নিখোঁজের এক বছর পর পাহাড়ের চূড়া থেকে লাশ উদ্ধার

হেলাল উদ্দিন
ছবি: সংগৃহীত

বন্য প্রাণী তক্ষক বিক্রির কথা বলে হেলাল উদ্দিন নামের এক এনজিও কর্মকর্তাকে ডেকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে আনা হয়। পরে তাঁকে ফটিকছড়ির ভুজপুর আটকে রেখে মুক্তিপণ হিসেবে তিন লাখ টাকা দাবি করা হয়। কিন্তু টাকা দিতে না পারায় অপহরণকারীরা হেলালকে মেরে ফেলেন। পরে লাশ ভুজপুরের নুরপুর এলাকার একটি পাহাড়ের চূড়ায় পুঁতে রাখেন।

ঘটনার এক বছর পর আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হেলালের লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। হেলাল ঢাকার মুগদা এলাকায় সেতুবন্ধন নামের একটি এনজিও ব্যবস্থাপক ছিলেন।

পিবিআই সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর তক্ষক বিক্রির কথা বলে হেলাল উদ্দিনকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হয়। পরে তাঁকে ফটিকছড়ি উপজেলার ভুজপুর থানার চিকন ছড়া এলাকায় নিয়ে যান অপহরণকারীরা। তাঁকে আটকে রেখে তাঁর এক স্ত্রী কানিজ ফাতেমার কাছে মুক্তিপণ হিসেবে তিন লাখ টাকা দাবি করা হয়। কিন্তু এত টাকা দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানানো হলে অপহরণকারীরা হেলালকে আটকে রাখেন। এ ঘটনায় কানিজ বাদী হয়ে ভুজপুর থানায় অপহরণ মামলা করেন। কিন্তু থানা-পুলিশ তদন্তে কিছুই করতে পারেনি। পরে গত ফেব্রুয়ারি মাসে পিবিআইকে মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয়।

পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, তদন্তের একপর্যায়ে পিবিআই অপহরণকারী চক্রের সদস্য জাকির হোসেনকে জুলাই মাসে গ্রেপ্তার করে। জাকির আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জড়িত কয়েকজনের নাম বলেন। তাঁর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল বুধবার মো. বিল্লাল ও রাজা মিয়াকে ভুজপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আসামিরাই দেখিয়ে দেন পাহাড়ের চূড়ায় হেলালকে মাটিচাপা দিয়ে রাখা হয়। গতকাল সন্ধ্যায় লাশটি উদ্ধারের জন্য অভিযান শুরু করে রাত ১০টায় বন্ধ করা হয়। আজ সকাল থেকে আবার শুরু করে সন্ধ্যায় হেলালের লাশটি মাটির নিচ থেকে পাওয়া যায়। পাহাড়টির আশপাশে কোনো বসতি নেই। এটি নির্জন এলাকা।

এসপি নাজমুল হাসান আরও বলেন, লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ মর্গে আনা হচ্ছে।

এক বছর পর স্বামীর লাশ দেখতে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন হেলালের দুই স্ত্রী কানিজ ফাতেমা ও ঝরনা আক্তার। তাঁরা জড়িত আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান। এই দুই নারী ঢাকায় আলাদা বাসায় থাকেন।

২০০৩ সালের ২৪ জুলাই রাতে চট্টগ্রাম নগরের চকবাজারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে চান্দগাঁওয়ের বাসায় ফেরার পথে সন্ত্রাসীরা অপহরণ করে চট্টগ্রামের বিএনপি নেতা ও শিল্পপতি জামাল উদ্দিনকে। নিহত ব্যক্তির পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে দুই বছর পর অপহরণের অন্যতম হোতা আনোয়ারা সদরের ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য শহীদকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ফটিকছড়ির কাঞ্চননগরের পাহাড়ি এলাকা থেকে ২০০৫ সালের ২৪ আগস্ট জামাল উদ্দিনের কঙ্কাল উদ্ধার করে র‌্যাব।