নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত রোকেয়ার প্রয়োজনীয়তা থাকবে

‘রোকেয়া দিবস ২০২১’ উদ্‌যাপন উপলক্ষে সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞান ও জেন্ডার ক্লাব আয়োজিত ওয়েবিনার
ছবি: সংগৃহীত

প্রবল সামাজিক বাধা ও অনিশ্চয়তাকে অতিক্রম করে নারীর শিক্ষা ও ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করেছেন বেগম রোকেয়া। দুস্থ নারীদের জন্য শিক্ষার পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন করার চেষ্টা করেছেন। তিনি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন। দেশে যত দিন পূর্ণ নাগরিক হিসেবে নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত না হবে, তত দিন বেগম রোকেয়ার প্রয়োজনীয়তা থাকবে।

আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ‘রোকেয়া দিবস ২০২১’ উদ্‌যাপন উপলক্ষে সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞান ও জেন্ডার ক্লাব আয়োজিত ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা। ‘রোকেয়ার জীবন ও সাহিত্যকর্ম’ শিরোনামের অনুষ্ঠানটি দীপ্ত টেলিভিশনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক পেজে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়ার জন্ম ও তিরোধানের দিনটিকে রোকেয়া দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

ওয়েবিনারে মূল বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া চেয়ার অধ্যাপক মোহাম্মদ শামসুল আলম। তিনি বলেন, বেগম রোকেয়া ছিলেন মুক্তবুদ্ধিসম্পন্ন সংস্কারক, মননশীল সাহিত্যিক, নারীমুক্তির অগ্রদূত, একজন নবজাগ্রত মানুষ। তিনি দুস্থ নারীদের লেখাপড়া এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। আজ দেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোগের যে বহুল প্রচলন দেখা যাচ্ছে, এর স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন রোকেয়া।

এই শিক্ষাবিদ আরও বলেন, বেগম রোকেয়া গভীর অনিশ্চয়তা, প্রবল সামাজিক বাধা, আর্থিক অসচ্ছলতা অতিক্রম করে তাঁর প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয় চালিয়ে গেছেন। নারীর ক্ষমতায়ন ও শিক্ষার অধিকার আদায়ের সংগ্রামে তিনি বিজয়ী।

স্বাগত বক্তব্যে সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞান ও জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক মালেকা বেগম বলেন, সমাজের প্রগতির লক্ষ্যে রোকেয়ার ভূমিকা ছিল অনন্য অভিযাত্রীর। সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তৈরি করে তিনি মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করেছেন। রোকেয়ার লড়াই আজও প্রাসঙ্গিক।

শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইলিয়াস আহমেদ। তিনি বলেন, সময়, প্রেক্ষাপট ও বাস্তবতা বিবেচনা করলে বেগম রোকেয়া ওই সময় যা বলেছিলেন, তা অনুধাবন করতে না পারলে তাঁর কর্মযজ্ঞের বিশালতা অনুভব করা যাবে না। সেই সময়ের ঘটনা পড়লে সমাজে রক্ষণশীলতা কতটা ছিল, তা বোঝা যায়। বেগম রোকেয়া সঠিকভাবে চিহ্নিত করেছিলেন কীভাবে নারীমুক্তি আসবে।

অনুষ্ঠানে রোকেয়া রচনাবলী থেকে নির্বাচিত অংশ পাঠ করেন সমাজবিজ্ঞান ও জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুন্নেসা নম্র।

সমাপনী বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পারভীন হাসান বলেন, বেগম রোকেয়া নারীদের এমন পৃথিবীর স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, যেখানে ধর্ম হিসেবে থাকবে ভালোবাসা। নারীরা এমন শিক্ষায় শিক্ষিত হবেন যেন তাঁরা নিজের নাগরিক অধিকার সম্পর্কে জানতে পারেন। অধিকার দাবি করতে পারেন।

দেশে এখনো সব ক্ষেত্রে নারী-পুরুষকে সমান অধিকার দেওয়া হয়নি উল্লেখ করে পারভীন হাসান আরও বলেন, আবার কিছু ক্ষেত্রে যতটুকু সমান অধিকার দেওয়া আছে, ততটুকু সম্পর্কেও নারীরা অবগত নন। দেশে যত দিন যথাযথ শিক্ষার মাধ্যমে পূর্ণ নাগরিক হিসেবে নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত না হবে, তত দিন বেগম রোকেয়ার প্রয়োজনীয়তা মিটবে না।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান ও জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক নাজনীন সুলতানা।