নিষেধাজ্ঞা, তবুও পারাপার

লকডাউন না মেনে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও স্পিডবোট। ভাড়াও আদায় করা হচ্ছে দেড় গুণ বেশি।

লকডাউনের কারণে নৌপথে চলাচল নিষিদ্ধ। এরপরও অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে পাবনার কাজীরহাটের উদ্দেশে ছেড়ে যায় ইঞ্চিনচালিত নৌকা। গতকাল মানিকগঞ্জের আরিচা নৌঘাটে
প্রথম আলো

করোনা পরিস্থিতির অবনতির কারণে সরকার যাত্রীবাহী নৌযানসহ দূরপাল্লার গণপরিবহন চলাচল নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু কাজীরহাট-আরিচা নৌপথে সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে স্পিডবোট ও ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে। এতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা তো দূরের কথা, একে অন্যের গায়ে লেপ্টে পারাপার হতে হচ্ছে।

পারাপারের সময় যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে স্বাভাবিকের চেয়ে দেড় গুণ বেশি ভাড়া। যাত্রী তোলার সময় কাজীরহাট ও আরিচার নির্ধারিত নৌঘাট ব্যবহার করা হলেও নামানোর সময় ঘাট থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরের একটি চরে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেখান থেকে যাত্রীদের হেঁটে কাজীরহাট নৌঘাটে গিয়ে যানবাহনে উঠতে হচ্ছে। পুলিশ ও প্রশাসনের ভয় দেখিয়ে যাত্রীদের মূল ঘাট থেকে এভাবে দূরে নামানো হচ্ছে বলে জানা গেছে।

কাজীরহাট নৌঘাটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, কাজীরহাট-আরিচা নৌপথটি এমনিতেই বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এ নৌপথে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় যাত্রী পারাপার নিষিদ্ধ। কিন্তু তা সত্ত্বেও ঝুঁকিপূর্ণ এ নৌযানটিতে নিয়মিতভাবে যাত্রী পারাপার হয়ে আসছে। এর আগে বেশ কয়েকবার অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ইঞ্জিনচালিত নৌকা ডুবে যাওয়ার ঘটনা ঘটে।

ইঞ্জিনচালিত নৌকায় যাত্রীপ্রতি ভাড়া ৭০ টাকা হলেও গতকাল শুক্রবার ১০০ থেকে ১১০ টাকা করে আদায় করতে দেখা যায়। একেকটি স্পিডবোটে ১৮ জন যাত্রী ধরলেও বহন করা হয় ২০ জনের বেশি। ২০০ টাকার ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৩০০ টাকা করে।

গতকাল শুক্রবার দুপুরে কথা হয় পাবনার পুষ্পপাড়া এলাকার বাসিন্দা আবদুল মালেকের সঙ্গে। তিনি বলেন, শুক্রবার সকালে মেয়েকে আরিচায় পৌঁছে দিতে স্পিডবোটে তিনি কাজীরহাট থেকে আরিচায় যান। সে সময় মূল ঘাট থেকে স্পিডবোট ছেড়েছিল। ভাড়া নেওয়া হয় ৩০০ টাকা। যাত্রীও নেওয়া হয় ২০ জন। বেশি ভাড়ার কারণ সম্পর্কে স্পিডবোট কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসা করলে তারা বলেছিল, পুলিশকে ‘ম্যানেজ’ করতে অতিরিক্ত টাকা লাগছে। অথচ একই দিনে ফেরার সময় ভাড়া নেওয়া হয় ২০০ টাকা।

গতকাল আরিচা স্পিডবোট ঘাট থেকে ২০ জন যাত্রী নিয়ে দুপুর ১২টার দিকে একটি স্পিডবোট কাজীরহাটে পৌঁছায়। বেশি ভাড়া ও যাত্রী বহনের বিষয়ে চালক মো. ওবায়দুল বলেন, ‘অবৈধভাবে চলা স্পিডবোটের সবই অবৈধ।’ অথচ কাজীরহাট নৌঘাটে স্পিডবোট ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা হায়দার আলী বলেন, তাঁর জানামতে এই নৌপথে স্পিডবোট চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ আছে।

কাজীরহাট নৌঘাট এলাকার ইঞ্জিনচালিত নৌকাগুলোর মালিকদের অন্যতম স্থানীয় ইউপি সদস্য ঠাণ্ডু শেখ। তিনি বলেন, কাজীরহাট-আরিচা নৌপথে যাত্রী এমনিতেই কমে গেছে। এরপরেও যেসব যাত্রী আসছে, তাদের বেশির ভাগই ফেরিতে যাতায়াত করছেন। তাই কোনো ট্রলার (ইঞ্জিনচালিত নৌকা) চলছে না। দু-একটি ট্রলার অবৈধভাবে চললেও সেগুলোতে যাত্রী নেই।

আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রওশন আলী বলেন, তিনি নিজে কাজীরহাট নৌঘাটে গিয়ে বিষয়টি তদারক করছেন। কেউ যাতে অবৈধভাবে চলাচল করতে না পারেন, তা নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। পুলিশকে ‘ম্যানেজ’ করার কথা একেবারেই মিথ্যা।