নির্যাতিত নারীকে সহায়তায় পুলিশ ও হাসপাতালের সমন্বয় দরকার

ছবি: সংগৃহীত

যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার শিকার নারী ও শিশুদের সহায়তা দিতে ও সহিংসতা প্রতিরোধে পুলিশের কার্যক্রম তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে নির্যাতনের শিকার ব্যক্তির মেডিকো-লিগ্যাল পরীক্ষার ক্ষেত্রে পুলিশ ও হাসপাতালের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো দরকার।

‘যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা হতে নারীদের সুরক্ষা ও প্রতিকার প্রাপ্তি: আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভূমিকা’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় আজ শনিবার বক্তারা এই দুটি সুপারিশসহ কয়েকটি সুপারিশ করেন। বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্ল্যাস্ট) অনলাইনে ওই সভার আয়োজন করে। সভায় পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ জোট ও ধর্ষণ আইন সংস্কার জোটভুক্ত বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা অংশ নেন।

সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (ক্রাইম) শেহেলা পারভীন বলেন, নারী ও শিশুর প্রতি নির্যাতন প্রতিরোধে পুলিশ ১৭ অক্টোবর একযোগে ৬ হাজার ৯১২টি পুলিশিং বিটে সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করে। পুলিশের কাছে হটলাইন ও অ্যাপভিত্তিক অভিযোগ জানানোর প্রক্রিয়া তুলে ধরে তিনি বলেন, পুলিশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নয়টি থানায় পরীক্ষামূলকভাবে জিডি করার একটি অ্যাপ চালু করেছে। সারা দেশে ওই অ্যাপের প্রয়োগ দ্রুত ছড়িয়ে দিতে পারবেন বলে আশা করেন তিনি।

পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ জোটের সদস্য ও ব্র্যাক এইচআরএলএস প্রোগ্রামের পরিচালক জেনেফা জব্বার বলেন, দেশের অনেক থানায় নারী পুলিশ নেই। যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার শিকার নারী ও শিশুদের সেবা প্রদান করতে আরও বেশি নারী পুলিশ সদস্য নিয়োগ করা প্রয়োজন।

ব্ল্যাস্টের অনারারি নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন বলেন, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিত সক্রিয় উদ্যোগে নারীর প্রতি সংঘটিত সহিংসতা কার্যকরভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব।
ধর্ষণ আইন সংস্কার জোট ও নারীপক্ষের সদস্য আইনজীবী কামরুন নাহার বলেন, যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার শিকার নারীদের অভিযোগ গ্রহণে হটলাইন, অনলাইন ও অ্যাপভিত্তিক ব্যবস্থা চালু করতে হবে। বিদ্যমান ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতাগুলোও চিহ্নিত করতে হবে।

জিআইজেডের ক্যাপাসিটি বিল্ডিং টিম লিডার রিতা দাশ রায় বলেন, যৌন নির্যাতনের শিকার নারীদের মেডিকো-লিগ্যাল পরীক্ষা ফলপ্রসূ ও দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করতে থানা–পুলিশ ও হাসপাতালের মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে হবে। কেন্দ্রীয় পর্যায়ে পুলিশ সদর দপ্তর ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

ব্ল্যাস্টের অ্যাডভোকেসি উপদেষ্টা তাজুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠান স্বাগত বক্তব্য দেন ব্ল্যাস্টের সহকারী পরিচালক তাপসী রাবেয়া। মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ব্ল্যাস্টের ফরিদপুর ইউনিটের সমন্বয়কারী শিপ্রা গোস্বামী।

সভায় সুপারিশ

নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুদের প্রতিকার প্রাপ্তিতে অনলাইনে জিডি ও এফআইআর দায়েরের কার্যকর ব্যবস্থা চালু করা দরকার; পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জারি করা সার্কুলার মাঠপর্যায়ে যথাযথভাবে অনুসরণ হচ্ছে কি না, তা মনিটরিং করা এবং অনুসরণ না করা ব্যক্তিকে জবাবদিহির আওতায় আনা; মাঠপর্যায়ে পুলিশের সব ইউনিট ও থানা–পুলিশকে আরও নারীবান্ধব করার প্রশিক্ষণ, আলোচনা ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা; ওসব থানায় নারী পুলিশ সদস্যের উপস্থিতি নিশ্চিতে ব্যবস্থা নেওয়া।