নিখোঁজদের তালিকায় মাদারীপুরের ছয়জন

নিখোঁজ জাকির হাওলাদার
নিখোঁজ জাকির হাওলাদার

ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজ বাংলাদেশিদের তালিকায় আছেন মাদারীপুরের ছয়জন। তাঁদের ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা এখনো জানা সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারগুলো রয়েছে উৎকণ্ঠায়।

এদিকে নৌকাডুবিতে উদ্ধার হওয়া ১৪ বাংলাদেশির মধ্যে মাদারীপুরের ৩ জন। তাঁরা হলেন শিবচর উপজেলার বাগমারা গ্রামের দাদন মাতুব্বরের ছেলে মাসুদ মাতুব্বর (২১), একই গ্রামের তারা মিয়া সরদারের ছেলে সাঈদ সরদার (২৩) ও নিলখী গ্রামের চান মিয়া মোল্লার ছেলে রনি মোল্লা (২২)।

মাদারীপুরের উদ্ধার হওয়া তিনজনসহ অন্যান্য উদ্ধার হওয়া ব্যক্তির কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয়ভাবে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি থেকে একটি তালিকা করা হয়েছে। এতে নিখোঁজ লোকজনের ব্যাপারে সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া গেছে। সেই তথ্য অনুযায়ী মাদারীপুরের নিখোঁজ ব্যক্তিরা হলেন শিবচর উপজেলার বাগমারা এলাকার আলী আকবর, দত্তপাড়ার এলাকার জাকির হাওলাদার, রাজৈর উপজেলার মো. শাহেদ, নাঈম ও মাদারীপুর সদরের স্বপন ও শ্রীনদী গ্রামের নাদিম। এ ছাড়া মাদারীপুরের শিরাখাড়া ইউনিয়নের সজীব শিকদার (২০) নামের একজনের লাশ উদ্ধারের তথ্য প্রদান করা হলেও এই তালিকায় সজীবকে নিখোঁজ দেখানো হয়েছে।

মনির হোসেন মাতুব্বর
মনির হোসেন মাতুব্বর

এ দিকে শিরখাড়া ইউনিয়নের বল্লভদী গ্রামের আদেল মাতুব্বরের ছেলে মনির হোসেন মাতুব্বরের (২২) নাম এই তালিকায় নেই। তবে মনিরের পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত ৯ মে নৌকায় সাগর পাড়ি দেওয়ার আগে মনির তাদের সঙ্গে মোবাইলে সাগর পাড়ি দেওয়ার কথা জানায়। এরপর থেকে মনিরের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি।

নিখোঁজ কয়েকজনের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, নিখোঁজ প্রিয় মানুষটির খবরের আশায় পথ চেয়ে রয়েছেন স্বজনেরা। বাড়ির আশপাশের লোকজন এসে বারবার তাদের বুঝিয়ে বলছে, নিখোঁজরা ফিরে আসবে। কিন্তু তাদের বাড়িতে বইছে কান্নার রোল। বারবার বলছে শেষ কী কথা হয়েছিল নিখোঁজ প্রিয় মানুষটির সঙ্গে।

নিখোঁজ মনিরের বাবা আদেল মাতুব্বর প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত বুধবার ছেলের সঙ্গে ইন্টারনেটে কথা হয়। মনির জানায় সে এবার গেমে উঠবে। তারপর তার কাছে সে দোয়া চায়।’ এরপর থেকে আদেল মাতুব্বর তার ছেলের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ করতে পারেননি।

নিখোঁজ নাদিম মাতুব্বর
নিখোঁজ নাদিম মাতুব্বর

শিবচর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের নিখোঁজ জাকির হোসেনের স্ত্রী শান্তা আক্তার বলেন, ‘ইতালি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে ৮ লাখ ২০ হাজার টাকা নেয় দালাল। দালাল টাকা চাওয়ার পরেই ওই টাকা বিদেশে পাঠাইছি। গত ৯ মে ট্রলারে ওঠার পর কথা হয়েছিল। এরপর থেকে আর যোগাযোগ হয়নি। জানি না জাকির বেঁচে আছে কি না? অজানা শঙ্কায় বুকের ভেতরটা মুচড়ে উঠছে বারবার।’

রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি মাদারীপুর শাখা সূত্র জানায়, গত ৯ মে দুটি নৌকায় করে ১৩০ জনের মতো বাংলাদেশি লিবিয়া থেকে ইতালি রওনা দেন। প্রথম নৌকাটি ইতালি পৌঁছালেও অন্য নৌকাটিতে ৭০-৮০ জনের মতো যাত্রী ছিলেন। সেই নৌকাটি উপকূলের কাছাকাছি এসে ডুবে যায়। দুর্ঘটনায় ৩৯ জন নিখোঁজ এবং ১৪ জন বাংলাদেশিকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। অবশ্য গতকাল মঙ্গলবার ত্রিপোলির বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে জানানো হয়েছে নিখোঁজ বাংলাদেশিদের সংখ্যা ৪০-৪৫ জন হবে।

নিখোঁজ নাঈম
নিখোঁজ নাঈম

রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি মাদারীপুর শাখার যুবপ্রধান ইমরান হোসেন জানান, ‘তিউনিসিয়ার উপকূলের কাছে নৌকাডুবির ঘটনায় এই পর্যন্ত মাদারীপুরের ছয়জনের সংখ্যা জানা গেছে। এর মধ্যে সজীব নামে একজনের নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। আমরা নিহত ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের বাড়িতে গিয়ে তথ্য নিয়েছি।’

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাগরে নৌকাডুবির ঘটনা আমি শুনেছি। এতে মাদারীপুরে বেশ কয়েকজন যুবক নিখোঁজ রয়েছেন। নিহত ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত শেষে দূতাবাস থেকে লাশ দেশে আসবে। এরপর স্বজনেরা চাইলে আমরা তাদের কাছে লাশ পৌঁছে দেব। দালালের বিষয়ে নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনেরা আমাদের কাছে অভিযোগ করলে আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখব।’