পদ্মা সেতু নির্মাণের সময় ও ব্যয় দুটোই বাড়ছে

  • নকশা প্রণয়ন শুরুর পর ২০১৩ সালে সেতু চালুর ঘোষণা।

  • নির্মাণের ঠিকাদার নিয়োগের পর ২০১৮ সালের মধ্যে চালুর সিদ্ধান্ত হয়।

  • সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুসারে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে সেতু চালু হবে।

ব্যয় বৃদ্ধি

  • ২০০৭ সালে একনেকে পাস হয় ১০ হাজার ১৬২ কোটি টাকার প্রকল্প।

  • ২০১১ সালে প্রথম প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধনের পর ব্যয় দাঁড়ায় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা।

  • ২০১৮ সালে প্রকল্প সংশোধন না করে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।

পদ্মা সেতুর মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে ৪ ও ৫ নম্বর খুঁটিতে বসল ৩২ নম্বর স্প্যান। এতে দৃশ্যমান হলো ৪ হাজার ৮০০ মিটার, যা দৈর্ঘ্যে বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান। গতকাল সকালে
ছবি: ফয়সাল হোসেন

নকশা সংশোধন ও নদীশাসনে বিলম্বের কারণে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ আগেই পিছিয়েছিল। এবার করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি এবং বন্যার স্রোতের কারণে চার মাস স্টিলের কাঠামো (স্প্যান) বসানো যায়নি। ফলে পদ্মা সেতুর কাজ আরেক দফা পিছিয়ে গেছে। স্রোত কমে আসায় গতকাল রোববার সেতুর মাওয়া প্রান্তে একটি স্প্যান খুঁটিতে বসানো হয়। এভাবে কাজ পেছানোর কারণে আগামী বছর ডিসেম্বরে সেতু চালু করা নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। সময়মতো কাজ না হওয়ায় সেতু নির্মাণে ব্যয়ও বাড়ছে।

পদ্মা সেতুর খুঁটির (পিলার) সংখ্যা ৪২টি। সব কটিই বসে গেছে। এসব খুঁটির ওপর ৪১টি স্প্যান যুক্ত করা হবে। প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য দেড় শ মিটার। সব কটি জোড়া দেওয়া হলেই ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুর মূল কাঠামো দাঁড়িয়ে যাবে। এখন পর্যন্ত ৩২টি স্প্যান খুঁটিতে বসেছে। অর্থাৎ ৪ দশমিক ৮০ কিলোমিটার সেতু দৃশ্যমান হয়েছে। বাকি আছে ৯টি স্প্যান, যার সব কটিই সেতুর মাওয়া প্রান্তে বসবে।

সব খুঁটিতে স্প্যান বসানো হলে ট্রেন চলাচলের জন্য লাইন স্থাপন করতে হবে। একই সঙ্গে যানবাহন চলাচলের রাস্তা বানানোর কাজ শেষ করতে হবে। এরপরই সেতুটি চালু করা যাবে।

পদ্মা সেতুর কাঠামোর ভেতরের অংশ। এদিক দিয়েই চলাচল করবে ট্রেন। ২০ সেপ্টেম্বর।
ছবি: আনোয়ার হোসেন

পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নে যুক্ত দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সময়মতো কাজ না হওয়ার দায় ঠিকাদার নিচ্ছে না। তারা বলছে, ২২টি খুঁটির (পিলার) পাইলিংসংক্রান্ত নকশা সংশোধন, নদীশাসন কাজে বিলম্ব এবং নদীভাঙন ও প্রবল স্রোতের কারণে কাজ পিছিয়েছে। সরকারও ঠিকাদারের দাবি মেনে নিয়েছে। ফলে বাড়তি সময়ের পুরো দায় বহন করতে হচ্ছে সরকারকে। যেমন দেরির কারণে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির (প্রাইস এসকেলেশন) খেসারত দিতে হচ্ছে সরকারকে। এ সময়ে যেসব লোকবল ব্যবহার করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, এরও খরচ বহন করতে হবে বাংলাদেশকে। এমনকি নির্মাণকাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির বাড়তি সময়ে ব্যবহারের খরচও চাইছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সব মিলিয়ে সেতু নির্মাণের সময় ও ব্যয় দুটোই বাড়ছে।

মূল সেতুর কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। আর নদীশাসনের কাজ পেয়েছে চীনের আরেক প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশন। তাদের কাজ শুরুর চিঠি দেওয়া হয় ২০১৪ সালের নভেম্বরে। পরবর্তী চার বছরে ২০১৮ সালে কাজ শেষ করার কথা ছিল।

