পদ্মা সেতুর নাটবল্টু খোলা যুবকের ৭ দিনের রিমান্ড

মো. বায়েজিদ নামের এই যুবককে রোববার বিকেলে রাজধানীর শান্তিনগর এলাকা থেকে আটক করেছে সিআইডি
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

পদ্মা সেতুর রেলিংয়ের নাটবল্টু খোলার ঘটনায় গ্রেপ্তার বায়েজিদ তালহাকে (৩১) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ সোমবার পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে তাঁকে আদালতে পাঠায়। শুনানি শেষে আদালত সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

গতকাল রোববার অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে বায়েজিদ তালহাকে পদ্মা সেতুর নাটবল্টু খুলতে দেখা যায়। পরে রাজধানীর শান্তিনগর এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বায়েজিদের বিরুদ্ধে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারের বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির সদর দপ্তরে আজ এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। কীভাবে সেতুর নাটবল্টু খোলা হলো, তা নিয়ে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেন। তবে সিআইডির সাইবার ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ প্রশ্নটি এড়িয়ে যান।

রেজাউল মাসুদ বলেন, ‘পদ্মা সেতুর নাটবল্টু হাত দিয়ে খোলা সম্ভব নয়। আমরা সেতু কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও আলোচনা করে জেনেছি, এত বড় একটা স্থাপনার নাটবল্টু হাত দিয়ে খোলা যাবে না।’ নাটবল্টু খুলতে সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানান সিআইডির এ কর্মকতা। তবে কী ধরনের সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়েছে, তা বলতে পারেননি তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে রেজাউল মাসুদ বলেন, গ্রেপ্তারের পর ওই যুবক প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নাটবল্টু খোলার কথা স্বীকার করেছেন। তবে তিনি কীভাবে এ কাজটি করেছেন, সে বিষয়ে এখনো কোনো তথ্য দেননি। তাঁরা একটি গাড়ি নিয়ে সেখানে গিয়েছিলেন। ওই গাড়িতে কায়সার নামের আরেকজন ছিলেন। তাঁদের টিকটক আইডি রয়েছে। নাটবল্টু খোলার ৩০ থেকে ৩৫ সেকেন্ডের ভিডিওটি কায়সারের আইডি থেকে আপলোড করা হয়। এর এক ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে শনাক্ত করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আর কী জানা গেছে, এমন প্রশ্নের জবাবে রেজাউল মাসুদ বলেন, ‘সবকিছু বিবেচনায় আমরা মনে করছি, এই কাজটা তিনিই করেছেন। তাঁর একটা পরিকল্পনা ছিল। বাকিটা তদন্তে আসবে। এখানে অপরাধের ইনগ্রেডিয়েন্স আছে। তাঁর আগের কর্মকাণ্ড সব আমরা দেখছি। আপনারা যে ভিডিও দেখেছেন, তার বাইরেও কিছু ভিডিও আমরা পেয়েছি।’

পদ্মা সেতুর কোনো কাজে ত্রুটি থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো উচিত বলে মনে করেন সিআইডির এই কর্মকর্তা। বলেন, ‘তালহা যেটাকে পুঁজি করে ভিডিও করে ভাইরাল করেছেন এবং মানুষের অনুভূতি বা ইমোশনকে আঘাত দিয়েছেন, আমাদের কাছে মনে হচ্ছে, এটা অনেক বড় অপরাধ।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নাটবল্টুর ভিডিওটি ছড়িয়ে বায়েজিদ মূলত পদ্মা সেতু নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছেন উল্লেখ করে রেজাউল মাসুদ বলেন, এই ভিডিও প্রচারের মাধ্যমে বায়েজিদ তালহা মানুষের অনুভূতি ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন। এটা অন্তর্ঘাতমূলক অপরাধ।

মামলার এজাহারে কী কী আলামত দেখানো হয়েছে জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা বলেন, তাঁর (বায়েজিদ তালহা) কাছ থেকে ডিভাইস ও মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়েছে। সেগুলো মামলার আলামত হিসেবে দেখানো হয়েছে। তবে নাটবল্টু এখনো উদ্ধার করা হয়নি। সে কারণে মামলায় এগুলো আলামত হিসেবে দেখানো হয়নি। এগুলো উদ্ধার সাপেক্ষে পরবর্তী সময়ে আলামত হিসেবে দেখানো হবে।

সংবাদ সম্মেলনে রেজাউল মাসুদ আরও বলেন, ‘ঘটনার কোনো সিসিটিভি ফুটেজ এখনো আমরা পাইনি। ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। তাঁরা মূলত সেতুর জাজিরা প্রান্ত ঘুরে ফেরার পথে ৩০ থেকে ৩৫ নম্বর পিলার এলাকায় নেমে এ কাজ করেছেন।’

আরও পড়ুন

ঘটনার পর তড়িঘড়ি করে মামলা করে এবং নাটবল্টু আলামত হিসেবে না দেখিয়ে আসামিকে মামলায় কোনো সুবিধা দেওয়া হচ্ছে কি না, জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা অনেক তথ্যই পেয়েছি, কিন্তু সব তথ্য গণমাধ্যমের সামনে এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। যে তথ্যগুলো আমরা শুধু নিশ্চিত হতে পেরেছি, সেগুলো আমরা গণমাধ্যমকে বলছি। মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে, তদন্তে আরও অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে।’

গ্রেপ্তার যুবকের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে জানতে চাইলে রেজাউল মাসুদ বলেন, ‘আমরা তাঁকে অপরাধী হিসেবে ধরেছি, তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় থাকতে পারে, তবে এখনো আমরা তাঁর কোনো পরিচয় নিশ্চিত হতে পারিনি।’

আরও পড়ুন