রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন সেন্টারে আগুনে নিহত চার ব্যক্তির পরিবারকে আপাতত ২৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। ৩০ দিনের মধ্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে এই অর্থ দিতে বলা হয়েছে।
হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের করা পৃথক লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করে এই আদেশ দেওয়া হয়। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের ভার্চ্যুয়াল আপিল বিভাগ আজ বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেন।
গত বছরের ২৭ মে ইউনাইটেড হাসপাতালের মূল ভবনের বাইরে করোনা আইসোলেশন ইউনিটে আগুন লেগে লাইফ সাপোর্টে থাকা পাঁচ রোগীর মৃত্যু হয়। তাঁরা হলেন রিয়াজুল আলম (৪৫), খোদেজা বেগম (৭০), ভারনন অ্যান্থনি পল (৭৪), মো. মনির হোসেন (৭৫) ও মো. মাহাবুব (৫০)।
ওই ঘটনায় ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশনা চেয়ে নিহত রিয়াজুলের স্ত্রী ফৌজিয়া আক্তার, নিহত খোদেজার ছেলে মো. আলমগীর ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নিয়াজ মোহাম্মদ মাহাবুব গত বছর আলাদা তিনটি রিট করেন।
রিটের শুনানি নিয়ে চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি হাইকোর্ট রুল দিয়ে নিহত চার ব্যক্তির পরিবারকে ১৫ দিনের মধ্যে ৩০ লাখ টাকা করে দিতে ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। এর বিরুদ্ধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে, যা শুনানি নিয়ে গত ১৭ জানুয়ারি চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন। পাশাপাশি নিয়মিত লিভ টু আপিল করতে বলেন। তার ধারাবাহিকতায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পৃথক তিনটি লিভ টু আপিল করে, যা আজ আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী অনীক আর হক, হাসান এম এস আজিম, মুনতাসির উদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ রিদওয়ান হোসেন, নিয়াজ মোহাম্মদ মাহাবুব ও সাহিদা সুলতানা। ইউনাইটেড হাসপাতালের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খান ও তানজিব উল আলম।
পরে ইউনাইটেড হাসপাতালের আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আপিল বিভাগ নিহত চার ব্যক্তির পরিবারকে ৩০ দিনের মধ্যে ২৫ লাখ টাকা করে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করে এই আদেশ দেওয়া হয়। সমঝোতার মাধ্যমে নিহত অপর এক ব্যক্তির পরিবারকে (মো. মনির হোসেন) আগে অর্থ প্রদান করা হয়েছে।
রিটকারী আইনজীবী নিয়াজ মোহাম্মদ মাহাবুব প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্ট আপাতত ক্ষতিপূরণ হিসেবে চার পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা করে ১৫ দিনের মধ্যে দিতে ইউনাইটেড হাসপাতালকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ কিছুটা সংশোধন করে আদেশ দিয়েছেন। ফলে, এখন নিহত চার ব্যক্তির পরিবারকে ৩০ দিনের মধ্যে ওই অর্থ দিতে হবে।
হাইকোর্টের রুলে নিহত ব্যক্তিদের জীবন রক্ষায় বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। ভুক্তভোগী প্রতি পরিবারকে ১৫ কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা-ও রুলে জানতে চাওয়া হয়। এই রুল চূড়ান্ত শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।