ভালোবাসা
নুরানীর আঁকায় প্রথম আলো
নুরানীর আঁকা প্রথম আলোর প্রতিলিপিটি গত কয়েক দিনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অজস্র লাইক ও শেয়ার হয়েছে।
শৈশব থেকে প্রথম আলোর সঙ্গে সখ্য তার। প্রতিদিন ভোর শুরু হয় পত্রিকাটির বিনোদন, খেলা আর ফিচার পাতার সঙ্গে। তৃতীয় শ্রেণি থেকে তার গৃহশিক্ষক প্রথম আলোর পড়াশোনা পাতা। এই আবেগের সম্পর্ক থেকেই প্রথম আলোকে নিয়ে অন্য রকম কিছু করার স্বপ্ন ছিল তার। আঁকার মাধ্যমে প্রথম আলোর একটি প্রতিলিপি তৈরি করে সেই স্বপ্ন পূরণ করেছে মেয়েটি।
তার হাতে আঁকা প্রথম আলোর প্রতিলিপিটি গত কয়েক দিনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অজস্র লাইক ও শেয়ার হয়েছে। এমন কাজের প্রশংসা করেছেন হাজারো মানুষ।
মেয়েটির নাম নুরানী ইসলাম নিশা (১৭)। নুরানী বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজের উচ্চমাধ্যমিক একাদশ শ্রেণির ছাত্রী।
বুধবার বগুড়া শহরের মালতীনগর এমএস ক্লাব মাঠসংলগ্ন ভাড়া বাসায় গিয়ে কথা হয় নুরানীর সঙ্গে। নুরানী তখন প্রথম আলোর আরেকটি সংখ্যা আঁকায় মগ্ন। পাশে বসে বড় বোনকে উৎসাহ দিচ্ছে ছোট ভাই ও বগুড়া জিলা স্কুলের ছাত্র আল নোমান। বান্ধবীর শিল্পকর্ম আঁকা বিভোর হয়ে দেখছে দুই সহপাঠী ইসরাত জাহান ও হোমায়রা হিয়া।
নুরানীর আঁকা যে ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, সেটি প্রথম আলোর গত ১৯ এপ্রিলের সংখ্যা। ‘পিপিই ও প্রশিক্ষণ চান তাঁরা’ ঝকঝকে হরফের প্রধান শিরোনাম। পাশেই বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতির সূচকের চিত্র। ওপরে প্রথম আলোর শৈল্পিক মাস্টহেডের মাঝখানে নিখুঁত লাল সূর্য। প্রথম দেখায় মনে হতে পারে, এটি প্রথম আলোর ছাপা সংখ্যা। মাত্র তিন দিনের চেষ্টায় এমন নিখুঁত প্রথম আলো এঁকেছে সে।
নুরানীর বাবা নজরুল ইসলাম, আর মা মেরিনা ইসলাম। বাবা পল্লী শক্তি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান। মা একই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তাঁদের গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ।
নুরানীর ছবি আঁকার শুরু ছোটবেলা থেকে। শিশুদের বয়সভিত্তিক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় পুরস্কার জিতেছে একাধিকবার। মেয়ের এমন প্রতিভা ও পড়াশোনায় ভালো ফল দেখে ২০১২ সালে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থেকে বগুড়ায় ভাড়া বাসায় ওঠে তার পরিবার। নুরানীকে ভর্তি করে দেওয়া হয় বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে, তৃতীয় শ্রেণিতে। এরপর বিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষক আরিফুল ইসলামের কাছে ছবি আঁকায় পারদর্শিতা অর্জন করে সে। ২০১৭ সালে আন্তস্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতায় দলীয়ভাবে রাজশাহী বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়। এ ছাড়া ২০১৯ সালে আন্তস্কুল ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয় নুরানী। পড়াশোনাতেও ভালো মেয়েটা।
‘শৈশব থেকেই প্রথম আলো আমার পড়ার সঙ্গী। বাসায় প্রথম আলো আসার পরপরই বিনোদন পাতা, নকশা, খেলার পাতা, পড়াশোনার পাতা দখলে নিতাম। প্রথম আলোর প্রতি ভালোবাসা থেকেই ২৭ নভেম্বর প্রথম আলোর একটি সংখ্যা আঁকার কাজে হাত দিই। ১৯ এপ্রিলের সংখ্যাটি গ্রাফিকস, লেখা ছাড়াও পৃষ্ঠাসজ্জা নান্দনিক মনে হওয়ায়, তা আঁকা শুরু করি। এতে স্কেল, পেনসিল, জেল কলম, মার্কার কলম এবং রাবার ব্যবহার করেছি। তিন দিনে আঁকা শেষে ৩০ নভেম্বর তা “বগুড়া জিলা স্কুল-সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় পরিবার’ গ্রুপে পোস্ট করি। মুহূর্তে ভাইরাল হয়।’
এসএসসির পর সরকারি আজিজুল হক কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয় নুরানী। এর মধ্যেই করোনা মহামারিতে ঘরবন্দী জীবন। এ সময় ছবি আঁকাকেই ধ্যানজ্ঞান বানিয়ে ফেলে মেয়েটি। হাতে আঁকা ছবি সংরক্ষণ করতে ‘পোর্ট্রেট জোন’ নামে একটি অনলাইন পেজ খোলে। কলেজভিত্তিক আঁকাবিষয়ক একটি অনলাইন গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত সে। এই গ্রুপে এমন কিছু করতে চেয়েছিল যা আলোচনা হবে, হইচই পড়ে যাবে। এমন চিন্তা থেকেই প্রথম আলো প্রতিলিপি আঁকার চেষ্টা তার।
নুরানী বলে, ‘শৈশব থেকেই প্রথম আলো আমার পড়ার সঙ্গী। বাসায় প্রথম আলো আসার পরপরই বিনোদন পাতা, নকশা, খেলার পাতা, পড়াশোনার পাতা দখলে নিতাম। প্রথম আলোর প্রতি ভালোবাসা থেকেই ২৭ নভেম্বর প্রথম আলোর একটি সংখ্যা আঁকার কাজে হাত দিই। ১৯ এপ্রিলের সংখ্যাটি গ্রাফিকস, লেখা ছাড়াও পৃষ্ঠাসজ্জা নান্দনিক মনে হওয়ায়, তা আঁকা শুরু করি। এতে স্কেল, পেনসিল, জেল কলম, মার্কার কলম এবং রাবার ব্যবহার করেছি। তিন দিনে আঁকা শেষে ৩০ নভেম্বর তা “বগুড়া জিলা স্কুল-সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় পরিবার’ গ্রুপে পোস্ট করি। মুহূর্তে ভাইরাল হয়।’
নুরানীর স্বপ্ন ভবিষ্যতে চিকিৎসক হবে। সুবিধাবঞ্চিতদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে চায় সে। তবে প্রথম আলোতে সাংবাদিকতার সুযোগ পেলে অবশ্যই তা লুফে নেবে। সুযোগ পেলে এক দিনের জন্য প্রথম আলোর পৃষ্ঠাসজ্জার দায়িত্ব নিতে চায় মেয়েটি।
কেমন প্রথম আলো চাও, এমন প্রশ্নে নুরানী বলে, ‘প্রথম আলোতে প্রতিদিন শিশু-কিশোরদের প্রতিভা তুলে ধরার একটি কর্নার দেখতে চাই।’