পরিবারসহ সাংসদ পাপুলের বিরুদ্ধে সিআইডির মামলা

সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম (পাপুল)
ছবি: সংগৃহীত

সাংসদ কাজী শহিদুল ইসলাম ওরফে পাপুল মানব পাচার করে প্রত্যেকের কাছ থেকে পাঁচ-সাত লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিতেন। গত চার বছরে তিনি ও তাঁর সহযোগীরা দুই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে  কুয়েতে মানব পাচার করে সোয়া ৩৮ কোটি টাকা আয় এবং পাচার করেছেন। এই অভিযোগে সাংসদ পাপুলসহ ছয়জন এবং তাঁর স্বজনদের দুই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সহকারী পুলিশ সুপার আলী আমিন হোসেন বাদী হয়ে পল্টন থানায় এই মামলা করেন। মামলা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক।

এজাহারভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন সাংসদ পাপুলের মেয়ে ওয়াফা ইসলাম, ভাই কাজী বদরুল আলম, শ্যালিকা জেসমিন প্রধান, ব্যক্তিগত কর্মচারী মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান, জব ব্যাংক ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপক ব্যবস্থা গোলাম মোস্তফা। এ ছাড়া জব ব্যাংক ইন্টারন্যাশনাল (মালিক বদরুল আলম) এবং জে ডব্লিউ লীলাবলী প্রতিষ্ঠানকেও (মালিক জেসমিন প্রধান) আসামির তালিকায় রাখা হয়েছে।

গত ৬ জুন রাতে কুয়েত সিটির বাসা থেকে দেশটির গোয়েন্দারা শহিদ ইসলামকে গ্রেপ্তার করেন। পরে তাঁর বিরুদ্ধে মানব ও মুদ্রা পাচারের অভিযোগ আনা হয়। এ ছাড়া তাঁর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে তল্লাশি চালিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও প্রমাণ সংগ্রহ করে কুয়েতের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গত ১৭ সেপ্টেম্বর মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হয়। আগামী ২৮ জানুয়ারি রায় ঘোষণার দিন ধার্য রয়েছে।

মামলায় বলা হয়, সাংসদ পাপুল সংঘবদ্ধভাবে অন্যান্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় মানব পাচারের মাধ্যমে প্রচুর অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। এই অপরাধলব্ধ আয় জ্ঞাতসারে অর্জন, ভোগ, অন্যান্য স্থাবর-অস্থাবর সম্পদে রূপান্তর করা মানি লন্ডারিং আইনের ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

কুয়েতে অবৈধ মুদ্রা ও মানব পাচারের অভিযোগে সাংসদ পাপুলের প্রতিষ্ঠান মারাফিয়া কুয়াতিয়াকে অবৈধ ঘোষণা করে সে দেশ থেকে পাচার হওয়া ১০ জনকে গত জুনে দেশে পাঠানো হয়। তাঁরা দেশে ফিরে সিআইডিকে জানান, সাংসদ পাপুলের কর্মচারী সাদিকুর ২০১৬ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত লোকজন সংগ্রহ করে কুয়েতে নেওয়ার জন্য তাঁদের প্রত্যেকের কাছ থেকে মগবাজারে অবস্থিত জব ব্যাংক ইন্টারন্যাশনালে পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা করে জমা নেন এবং কারও কাছ থেকে টাকাও গ্রহণ করেন। এজাহারভুক্ত অন্য আসামিরা তাঁদের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব থেকে অবৈধ লেনদেন করেছেন।

গত জুনে জব ব্যাংকের ব্যবস্থাপক গোলাম মোস্তফাকে কুয়েত থেকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তিনি সাংসদ পাপুলের ভাই বদরুল আলমের নির্দেশনায় প্রত্যেকের কাছ থেকে পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা নিয়ে কুয়েতে মানব পাচার করার কথা স্বীকার করেন।

চলতি বছরের ১১ নভেম্বর মানব পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে কুয়েতে গ্রেপ্তার লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাংসদ কাজী শহিদুল ইসলাম পাপুল ও তাঁর স্ত্রী সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ সেলিনা ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় তাঁদের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৩১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ১৪৮ কোটি টাকার অর্থ পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।