর অঞ্চলের অধীন। ওই অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল হাশেম প্রথম আলোকে বলেন, রাস্তাটির মেরামত করতে এবার জোরালো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর জন্য প্রায় তিন কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। রাস্তার বড় গর্তগুলো ভরাট করে মিশ্র নির্মাণসামগ্রীর উপযুক্ত স্তর দিয়ে (মেকাডম) পরে কার্পেটিং করা হবে। পুরো বিষয়টি চলমান প্রক্রিয়ার আওতায়। শুধু আর কয়েকটা দিন এলাকাবাসীকে কষ্ট করতে হবে।
ডিসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান বিপন কুমার সাহা বলেন, ওই বিভাগের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের দিয়ে যতটা সম্ভব কালভার্ট পরিষ্কার করা হয়। তবে অতীতে জমে থাকা বর্জ্য ভেতরে জমাট বেঁধে ভারী স্তর তৈরি হতে পারে।