ধর্ম অবমাননার অভিযোগ, শিক্ষক কারাগারে

কারাগার
প্রতীকী ছবি

মুন্সিগঞ্জের একটি বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে এক শিক্ষককে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।

ওই শিক্ষকের নাম হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল। তিনি মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার বিনোদপুর রাম কুমার উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও গণিতের শিক্ষক। ইসলাম ধর্মকে অবমাননার অভিযোগে গত ২২ মার্চ  বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী মো. আসাদ বাদী হয়ে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন। ওই দিনই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গত ২৩ মার্চ ও ৪ এপ্রিল আদালতে হৃদয় মণ্ডলের জামিন চাওয়া হয়েছে। তবে আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। গত বুধবার তাঁর মুক্তির দাবিতে ১৮ জন বিশিষ্ট নাগরিক বিবৃতি দিয়েছেন।

আরও পড়ুন

এসব বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দীন। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে নিষেধাজ্ঞা আছে।’

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ঘটনা সম্পর্কে বিদ্যালয়টির এক শিক্ষক বলেন, গত ২০ মার্চ দশম শ্রেণির মানবিক শাখার বিজ্ঞান ক্লাস নিচ্ছিলেন হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল। সেখানে একটি বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের কয়েকজনের পক্ষে-বিপক্ষ কথোপকথন হয়। একপর্যায়ে কোনো এক শিক্ষার্থী ওই কথোপকথনের ভিডিও ধারণ করেন। পরবর্তী সময়ে প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দীনকে জানান। প্রধান শিক্ষক সেদিনই হৃদয় চন্দ্রকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন ও শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকতে বলেন।

তবে শিক্ষার্থীরা স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের বিষয়টি জানান। এর পরদিন সকালে তাঁরা বিদ্যালয়ে এসে ওই শিক্ষককে গ্রেপ্তারের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের স্ত্রী ববিতা হালদার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, সেটা সত্য নয়। তাঁকে বিদ্যালয় থেকে সরাতে অপবাদ দেওয়া হয়েছে। তিনি সন্তানসহ ভীতির মধ্যে আছেন। তিনি স্বামীর সসম্মানে মুক্তি চাইছেন।
মুন্সিগঞ্জ সদর থানার পরিদর্শক তদন্ত মো. রাজীব খান বলেন, প্রকৃত ঘটনা জানতে আরও বিস্তারিত তদন্ত করা হচ্ছে।

১৮ বিশিষ্টজনের বিবৃতি

শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে গ্রেপ্তারের ঘটনা, তাঁকে জামিন না দেওয়া ও টিপ পরায় কলেজশিক্ষক লতা সমাদ্দারকে লাঞ্ছনার ঘটনাসহ সাম্প্রতিক কিছু বিষয়ে বুধবার উদ্বেগ জানিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ১৮ বিশিষ্টজন। তাঁরা হৃদয় মণ্ডলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন।

বিবৃতিদাতারা বলেন, ‘আমরা হৃদয় মণ্ডলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি। আর যে কিশোর ছাত্ররা মৌলবাদী চিন্তা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে অপমান করে পুলিশে সোপর্দ করেছে, তাদের মধ্যে মানবিক চেতনার বিকাশ ঘটানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে পুলিশ ও প্রশাসনের যেসব ব্যক্তি এহেন কাজে সহযোগিতা ও ইন্ধন জোগাচ্ছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।’

বিবৃতিদাতাদের মধ্যে আছেন আবদুল গাফফার চৌধুরী, সৈয়দ হাসান ইমাম, অনুপম সেন, রামেন্দু মজুমদার, ফেরদৌসী মজুমদার, সারোয়ার আলী, আবেদ খান, সেলিনা হোসেন, মফিদুল হক, শাহরিয়ার কবীর, নাসির উদ্দীন ইউসুফ, মুনতাসীর মামুন, সারা যাকের প্রমুখ।