নিঃসঙ্গ 'ফিরোজা'

খালেদা জিয়ার বাড়ির ছাদে লাগানো হয়েছে লাউগাছ। বাঁশের মাচায় বড় হওয়া লাউয়ের ডগার দেখা মিলল ফটকের বাইরের রাস্তা থেকে। ছবি: মানসুরা হোসাইন।
খালেদা জিয়ার বাড়ির ছাদে লাগানো হয়েছে লাউগাছ। বাঁশের মাচায় বড় হওয়া লাউয়ের ডগার দেখা মিলল ফটকের বাইরের রাস্তা থেকে। ছবি: মানসুরা হোসাইন।

বাড়ির সামনে ফিরোজা রং দিয়ে ইংরেজিতে ‘ফিরোজা’ লেখা। মূল ফটক গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ। বাড়িটির ভেতরে আম, কাঁঠাল, নারকেলসহ অনেক গাছ। ভেতরের দোতলা সাদা ঝকঝকে বাড়িটির ছাদে বাঁশের মাচায় লকলকিয়ে ওঠা লাউয়ের ডগা। সবই আছে, শুধু বাড়ির ভাড়াটে বেশ কিছু দিন এখানে থাকছেন না। 
মঈনুল রোড থেকে কয়েক বছর হলো এখানে উঠেছেন। সমাজে প্রভাবশালী। স্বাভাবিকভাবে ফটকের বাইরে পুলিশের অবস্থান নিশ্চিত। একজন হাবিলদারের নেতৃত্বে সাতজন পুলিশ সদস্য পালা করে বাড়িটির নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। বাড়ির সঙ্গেই পুলিশ সদস্যদের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা। ফটকের বাইরে এই পুলিশ সদস্যদের বসার জায়গা। বাড়ির সীমানাপ্রাচীরে কিছু রাজনৈতিক পোস্টার দৃশ্যমান। ফটকের কাছে থাকা ইন্টারকম দীর্ঘদিন নষ্ট। অবশ্য একটি মোবাইল ফোনসেট আছে যোগাযোগের জন্য। বাড়ির বাসিন্দা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গত ৩ জানুয়ারি থেকে তাঁর দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান করায় হয়তোবা চিত্রটা এ রকম।

রাজধানীর গুলশান ২ নম্বরের ৭৯ নম্বর সড়কের ‘ফিরোজা’ বাড়িটি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভাড়া বাস। ছবি: মানসুরা হোসাইন
রাজধানীর গুলশান ২ নম্বরের ৭৯ নম্বর সড়কের ‘ফিরোজা’ বাড়িটি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভাড়া বাস। ছবি: মানসুরা হোসাইন

গত সোমবার সকালে গুলশানের ২ নম্বরের ৭৯ নম্বর সড়কে ওই বাড়ির ফটকে দেখা হয় দুই পুলিশ সদস্যের সঙ্গে। তাঁরা জানালেন, গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে এ বাড়িতে খালেদা জিয়ার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী এবং দলের দু-একজন ছাড়া আর কাউকে ঢুকতে দেখেননি। ছোট ভাইয়ের স্ত্রী এই বাড়ি থেকে খালেদা জিয়ার খাবার নিয়ে যান। তবে সেটিও নিয়মিত না। খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো মারা যাওয়ার পর তাঁর স্ত্রী ও মেয়েরা এ বাড়িতে এসেছিলেন বলে তাঁরা শুনেছেন। তাঁরা বলেন, এক ব্যক্তি মাঝে মাঝে ওই বাড়িতে বাজার পৌঁছে দেন। তবে প্রতিদিন নিয়ম করে বাড়ির ভেতরে দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীরা।
জানা গেল, আগে থেকেই নিয়ম ছিল, আগাম অনুমতি নিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢোকার। কিন্তু অনুমতিটা কে দেবে, তাই আর ভেতরটা দেখা হয় না। খালেদা জিয়ার বাড়ির এক বাসিন্দা সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি নিজের পরিচয় বা ভেতরে কে আছেন তা নিয়ে কথা বলতে চাননি। শুধু জানালেন, অনুমতি নেই। বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান টেলিফোনে প্রথম আলোকে বললেন, ‘ম্যাডামের বাড়িতে কর্মচারীরা ছাড়া এখন আর কেউ নেই।’
খালেদা জিয়ার বাড়ি ফেরা নিয়ে কিছু জানেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে দায়িত্বরত একজন পুলিশ সদস্য বললেন, ‘ম্যাডাম অবরোধ দিয়েছেন, যেদিন অবরোধ শেষ হবে, সেই দিনই আসবেন। আমরা গেটে দায়িত্ব পালন করি। খালেদা জিয়া ম্যাডাম যখন বের হতেন এবং ঢুকতেন, তখন স্যালুট দিতাম। গেটের ভেতরে ঢোকার আমাদের অনুমতি নাই।’
খালেদা জিয়া যখন বাড়িটিতে ওঠেন, তখন থেকেই কনস্টেবল আলমগীর ভূইয়া দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বললেন, ‘বাড়ির গাছ থেকে কেউ কোনো ফল পেড়ে খেতে পারবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন ম্যাডাম। গাছ থেকে যখন যে ফল নিচে পড়বে এবং যার সামনে পড়বে সেই তা খেতে পারবে। তাই আমরাও পাকা আম কখন পড়বে তার অপেক্ষায় থাকি।’ তাই আম বা অন্যান্য ফল ফটকের বাইরে পড়লে কুড়ানোর জন্য প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায় পুলিশ সদস্যদের মধ্যে।
প্রকৃতির নিয়ম মেনে এবারও আমগাছে মুকুল ধরেছে। কিন্তু পাকতে পাকতে বাড়ির বাসিন্দা কী ফিরবেন?

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভাড়া বাসার মূল ফটক। ছবি: মনিরুল আলম
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভাড়া বাসার মূল ফটক। ছবি: মনিরুল আলম