পদ্মা সেতুর ওপরের অংশ। সড়ক বিভাজক, পাশের রেলিং ও পিচঢালাই হলে যানবাহন চলতে পারবে। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর প্রায় দুই কিলোমিটার এমন পথ নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। ২০ সেপ্টেম্বর।
ছবি: আনোয়ার হোসেন

প্রকল্পের নথি থেকে জানা গেছে, পাইলিংসহ নানা জটিলতার কারণে ইতিমধ্যে মূল সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে আনুষ্ঠানিকভাবে পৌনে তিন বছর বাড়তি সময় দিয়েছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। নদীশাসনেও ঠিকাদারকে আড়াই বছর বাড়তি সময় দেওয়া হয়েছে। সময় বাড়ানোর পেছনে কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে ঠিকাদারকে সময়মতো জমি বুঝিয়ে না দেওয়া, নদীভাঙন এবং নদীর তলদেশে গভীর গর্তের সৃষ্টি।

সেতু বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, মূল সেতুর পৌনে তিন বছর সময় বেড়েছে অতীতের সমস্যার কারণে। করোনা ও বন্যার তীব্র স্রোতের কারণে আগামী বছর হয়তো মূল সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে আবারও বাড়তি সময় দিতে হতে পারে। একইভাবে সামনে নদীশাসনেও সময় বাড়ানো লাগতে পারে।

জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পদ্মা নদী পৃথিবীর সবচেয়ে জটিল নদীর একটি। প্রকল্পের কাজটিও বেশ জটিল। এর মধ্যে নানা চ্যালেঞ্জ এসেছে, সেগুলো উতরেও গেছেন তাঁরা। এখন বন্যা ও করোনা পরিস্থিতি কিছুটা বেকায়দায় ফেলেছে। তবে এখনো সময়মতো কাজ শেষ করার ব্যাপারে আশাবাদী তাঁরা। ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, কিছু বাড়তি কাজ করতে হয়েছে। এর জন্য ব্যয় বাড়বে। আবার কিছু কাজে ব্যয় কমেছেও। তবে চূড়ান্ত ব্যয় জানতে হলে অপেক্ষা করতে হবে।

নির্মাণকাজের বর্তমান অবস্থা

গত ২০ সেপ্টেম্বর মাওয়ার নির্মাণমাঠে গিয়ে দেখা যায়, চারটি স্প্যান প্রস্তুত। আরও ছয়টির কোনোটি রং করা হচ্ছে, কোনোটির জোড়া দেওয়ার কাজ চলছে। অর্থাৎ ১০টি স্প্যানই চাইলে স্বল্প সময়ের মধ্যে বসানো সম্ভব।

মাওয়ার এ নির্মাণমাঠ থেকে স্প্যান বড় ক্রেনে করে খুঁটিতে তোলা হয়। কিন্তু নির্মাণমাঠের পাশেই বড় একটি বার্জে বড় ক্রেনটি অলস বসিয়ে রাখতে দেখা যায়। দুজন কর্মকর্তা বার্জের নিচে পানির তীব্র স্রোত, কলকল শব্দের দিকে ইঙ্গিত করে বলছিলেন, মাওয়ায় পানির স্রোত বেশি হওয়ায় স্প্যানসহ ক্রেনটি যেতে পারছিল না।

পদ্মা সেতুর প্রতিটি অংশের কাজের পেছনে রয়েছে জটিল সব কর্মযজ্ঞ। নদীতে সেতুর ঠিক মাঝামাঝি এলাকায় এমনই কর্মতৎপরতা চলছে। ২০ সেপ্টেম্বর।
ছবি: আনোয়ার হোসেন

প্রকল্পের নথি অনুসারে, পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যান বসে ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর। এরপর প্রায় চার মাস পর আরেকটি স্প্যান বসে। প্রথম দিকে দুই–তিন মাস পরপর স্প্যান বসানো হতো। ২০১৮ সালের শেষের দিক থেকে মাসে একাধিক স্প্যান বসানো শুরু হয়। সাম্প্রতিক সময়ে এবারই সবচেয়ে বেশি সময় পর স্প্যান বসেছে। স্রোত কমে যাওয়ায় চলতি মাসে আরও তিনটি স্প্যান তোলার পরিকল্পনা করছে কর্তৃপক্ষ।

পদ্মা সেতু দ্বিতলবিশিষ্ট। স্টিলের কাঠামোর ভেতরে দিয়ে চলবে ট্রেন। এর ওপর যানবাহন চলার পথ। গত আগস্টে প্রকল্পের সর্বশেষ মাসিক অগ্রগতি প্রতিবেদন অনুসারে, সেতুর অর্ধেকের মতো অংশে রেলওয়ে গার্ডার এবং স্ল্যাব বসানো হয়েছে। বাকি অর্ধেক সম্পন্ন হলে রেল কর্তৃপক্ষ লাইন বসাবে। এখন পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এলাকায় স্ল্যাব বসিয়ে রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। পুরোটা সম্পন্ন হলে এর ওপর পিচ ঢালাই করতে হবে।

১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার চরের জমি বিলীন হচ্ছে

২০০৭ সালে একনেকে পাস হওয়া পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় ছিল ১০ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। ২০১১ সালে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে দ্বিতীয় দফা সংশোধনের পর ব্যয় দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি। এরপর প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন না করে ২০১৮ সালের জুনে আবারও ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।

পদ্মা নদীর চরে ১ হাজার ১৬৩ হেক্টর জমি অধিগ্রহণের কারণে সর্বশেষ ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ে। তবে বিপুল ব্যয়ে কেনা সেই চরের জমি এখন বন্যার পানির টানে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

পদ্মা সেতুর পাশে চরজানাজাত এলাকায় এ জমির অবস্থান। এলাকাটি মাদারীপুর জেলার শিবচরে। পদ্মা সেতুর নদীশাসন এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে যুক্ত সূত্র বলছে, চলতি বন্যায় প্রায় ৪০ শতাংশ চরের জমি ভেসে গেছে। পদ্মা নদীর মূল প্রবাহ প্রতিবছর জাজিরা প্রান্তের দিকে সরে যাচ্ছে। আগামী বছর এসব চরের দিকে পানির প্রবাহ আরও বাড়বে। ভাঙনের কারণে চরের এ জমি কত দিন টিকে থাকবে, সেটা নিয়ে সন্দিহান সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা।

সেতু বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, শুরুতে পদ্মা সেতু প্রকল্পের অধীনে দুই পারে প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমি কেনা হয়। এতে ব্যয় হয় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এসব জমিতে পদ্মা সেতু প্রকল্পের সড়কসহ বিভিন্ন স্থাপনা (দপ্তর, বাসা, পুনর্বাসন এলাকা ইত্যাদি) নির্মাণ করা হয়েছে।

পদ্মা সেতুর নদীশাসন করতে গিয়ে ২১২ কোটি ঘনফুট বালু তোলার কথা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রোর সঙ্গে চুক্তিতে এই বালু নদীরই কোনো চরে ফেলার শর্ত রয়েছে। পদ্মা সেতু প্রকল্পে শুরুতে চরে চাষবাস করা আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে বালু ফেলার সিদ্ধান্ত হয়। শরীয়তপুর জেলার অন্তর্গত চরের ৮২ হেক্টর জমি স্থানীয় বাসিন্দাদের সামান্য ক্ষতিপূরণ দিয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু সেতুসহ দেশের কোনো সেতু প্রকল্পে চরের জমি কেনা হয়নি।

কিন্তু মাদারীপুরের শিবচরে একইভাবে চরের জমি ব্যবহার করতে গিয়ে বেকায়দায় পড়ে সেতু বিভাগ। সরকারদলীয় স্থানীয় রাজনীতিকেরা জমির মালিকানা দাবি করে চরে বালু ফেলা বন্ধ করে দেন। বিষয়টি সরকারের শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত গড়ায়। শেষমেশ চরের জমি কিনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। অথচ প্রকল্প শেষ হওয়ার পর এ জমি সেতু বিভাগের কোনো কাজেই লাগবে না।

এ বিষয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, চরের জমির স্থায়িত্ব নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে। তবে তাঁদের মূল কাজ ছিল বালু ফেলা। এটা তাঁরা করছেন। এখন ভবিষ্যতে কীভাবে চর টিকিয়ে রাখা যাবে, কীভাবে ব্যবহার হবে, এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হবে।

খুঁটির ওপর ৪১টি স্প্যান বসালেই পদ্মা সেতু সম্পন্ন হবে। জাজিরার দিক থেকে ৩২টি স্প্যান বসে গেছে। মাওয়া প্রান্তের এ অংশে ৯টি স্প্যান বসানো বাকি। ২০ সেপ্টেম্বর।
ছবি: আনোয়ার হোসেন

২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ওই চরের জমি কেনে সেতু বিভাগ। প্রথমে সরকার এ জমিতে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর করার পরিকল্পনা নেয়। কিন্তু জাপানের বিশেষজ্ঞরা মাটি পরীক্ষা করে বিমানবন্দর নির্মাণ সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেন।

এরপর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী চরের জমিতে গবাদিপশুর খামার স্থাপন করার প্রস্তাব দেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর ২৩ অক্টোবর সেতু বিভাগ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়।

জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, যে জমি স্থায়ী হবে না, প্রকল্প শেষে দরকার নেই—সেই জমি কেনা অপচয়। আসলে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎই এ জমি কেনার মূল লক্ষ্য ছিল। এখন তদন্ত করে বের করতে হবে জনগণের টাকার ভাগ-বাঁটোয়ারা কীভাবে হয়েছে। দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দিতে হবে।

আরও যেসব খাতে ব্যয় বাড়তে পারে

সেতু বিভাগ সূত্র বলছে, সময়মতো কাজ শেষ না হওয়ায় তাদের লোকবল বসিয়ে রাখার জন্য খরচ চাইছে মূল সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এটাকে ম্যানেজমেন্ট কস্ট বলে। এ ক্ষেত্রে মূল সেতুর ঠিকাদার দিনে ৩৯ লাখ টাকা দাবি করছে। কিন্তু সেতু বিভাগ বলছে, তারা ২৮ লাখ টাকা দেবে। এখনো দর-কষাকষি চলছে। দৈনিক ৩০ লাখ টাকায় রফা হলেও ঠিকাদারকে ২৮৫ কোটি টাকা বাড়তি দিতে হবে।

এ ছাড়া বাড়তি সময় ভারী যন্ত্রপাতি বাংলাদেশে পড়ে থাকার কারণে বাড়তি খরচ চাইছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এমন তিন শতাধিক দাবি (ক্লেইম) আছে ঠিকাদারের। এগুলো নিষ্পত্তি করতে হবে।

একইভাবে নদীশাসন কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারকেও নদীর তলদেশে ৩০ লাখ বালুর বস্তা ফেলার খরচ দিতে হবে। নদীভাঙন মেরামতেরও খরচ চাইছে তারা।

বছর বছর পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পেলে ঠিকাদারকে বাড়তি টাকা দিতে হয়। এ জন্য পদ্মা সেতু প্রকল্পে সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা ধরা আছে। তবে প্রকল্পের মেয়াদ যেভাবে বাড়ছে, তাতে এ টাকায় কুলাবে না বলে মনে করছেন প্রকল্প কর্মকর্তারা।

এ ছাড়া ঠিকাদারের ভ্যাট ও আয়কর ৪ শতাংশ বেড়েছে। বিদেশি পরামর্শকদের ভ্যাট ও কর বেড়েছে ১০ শতাংশ। দেশীয় পরামর্শকদের ভ্যাট ও কর বেড়েছে ২ শতাংশ। এ তিন খাতে ভ্যাট ও কর বাবদ ব্যয় বৃদ্ধির পরিমাণ ৬৮৬ কোটি টাকা। এগুলো সামনে যোগ করতে হবে।

গ্যাসলাইন বসানো বাবদ যে খরচ ধরা হয়েছে, তা থেকে কিছু টাকা বেঁচে যাবে। তবে ৪০০ কেভি বিদ্যুতের লাইন বসানোর কাজে ব্যয় বাড়বে।

ইতিমধ্যে যেসব খরচ বেড়েছে, সামনে যা বাড়বে, সব মিলিয়ে আরেক দফা প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করতে হবে।

সাবেক সচিব ও বড় প্রকল্প বিষয়ে বিশ্লেষক মুহাম্মদ ফাওজুল কবীর খান প্রথম আলোকে বলেন, প্রকল্পের কাজে দেরি মানেই ব্যয় বৃদ্ধি। কাজ নেওয়ার পর সময়ক্ষেপণ, এরপর ক্ষতিপূরণ দাবি—এগুলো ঠিকাদারদের পুরোনো কৌশল। পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিষয়গুলো ঘটবে, তা আগেই বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছিলেন। এখন সেগুলোই ঘটছে। তিনি বলেন, বড় প্রকল্পগুলোর ঠিকাদারের পেছনে রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা জড়িয়ে আছেন। ফলে ঠিকাদারের স্বার্থে অনেক কিছুই ঘটছে, ঘটবে।