পরিবহনের দুর্ভোগের সঙ্গে যানজট-বৃষ্টি

পাটুরিয়া–দৌলতদিয়া আর শিমুলিয়া–বাংলাবাজার ঘাটে ভিড়। ঢাকা–টাঙ্গাইল, ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট।

ঈদ উপলক্ষে রাজধানী ছাড়ছে নগরবাসী। ধারণক্ষমতা পূর্ণ হওয়ার পরও ফেরিতে উঠছে মানুষ। মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়ায়।
সাজিদ হোসেন

মাথার ওপর ঝড়–বৃষ্টি। পথে পথে যানজট। আর ঘাটে ঘাটে মানুষের জটলা। লকডাউনের মধ্যে এত কষ্ট মাথায় নিয়েও প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে যাচ্ছে ঘরমুখী মানুষ। গত কয়েক দিনের মতো মঙ্গলবারও প্রধান প্রধান মহাসড়ক ও ফেরিঘাটে দেখা গেছে এই চিত্র। যথারীতি উপেক্ষিত থেকে গেছে স্বাস্থ্যবিধি। তাতে রয়ে গেছে করোনার সংক্রমণের ঝুঁকি।

ঢাকার বাইরে থেকে প্রথম আলোর প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

মঙ্গলবার সকাল থেকে ভিড় ছিল মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাটে। সরেজমিনে দেখা গেছে, যাত্রীরা ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকা থেকে লোকাল বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল, এমনকি পিকআপ ভ্যানে করে পাটুরিয়ার উদ্দেশে রওনা হন। পথে মহাসড়কের শিবালয়ের টেপড়া এলাকায় প্রশাসনের লোকজন গাড়ি থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দিচ্ছে এবং যানবাহনগুলো উল্টো পথে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এরপরও গাড়ি পাল্টিয়ে যাত্রীরা আবার ঘাটমুখী হচ্ছেন।

বেলা ১১টার দিকে দেখা গেছে, পাটুরিয়া কোনো ফেরি ভিড়লে যাত্রীরা ফেরিতে উঠতে দৌড় শুরু করেন। পাটুরিয়ার ৩ নম্বর ঘাটে আমানত শাহ পন্টুনে ভিড়লে যাত্রীরা হুমড়ি খেয়ে ফেরিতে উঠে পড়েন। পরে ফেরিটি ঘাট ছেড়ে যায়। বেলা সোয়া ১১টার দিকে বৃষ্টি শুরু হলে যাত্রীদের কেউ কেউ ভিজেই ফেরিতে উঠতে ছোটাছুটি করেন। নারী ও শিশুদের দুর্ভোগ ছিল বেশি।

মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ও মাদারীপুর বাংলাবাজার নৌপথে গত কয়েক দিন স্বল্প আকারে ফেরি চালানো হলেও মঙ্গলবার সকাল থেকে ছোট-বড় ১৪টি ফেরি চলাচল করছে। দুপুরে শিমুলিয়া ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশ নিরাপত্তাচৌকি বসিয়ে যানবাহন নিয়ন্ত্রণের কাজ করছেন। রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা যাত্রীদের যানবাহন আটকে দিচ্ছেন। এরপর যাত্রীরা হেঁটেই ঘাটের দিকে রওনা করেন। এরপর তাঁরা এক ঘাট থেকে অন্য ঘাটে ফেরির জন্য দৌড়াচ্ছেন। ঘাটে ফেরি ভেড়ামাত্রই যাত্রীরা উঠে যাচ্ছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঘাটের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারও চায় না মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছোট নৌযান ও চোরাইপথে পদ্মা পাড়ি দিক। আবার ঈদে বাড়ি ফিরতে গিয়ে দেশে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাক। তাই শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথ দিয়ে সব কটি ফেরি চালানো হচ্ছে।

মাহমুদা বেগম নামের এক যাত্রী বলেন, তিনি গাজীপুরের একটি গার্মেন্টসে কাজ করেন। ঈদের ছুটি পেয়েছেন। দুদিন আগেও তিনি ভেবে পাচ্ছিলেন না কীভাবে গ্রামের বাড়িতে যাবেন। মঙ্গলবার সকালে জানতে পারলেন সব কটি ফেরি চলছে। তাই দুপুরের পরেই তিনি ঘাটে চলে এসেছেন।

দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলগামী মানুষের জন্য দুই ঘাটের এই যখন চিত্র, তখন উতরাঞ্চলের মানুষকে ভুগতে হয়েছে পথে পথে যানজটে। মঙ্গলবার বিকেলের দিকে বৃষ্টি শুরু হলে টঙ্গী থেকে গাজীপুর চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন স্থানে যানজটের সৃষ্টি হয়। রাত আটটা পর্যন্ত যানজট লেগে ছিল। চান্দনা চৌরাস্তা থেকে পূর্ব দিকে পল্লী বিদ্যুৎ পর্যন্ত, ভোগড়া বাইপাস মোড় থেকে কড্ডা ব্রিজ পর্যন্ত এবং সালনা থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত যানজট লেগেই ছিল।

ঢাকা–টাঙ্গাইল মহাসড়কে দূরপাল্লার যানবাহন না চললেও ট্রাক, মাইক্রোবাস, পিকআপ ও ব্যক্তিগত গাড়ির ভিড় ছিল অতিরিক্ত। তাতেই গাদাগাদি করে উত্তরবঙ্গের দিকে ছুটছে মানুষ। মির্জাপুর ট্রাফিক পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মোস্তাক আহমেদ বলেন, টাঙ্গাইলের লোকাল বাসগুলো চলছে। মোটরসাইকেল রয়েছে প্রচুর। তাতেই লোকজন গন্তব্যে যাচ্ছে।

ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে যানবাহনের চাপ ছিল অনেক। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বৃষ্টির কারণে দুর্ভোগে পড়তে হয় ট্রাকের যাত্রীদের। বৃষ্টি ভিজে তাদের যেতে দেখা যায় গন্তব্যে।

রাজধানীতে একটি ভবনে নির্মাণশ্রমিকের কাজ করেন মিজানুর রহমান (২৭)। বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। সকাল ৮টায় রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে বেরিয়ে তিনি বেলা ১১টার দিকে পৌঁছান ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল মোড়ে রায়নগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়ে। সেখানে দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কোনো বাসে উঠতে পারেননি। ট্রাকে ওঠার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। এরই মধ্যে বৃষ্টি শুরু হলে আশ্রয় নেন সড়কের পাশের একটি পরিত্যক্ত টিকিট কাউন্টারে। মিজানুর বলেন, ‘বড়লোকেরা নিজেগো গাড়িতে কইরা বাড়ি যায়। আমরা রাস্তায় বেইজ্জত হই। সরকারের দরকার আছিল, আমাগো মতো গরিব লোকগো বাড়ি যাইতে দিয়া বড় লোকগো আটকাই দেয়া। শহরে আমাগো থাকার জায়গা নাই। বড় লোকগো আছে।’

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দির শহীদনগর থেকে পুটিয়া পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয় গতকাল ভোরেই। এতে ওই পথে যাওয়া লোকজনকে ভোগান্তি পোহাতে হয়।