নুরুল আমিনের দুঃখ

নুরুল আমিন
নুরুল আমিন

দক্ষতা বাড়াতে বিশেষ প্রশিক্ষণ নিতে চান অনেকেই। নুরুল আমিনও (৩৬) চেয়েছিলেন। বাংলাদেশি এই যুবক থাকেন সৌদি আরবে। ২০০৬ সাল থেকে সেখানে ঝালাই (ওয়েল্ডিং) কর্মীর কাজ করেন।
গত বছরের নভেম্বরে ওয়েল্ডিং ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে বিশেষ প্রশিক্ষণ নিতে সৌদি আরব থেকে ভারতের তামিলনাড়ুতে আসেন। উদ্দেশ্য রাজ্যের তিরুচিলাপিল্ল জেলার কাট্টুরের ‘ডব্লিউ কিউ ওয়েল্ডিং কোয়ালিটি কনসেপ্টস’-নামের একটি সংস্থার অধীনে এক মাসের বিশেষ প্রশিক্ষণ নেওয়া। এ পর্যন্ত সবই ঠিকঠাক ছিল। এর পর থেকে তাঁকে তাড়া করে ফিরছে ‘দুর্ভাগ্য’।
জেদ্দার ভারতীয় দূতাবাস নুরুল আমিনকে তিন মাসের ভিসা দিয়েছিল। শর্ত ছিল এক মাস পর পর তামিলনাড়ুর তিরুচিলাপিল্লর বিদেশি নিবন্ধন কার্যালয় থেকে ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি করতে হবে। তাঁর ভিসা হয় গত বছরের ১৪ নভেম্বর। আর ভারতে যান ২২ নভেম্বর। এক মাস পার হওয়ার আগেই ভিসার মেয়াদ বাড়াতে নিবন্ধন কার্যালয়ে এসে আবেদন করেছিলেন। এরপর শুরু হয় নিবন্ধন কার্যালয়ের টালবাহানা। ওই কার্যালয়ে দৌড়াদৌড়ি করতেই এক মাস পেরিয়ে যায়। এ জন্য জরিমানাও গুনতে হয় তাঁকে।
ভারতীয় মুদ্রায় (জরিমানাসহ) চার হাজার ৮০০ রুপি জমা দিয়ে ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য লিখিত আবেদন করেন নুরুল আমিন। তখন তাঁকে জানানো হয় আবেদনের সঙ্গে সৌদি আরবে ফিরে যাওয়ার বিমানের টিকিট জমা দিতে হবে। ২২ হাজার রুপিতে একটি এয়ারলাইনসের টিকিট কেটে জমাও দেন। কিন্তু এতেও অনুমতি মেলে না। এই কাগজ-সেই কাগজ জমা দিতে বলে নিবন্ধন কার্যালয়। এভাবেই চলতে থাকে।
সৌদি আরবে নুরুল আমিনের ভিসার মেয়াদ ছিল গত ১ মে পর্যন্ত। কিন্তু ভিসা জটিলতায় পড়ে শেষ পর্যন্ত সেখানে আর ফিরে যেতে পারেননি তিনি। ১ মে পার হওয়ার পর তিনি বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার আবেদন করেন। এবার বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার টিকিট জমা দিতে বলা হয়। এবার ১৬ হাজার রুপিতে একটি এয়ারলাইনসের টিকিট কেটে আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দেন। তবুও অনুমতি মেলে না।
বাধ্য হয়ে এক আইনজীবীর মাধ্যমে গত ৫ জুন মাদ্রাজ হাইকোর্টের মাদুরাই বেঞ্চের দারস্থ হন নুরুল আমিন। বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার জন্য আবেদন করেন তিনি। হাইকোর্ট তাঁকে ১৪ আগস্টের মধ্যে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশও দেন। কিন্তু ফেরা হয় না তাঁর।
এ বিষয়ে তিরুচিলাপিল্লর বিদেশি নিবন্ধন কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয়, হাইকোর্টের নির্দেশ-সংক্রান্ত ফাইল দিল্লিতে গেছে। সেখান থেকে অনুমতি পাওয়ার পর নুরুল আমিনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে।
দীর্ঘ আট মাস ধরে ছোটাছুটি করতে করতে এখন রীতিমতো বিধ্বস্ত নুরুল আমিন। সঙ্গে থাকা টাকা-পয়সা অনেক আগেই ফুরিয়েছে। যে প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ নিতে এসেছিলেন, সেখানে বলে-কয়ে থাকার ব্যবস্থা করতে পেরেছেন। খেয়ে না-খেয়ে কোনো রকমে দিন কাটছে তাঁর। নুরুল আমিন বলেন, তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায়। যদিও তাঁর পাসপোর্টে জেলার নাম উল্লেখ করা আছে সিরাজগঞ্জ। তিনি বলেন, মা-বাবা, স্ত্রী এবং দুই ছেলে দেশে তাঁর অপেক্ষায় আছে।