নেতৃত্বের জায়গায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে প্রথম আলো আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা (মাঝে)। প্রথম আলোয় নারী দিবসের ক্রোড়পত্রে যাঁদের নিয়ে লেখা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিচ্ছন্নতাকর্মী আলোন নাহার (বাঁয়ে) ও হেবাং রেস্তোরাঁর উদ্যোক্তা বিপলি চাকমা। কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে। ঢাকা, ৮ মার্চ
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

নারীর এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এখনো অনেক বাধা রয়েছে। রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির দিক দিয়ে নারীদের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মতো অনুকূল পরিবেশ অনেকটা তৈরি হলেও বাস্তবে নারীরা কত দূর এগোতে পারছেন, সেটা এখনো বড় প্রশ্ন। নেতৃত্বের জায়গাগুলোতে নারীরা অনেক পিছিয়ে আছেন। তাই সমতা অর্জন করতে হলে নেতৃত্বে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে।


আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদ্‌যাপন উপলক্ষে আজ সোমবার প্রথম আলোর উদ্যোগে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে এ অনুষ্ঠানে প্রথম আলোর নারী কর্মীদের পাশাপাশি জ্যেষ্ঠ কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। প্রতিবছর এই দিবস পালন করে প্রথম আলো। তবে এবার করোনাভাইরাসের কারণে সীমিত পরিসরে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
করোনাকালে বিভিন্ন পর্যায়ের অনুপ্রেরণাদায়ী নারীদের নিয়ে গতকাল বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে প্রথম আলো। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে নিজের গল্প শোনান।


গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্তের পর সংক্রমণের তথ্য জানাতে প্রায় প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করে আলোচিত হন অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তৎকালীন এই পরিচালক এখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন)। অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি বলেন, যত দিন শুধু নারীরা নারী দিবস পালন করবেন, তত দিন পর্যন্ত সমতা অর্জন হবে না। রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির দিক দিয়ে এখন নারীদের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মতো অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। কিন্তু তারপরও নারী কত দূর এগিয়েছে, কত দূর এগোতে পারছে? এ জন্য সামাজিক অংশগ্রহণ খুবই প্রয়োজন।
ভালো কাজের জন্য সহযোগিতা করে সংবাদ প্রকাশের জন্য গণমাধ্যমের প্রতি অনুরোধ জানান অধ্যাপক মীরজাদী। একই সঙ্গে করোনা মোকাবিলায় গণমাধ্যমের ভূমিকাও তুলে ধরেন তিনি।


অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী আলোন নাহার। করোনাকালে লকডাউনের মধ্যেও ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে গেছেন ষাটোর্ধ্ব এই নারী। বক্তব্য দিতে গিয়ে নিজের আর্থিক কষ্টের কথা জানালেন। একই সঙ্গে প্রথম আলোর এ অনুষ্ঠানে আসতে পেরে জানালেন তাঁর আনন্দের কথাও।

বর্তমানে চিকিৎসাশিক্ষায় নারীর প্রাধ্যান্য থাকলেও হাসপাতালের পরিচালক, মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের পদসহ বিভিন্ন নীতিনির্ধারণী পদে নারীর সংখ্যা নগণ্য বলে উল্লেখ করেন চিকিৎসক তানজিনা হোসেন। তিনি বলেন, এ বিষয়গুলো নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। করোনাকালে চলা টেলিমেডিসিন পরেও চালুর রাখার ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেন তানজিনা হোসেন।

অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন ওয়ারদা আশরাফ। ঢাকা, ৮ মার্চ
ছবি: জাহিদুল করিম


পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার পাহাড়ি খাবার নিয়ে ঢাকায় রেস্তোরাঁ খুলেছেন চার বোন। তাঁদের একজন বিপলি চাকমা। তিনি বললেন, ‘ক্ষুদ্র জাতিসত্তার খাবার সবার কাছে পরিচিত করাই আমাদের উদ্দেশ্যে। সেটা আপনাদের কারণে সফল হয়েছি।’
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের জিন-নকশা উন্মোচনে নেতৃত্বদানকারী অণুজীববিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা ভিডিও বার্তার মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানান।

সবাইকে নারী দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য দেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। তিনি বলেন, একটি প্রতিষ্ঠান সত্যিকার অর্থে যদি ভারসাম্য নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে চায়, তাহলে পুরুষের সহযোগিতার পাশাপাশি নারীদের অবস্থানও গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম আলো নারীবান্ধব হোক, এটাই চেয়েছেন সব সময়।

এ সময় প্রথম আলোর পক্ষ থেকে অ্যাসিড–সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভূমিকা নেওয়াসহ বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরে মতিউর রহমান বলেন, প্রথম আলোর পক্ষ থেকে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের যে বৃত্তি দেওয়া হয়, সেটা ভবিষ্যতে অর্ধেক ছাত্রী ও অর্ধেক ছাত্রকে দেওয়া হবে। প্রথম আলো সম্পাদক বলেন, ‘যা কিছু হোক না কেন, আমরা সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জয় দেখতে চাই।’

বক্তব্য দেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। ঢাকা, ৮ মার্চ
ছবি: জাহিদুল করিম

প্রথম আলোর ফিচার সম্পাদক সুমনা শারমীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রথম আলো ডিজিটালের নির্বাহী প্রযোজক (নিউজ) সাদিয়া মাহজাবিন, সহসম্পাদক শাকিলা হক বক্তব্য দেন। আর অতিথিদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানান প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকেরা।


অনুষ্ঠানটি শুরু হয়েছিল ওয়ারদা আশরাফের গাওয়া ‘উজ্জ্বল একঝাঁক পায়রা...’ গানের মধ্য দিয়ে। আর শেষ হয় তাঁরই গাওয়া জোয়ান বায়েজের বিখ্যাত ‘বাংলাদেশ’ গানটির মধ্য দিয়ে।