নদীদূষণকারীদের তালিকা প্রকাশ করে শাস্তির দাবি

বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে ‘নদী রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলন। জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা, ২৫ সেপ্টেম্বর
ছবি: প্রথম আলো

নদী দখলকারীদের মতো নদীদূষণকারীদের তালিকা প্রকাশের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলন নামের একটি সংগঠন। সংগঠনটির দাবি, যেভাবে ৬০ হাজার দখলদারের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। ঠিক সেভাবে নদীদূষণকারীদের তালিকা প্রকাশ করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংগঠনটি বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে ‘নদী রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। সেখানে এসব দাবি জানানো হয়।

পাশাপাশি সংগঠনের পক্ষ থেকে দেশে নদ-নদীর প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণ, দূষণের প্রতিকার, যৌথ-নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা প্রাপ্তিতে জাতিসংঘের পানিপ্রবাহ কনভেনশনে স্বাক্ষর এবং যৌথ নদী কমিশনে নেপাল ও চীনকে অন্তর্ভুক্তের দাবি জানানো হয়।

সভায় বলা হয়, নদীমাতৃক আমাদের দেশে তীরবর্তী মানুষ, প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য দূষণের শিকার। শিল্পকারখানার দূষণ চলছেই। এগুলোর নিরসন দরকার। যেভাবে ৬০ হাজার দখলদারের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, ঠিক সেভাবে যারা নদীদূষণ করেছে, তাদের তালিকা প্রকাশ করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

লোভের কারণে আমরা অনেক নদী, খাল হারিয়েছি। আর কিছু বড় নদী এখনো দখল করতে পারিনি বলে দখলদারদের খুব রাগ।
আলী কবীর , জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান

সভায় বক্তারা আরও বলেন, নদীর দখল, দূষণ, ভাঙন নিয়ে সরকারকে স্থায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশের নদ-নদীর প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও বিশেষজ্ঞরা এখনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে নদীর প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশ করতে হবে। পাশাপাশি ‘নদী কূটনীতি’কে বেগবান করতে নেপাল ও চীনকে যৌথ নদী কমিশনে অন্তর্ভুক্ত করে উজানের নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করতে হবে।

সংগঠনের সভাপতি আনোয়ার সাদাতের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান আলী কবীর। তিনি বলেন, ‘নদীর বড় সমস্যা হচ্ছে অপদখল। যারা দখল করে আছে, তারা অনেকে শক্তিশালী। কিন্তু আমরাও কম না। নদী কমিশনের হাত থেকে তারা যেন রক্ষা না পায়, সে কাজ আমরা করব। নদীর কোনো জায়গা দখল করতে দেওয়া হবে না। যারা দখল করেছে, তাদের উচ্ছেদ করা হবে।’

বক্তব্য দিচ্ছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান আলী কবীর
ছবি: প্রথম আলো

আলী কবীর বলেন, ‘লোভের কারণে আমরা অনেক নদী, খাল হারিয়েছি। আর কিছু বড় নদী এখনো দখল করতে পারিনি বলে দখলদারদের খুব রাগ। দখলের প্রবণতা রুখতে হবে। মেঘনা নদী এখন দখলের চেষ্টা চলছে। আমরা ১৮ হাজার দখলদারকে উচ্ছেদ করেছি। আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না, দেব না। পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নদী দখল মনে হয় বাংলাদেশেই।’

নদী ও পানি রক্ষায় ‘নদী ও জলাশয় মন্ত্রণালয়’–এর দাবি জানিয়ে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘পৃথক মন্ত্রণালয় হলে বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। তারা শুধু নদী ও জলাশয় নিয়েই কাজ করবে। আমরা সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছি। পাশাপাশি কমিশনের আইন শক্তিশালী করতে সংশোধন করতে বলেছি।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য কামরুন নাহার বলেন, কমিশন বাঁধ দিয়ে নদী রক্ষা, পাঠ্যবইয়ে নদী সম্পর্কিত বিষয় অন্তর্ভুক্ত, নদীতে যেকোনো প্রজেক্টে কমিশনের অনাপত্তি বিষয় নিশ্চিত করেছে। এখন দখলকারীদেরই উচ্ছেদ ব্যয় নিতে হচ্ছে। আইন সংশোধন হলে শাস্তি বাড়বে। জেলা প্রশাসকদের দখলদারদের তালিকা করতে বলা হয়েছে। তুরাগ, শীতলক্ষ্যা, বালু নদ, বুড়িগঙ্গা দখলকারীদের তালিকা হচ্ছে।

সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় সভায় আরও অংশ নিয়েছেন সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক মহসীনুল করিম, সংগঠনের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলা পর্যায়ের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা।