নতুন স্বপ্নের পথে আসমা খাতুন

আসমা খাতুন
প্রথম আলো

আসমা খাতুন স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসেন এবং সেই স্বপ্নকে সত্যি করতে ছুটতে ভালোবাসেন।

তাই বান্ধবীকে যখন দেখলেন দেশের বাইরে শ্রমিক হিসেবে চাকরি করে ভালো রোজগার করতে, আসমা স্থির করলেন, তিনিও বিদেশ যাবেন। একমাত্র ছেলেটা যখন একটু বড় হলো, তাকে উপযুক্ত স্থানে রেখে বহু চেষ্টার পর ২০০৮ সালে তিনি পাড়ি জমালেন লেবাননে।

যাওয়ার পরই টের পেলেন, বাইরে থেকে ‘বিদেশে কাজ করা’ যত রঙিন শোনায়, ব্যাপারটা আসলে তেমন না। মাসখানেক চাকরির জন্য বসেই থাকতে হলো। এরপর কাজের সুযোগ হলো একটা মেডিকেল সেন্টারে। মাসে ৪০০ ডলার করে পেতেন। সে টাকা দিয়েই তাঁর গ্রাসাচ্ছাদন, সন্তানকে মাসে মাসে টাকা পাঠানো। আসমা খাতুনের স্বপ্ন, ছেলেই তাঁর দুঃখ ঘোচাবে। শুধু তা–ই না, এর মধ্যেও আসমা টাকা জমাতেন। দুর্দিনের কথা কি বলা যায়?

আস্তে আস্তে দিন গড়াল, মাস গড়াল, বছর গড়াল। আসমার ছেলেও বড় হয়ে উঠতে লাগল। ভর্তি হলো ঢাকার ধানমন্ডি বয়েজ স্কুলে। ছেলেকে একটু দেখার জন্য আসমা অস্থির হয়ে গেলেন। এভাবে আর কত দিন? কবে ছেলের মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দেবেন। সারাটা জীবনই কি কেটে যাবে এই কঠোর প্রবাসে? আসমার এ থেকে মুক্তি চাই।

এ ব্যাপারে অ্যাম্বাসির সঙ্গে যোগাযোগ করলে বলা হলো, ১ হাজার ২০০ ডলার জরিমানা দিয়ে তবেই আসমা যেতে পারবেন! বহু কষ্টে সঞ্চয় হয়েছিল কিছু টাকা, তারই একটা বড় অংশ জরিমানা দিয়ে আসমা চলে এলেন দেশে।

আসমার চোখে তখন নতুন স্বপ্ন। ছেলে তো আছেই এখন কাছে, এবার নিজের ক্যারিয়ারটাকেও গুছিয়ে তুলতে হবে ভালো করে। কিন্তু আসার পরপরই বহু মানুষের মতো আসমার স্বপ্নেও বাধা দিল কোভিড!

প্রথমে তো একেবারে ঘরবন্দী। তারপর আস্তে আস্তে মানুষ যখন বের হওয়া শুরু করল, আসমাও বের হলেন ভাগ্যান্বেষণে। কিন্তু এ যেন তখন সম্পূর্ণ ভিন্ন এক প্রেক্ষাপট। বহু প্রতিষ্ঠান তখন মুখ থুবড়ে পড়েছে! চাকরি? সে তো সোনার হরিণ! আসমার কিছু একটা করার স্বপ্ন আস্তে আস্তে যেন ফিকে হওয়া শুরু করল। আর জমানো টাকা যতটুকু ছিল, তা–ও শেষ। সামনে কী হবে? আসমা চোখে অন্ধকার দেখা শুরু করলেন।

তখনই যেন আশীর্বাদের মতো আসমার জীবনে এল ইউএন উইমেন। আসমা যুক্ত হলেন ইউএন উইমেনের সহায়তায় পরিচালিত মাস্ক তৈরি করার কেন্দ্রে। গার্মেন্টসে কাজ করার অভিজ্ঞতাকে সম্বল করে আসমা শুরুতে এখানে প্রশিক্ষণ নিলেন। এরপর শুরু করলেন মাস্ক বানানোর কাজ। শুধু আসমাই নন, ইউএন উইমেনের মাধ্যমে কোভিডের সময়ে বিদেশফেরত প্রচুর নারীকর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে এই মাস্ক বানানোর কাজে।


কোভিডে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষেরা, যাঁদের একটা বড় অংশই নারী। জাপান সরকারের আর্থিক সহায়তায়, ইউএন উইমেনের প্রজেক্টটি মূলত সেই সব প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত নারীদের সাপোর্ট করার জন্য কাজ করেছে ২০২০ থেকে, যা বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ নারী শ্রমিক কেন্দ্র (বিএনএসকে) ও বাদাবন সংঘ।

আসমার স্বপ্ন দেখার কী অবস্থা? মরে গেছে সেটা? জিজ্ঞেস করলে হেসে তিনি বললেন, ‘এইখানের অভিজ্ঞতাটা নিয়া সামনে একটা টেইলার্সের দোকান দিতে চাই। নাম হইব আসমা টেইলার্স।’