নাব্যতা–সংকটে ভোগান্তি চরমে

কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া ও দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথেই আটকা পড়েছে শত শত যানবাহন।

নাব্যতা–সংকটের কারণে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এতে দুই ঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় থাকা গাড়ির দীর্ঘ লাইন পড়ে গেছে। গতকাল সকালে দৌলতদিয়া প্রান্তে ঢাকাগামী কয়েক শ গাড়ি ফেরিতে ওঠার অপেক্ষায়।ছবি: প্রথম আলো

মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথে নাব্যতা-সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। একই অবস্থা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ারও। ফলে দুই নৌপথেই মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে ফেরি চলাচল ও যাত্রী পারাপার। এতে চার ঘাটেই আটকা পড়েছে শত শত যানবাহন। চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে যাত্রী ও পরিবহনশ্রমিকদের ভোগান্তি।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) কাঁঠালবাড়ি ও শিমুলিয়া ফেরিঘাট সূত্র জানায়, বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই এই নৌপথে পদ্মা নদীতে তীব্র¯স্রোত ও নাব্যতা-সংকট দেখা দেয়। সম্প্রতি সমস্যা এতই প্রকট হয়ে উঠেছে যে গত শনিবার থেকে রাতে ফেরি পারাপার অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। দিনে ১২টি ফেরির মধ্যে আপাতত ৫টি ফেরি দিয়ে সীমিত পরিসরে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। এতে দুই পাড়ে আটকা পড়েছে শত শত যানবাহন। এর প্রভাব পড়েছে লঞ্চ ও স্পিডবোটের ওপর। ঝুঁকি নিয়ে অতিরিক্ত যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিসির কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মো. আবদুল আলিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডুবোচরে আটকে যাওয়ার আশঙ্কায় আমরা ফেরিতে খুবই কম যানবাহন লোড করছি। ফেরি চলাচলও সীমিত রেখেছি। যাত্রীদের আমরা দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া হয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। তবু ঘাটে যানবাহনের চাপ কমছে না।’

বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. সাইদুর রহমান বলেন, ‘আশা করছি, এক সপ্তাহের মধ্যে নৌ চ্যানেল স্বাভাবিক হবে।’

কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটের ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) আশিকুর রহমান গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ঘাটের প্রতিটি সংযোগ সড়কে যানবাহনের প্রচুর চাপ। ছোট গাড়ি (মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কার) আছে তিন শতাধিক। পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানও আছে তিন শতাধিক। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির চাপও বাড়ছে।

শিমুলিয়া ঘাটে অপেক্ষমাণ ট্রাকচালক মো. নুরুল আমিন শেখ আক্ষেপের সঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, ছয় দিন ধরে তিনি ঘাটে আটকে আছেন। কবে নদী পার হতে পারবেন, জানেন না। সোহরাব হোসেন নামের আরেক ট্রাকচালক বলেন, তিনি গত বৃহস্পতিবার শিমুলিয়া ঘাটে এসেছেন। ফেরিতে ওঠার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে খরচের টাকাপয়সা সব শেষ। এখন খেয়ে না–খেয়ে দিন পার করছেন তিনি।

*কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়ায় রাতে ফেরি বন্ধ রয়েছে অনির্দিষ্টকালের জন্য। ১২টি ফেরির মধ্যে দিনে চলছে মাত্র ৫টি। * দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া সব ফেরি সচল থাকলেও গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে অনেক ঘুরে।

বিআইডব্লিউটিসি শিমুলিয়া ঘাটের সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) ফয়সাল আহম্মেদ বিকেলে জানান, ঘাটে চার শতাধিক যানবাহন আটকে আছে।

এদিকে বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ও আরিচা কার্যালয় সূত্র জানায়, নদীর পানি দ্রুত কমতে থাকায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথের পাটুরিয়া ঘাটের কাছে বালু-মাটি পড়ে নাব্যতা–সংকট দেখা দিয়েছে। গত সোমবার চ্যানেলে খননযন্ত্র যথাস্থানে বসাতে বিকেলে প্রায় এক ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়। বর্তমানে পাটুরিয়া ঘাট থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার ঘুরে দৌলতদিয়ায় এবং দৌলতদিয়া থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার ঘুরে পাটুরিয়ায় যাতায়াত করছে ফেরিগুলো। যাতায়াতের এ পথ অনেকটা ওয়ানওয়ে হওয়ায় চ্যানেলে একটি ফেরি প্রবেশ করার পর গন্তব্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত আরেকটি ফেরি রওনা হতে পারছে না।

গতকাল সকালে দৌলতদিয়া ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে মহাসড়কের প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় যানবাহনের দীর্ঘ সারি।

বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (মেরিন) আবদুস সাত্তার বলেন, ‘আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যা দূর হবে বলে আশা করছি।’