নামেই টিকে আছে ধোলাইখাল

ছবির মতো দেখতে একটি ছোট্ট নদী। দুই পাশে সবুজ গাছপালা। মেঘের ছায়া পড়েছে স্বচ্ছ পানিতে। ব্রিটিশ লাইব্রেরির ওয়েবসাইট থেকে ঢাকার ধোলাইখালের ১৮৭০ সালের এই ছবিটি পাওয়া গেল। ঢাকার পুরোনো ছবি আছে, এমন অনেক সাইটেও আছে ছবিটি। প্রত্যেকেই ঢাকার এমন ছবি দেখে মুগ্ধ হন, হন স্মৃতিকাতর। জাতীয় জ্ঞানকোষ বাংলাপিডিয়ায় বলা হয়েছে, ঢাকার প্রথম মোগল সুবাদার ইসলাম খান ১৬০৮-১৬১০ সালে শহরকে সুরক্ষার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ নৌ যোগাযোগের সুবিধার জন্য খালটি খনন করেছিলেন। ফরাশগঞ্জ ও গেন্ডারিয়াকে বিভক্তকারী এ খালটি ঢাকার মধ্য দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমে মিল ব্যারাকের কাছে বুড়িগঙ্গার সঙ্গে মিলেছিল। খালটির উৎপত্তি বাবুবাজারে। এরপরে জিন্দাবাহার, গোয়ালনগর, নবাবপুর, নারিন্দা হয়ে লোহারপুলের নিচ দিয়ে মিশেছে বুড়িগঙ্গায়। এই খাল দিয়ে নৌকা চলত। ১৮৬৭ সালে খালে চলাচলকারী নৌযানের ওপর টোলও আরোপ করা হয়। ১৮৭২ সালে টোল তোলার দায়িত্ব ছিল ঢাকা পৌরসভার। তবে উনিশ শতকের দ্বিতীয় ভাগে ধোলাইখালের দুই তীরে বাড়িঘর নির্মাণ হতে থাকে। শুষ্ক মৌসুমে খালের পাড় থেকে মাটি কেটে শহরের অনেকেই ঘরবাড়ি তৈরির কাজে লাগাতে থাকেন। খালে পড়তে থাকে আবর্জনা। আস্তে আস্তে খালটি ভরাট থাকে। তবে গত শতকের পঞ্চাশের দশকেও এই ধোলাইখালে সাঁতার, নৌকাবাইচসহ নানা প্রতিযোগিতার জন্য একটি আদর্শ স্থান ছিল। বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে খালের দুই তীরে নানা স্থানে অতীতে মেলা অনুষ্ঠিত হতো। নাজির হোসেনের কিংবদন্তির ঢাকায় নৌকাবাইচের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক চিত্র উঠে এসেছে। ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন তাঁর ঢাকা: স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী বইটিতে লিখেছেন, এই শতকের ষাটের দশক পর্যন্ত ধোলাইখালের সঙ্গে ঢাকার নাম ছিল ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ষাটের দশক থেকে জমি দখলের প্রক্রিয়ায় ধোলাইখাল হারিয়ে যেতে থাকে। এর বিষময় ফল এখন ঢাকাবাসী পাচ্ছে। কেউ যদি এখন পুরান ঢাকার ধোলাইখালে যান, তিনি খালের ওপরে নির্মিত সেই রাস্তায় ধোলাইখাল নামটি দেখতে পাবেন। ধোলাইখালের সেই রাস্তায় এখন গাড়ি চলছে। রাস্তার দুই পাশে যন্ত্রাংশ মেরামত ও তৈরির অসংখ্য ছোট ছোট দোকান। আছে অসংখ্য বাড়িঘর। সান্ত্বনা এই যে ধোলাইখাল নামটি এখনো টিকে আছে। লেখা: শরিফুল হাসান। ছবি: সাইফুল ইসলাম