নালিতাবাড়ীতে পানি নেমে গেলেও মানুষের দুর্ভোগ কমেনি

শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে পানি সরে গেলেও অনেক ঘর কাদাপানিতে একাকার হয়ে গেছে। উত্তর গড়কান্দা এলাকা, নালিতাবাড়ী, শেরপুর, ১ জুলাই
ছবি: প্রথম আলো

টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি আজ বৃহস্পতিবার নেমে গেলেও শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার ২০০ পরিবারের দুর্ভোগ কমেনি।

উপজেলা প্রশাসন ও ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার রাতে টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ভোগাই নদসংলগ্ন পৌর শহরের গড়কান্দা, নিচপাড়া, নয়াবিলসহ পাঁচটি স্থানে দুই কিলোমিটার বাঁধ ভেঙে যায়। ভাঙন অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করে। এতে ১ হাজার ৫০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়ে।

গতকাল বুধবার রাতে ভোগাই নদের পানি কমতে থাকায় আজ সকালে বাড়িঘর থেকে ঢলের পানি নেমে গেছে। কিন্তু বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ঢলের পানির সঙ্গে পলিমাটিতে ঘরের মেঝে ও আসবাব নষ্ট হয়ে গেছে। বাড়িঘর মেরামত করা, পলিমাটি সরানো ও রান্নার চুলা ভেঙে যাওয়ায় ২৫০টি পরিবার দুর্ভোগে পড়েছে।

আজ সকালে শহরের গড়কান্দা এলাকায় সরেজমিনে মানুষের এমন দুর্ভোগের চিত্র দেখা গেছে। উত্তর গড়কান্দা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় তিনটি স্থানে শহর রক্ষা বাঁধের প্রায় ১০০ মিটার ভেঙে গেছে। এই অংশ দিয়ে ঢলের পানি প্রবেশ করায় বাড়িঘর ছেড়ে ১৫টি পরিবার বাগানবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গরু, ছাগল ও আসবাব নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। এ ছাড়া প্রায় ২০০ পরিবার ঢলের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত আসবাব সংস্কার ও পলিমাটি সরতে পরিবারের সদস্যরা মিলে চেষ্টা করছেন।

উত্তর গড়কান্দা এলাকার গৃহিণী রাহুল বেগম বলেন, ‘বান ভাইঙ্গা ঢলের পানিতে বাড়িঘর ভাইঙ্গা ফালাইছে। দুই দিন ধইরা ঘরে কোমর পর্যন্ত পানি থাহুনে স্কুলঘরে আশ্রয় নিচ্ছি। পোলাপান অন্যের বাড়িতে পাডাইছি। দুই দিন ধইরা চিড়া-মুড়ি খাইয়া আছি। অহন পানি নামছে কিন্তু পেঁকে (পলিমাটিতে) সবকিছু নষ্ট অইয়া গেছে।’
একই এলাকার হোটেলশ্রমিক মোকছেদুল ইসলাম বলেন, ‘উত্তর গড়কান্দা এলাকার প্রায় ২০০ পরিবার ঢলের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবার বাড়িতে পানি থাহায় রান্নার চুলা দুই দিন ডুইবা আছিল। অহন পানি কমছে কিন্তু সকাল খাইকা সবাই বাড়িঘর মেরামত করতাছে। পানি কমলেও আমগর দুর্ভোগ আছেই।’

বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোমিনুর রশীদ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হেলেনা পারভীন ভোগাই নদের ভাঙন অংশ পরিদর্শন করেছেন।
ইউএনও হেলেনা পারভীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভোগাই নদের ভাঙন অংশ ডিসি স্যারসহ আমরা পরিদর্শন করেছি। প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে চিড়া, গুড়, মুড়ি দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিদের ক্ষতিপূরণে তালিকা করতে বলা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে সহযোগিতা করা হবে।’

এ ব্যাপারে ডিসি মোমিনুর রশীদ বলেন, ‘ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছি। ভোগাই নদের ভাঙন অংশ সংস্কারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’