পরিবারের আশা, তাহমিদ ফিরবেন

বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান এফ-৭ সাগরে বিধ্বস্ত হওয়ার তিন দিন পার হলো। এখনো খোঁজ মেলেনি নিখোঁজ পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট রুম্মান তাহমিদের। অপেক্ষার প্রহর গুনছে পরিবার। তাদের আশা, তাহমিদ ফিরবেন।
তাহমিদের মামা শাহাদত তাহের বলেন, ‘আমাদের ধারণা, রুম্মান এমন কোনো জায়গায় আছে যেখান থেকে নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছে না। দুই-তিন মাসের জন্য কিছু মাছ ধরার নৌকা যায় না সাগরে, হয়তো ওগুলোর কোনো একটাতে আছে সে। আমাদের বিশ্বাস, রুম্মান আমাদের মাঝে ফিরে আসবে।’
গত সোমবার চট্টগ্রামের জহুরুল হক ঘাঁটি থেকে সকালে যুদ্ধবিমানটি নিয়ে আকাশে ওড়েন পাইলট তাহমিদ রুম্মান। বেলা ১১টা ১৪ মিনিটে নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে এর সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে এটি সাগরে বিধ্বস্ত হয়। সোমবার বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর থেকে নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী ও কোস্টগার্ড সাগরে তল্লাশি অভিযান শুরু করে। কিন্তু সোমবার সাগর থেকে ভাঙা দুটি ডানা উদ্ধার করা ছাড়া আর কিছুর সন্ধান মেলেনি।
তাহমিদের মামা আরও বলেন, বিমানবাহিনীর কর্মকর্তারা তাদের জানিয়েছেন যে সাগরে তল্লাশি অভিযান এখনো চলছে। তবে সাগর উত্তাল থাকায় অভিযানে সমস্যা হচ্ছে। এ ছাড়া সাগরের পানি অনেক ঘোলা। ডুবুরিরা সাগরে নেমেও কিছু দেখতে পায়নি। তিনি বলেন, ‘এখনো ককপিট খুঁজে না পাওয়ায় কর্মকর্তারাও কিছু বলতে পারছেন না রুম্মান সম্পর্কে। তবে আমাদের বিশ্বাস, রুম্মান ভালো আছে, সুস্থ আছে।’
দুর্ঘটনার পর দিন থেকে নিখোঁজ পাইলটের পুরো পরিবার অপেক্ষা করছে চট্টগ্রামের জহুরুল হক ঘাঁটিতে। সেখানে তাহমিদের বাবা-মা, ভাইবোন, স্বজনের সঙ্গে আছেন এই মামাও। তাহমিদের ছোট বোন লামিয়া সামিন এবার এসএসসি পাস করেছে। বিমান বিধ্বস্তের পরদিন মঙ্গলবার বড় ভাইকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেয় সে। সেখানে লামিয়া লিখেছে, ‘ওই দিন ফোনে অভিমানের সঙ্গে বলছিলা যে, “ভাইয়া ফোন না দিলে, খোঁজ না নিলে তো ভাইয়ার খোঁজও নিস না। ওই দুই ভাইকে পেয়ে আমাকে ভুলে গেছিস।” কত অভিমানের সাথে বলছিলা। তোমাকে ভুলি নাইরে ভাই। তুমি ভোলার মতো মানুষ না। ওই দিন বলছিলা যে খোঁজ কেন নেই না। আর আজকে এত মানুষ, এত জন তোমাকে খুঁজতেছে, আর তুমি অভিমান করে লুকায় আছ। কই খোঁজ নিচ্ছিতো, কিন্তু তুমি খোঁজ কেন দিচ্ছ না।’ অন্য আরেকটি স্ট্যাটাসে লামিয়া লেখে, ‘তুমি যেখানে থাক আল্লাহ তোমাকে ভালো রাখবে, সুস্থ রাখবে। বিশ্বাস আছে আল্লাহর ওপর।’
কুমিল্লা ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ২০০৬ সালে এসএসসি এবং নটরডেম কলেজ থেকে ২০০৮ সালে এইচএসসি পাস করে বিমানবাহিনীতে যোগ দেন তাহমিদ। চার ভাইবোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে সব সময় সংসারের সব কাজে দায়িত্ব পালন করেছেন। সব কিছুতে ভাইবোনকে আগলে রেখেছেন। তাই ভাইয়ের ওপর আস্থা আছে ছোট ভাই আদনান তৌফিকের।
আদনান বললেন, ‘এখানে যাঁরা আছেন, বিমান বাহিনীর কর্মকর্তা, ভাইয়ার সিনিয়র, জুনিয়র সবারই বিশ্বাস, সবাই বলছে ভাইয়া ফিরে আসবে। অন্য কেউ হলে হয়তো আস্থা থাকত না। কিন্তু এটা ভাইয়া বলেই বিশ্বাস করছি, উনি আমদের মাঝে ফিরে আসবেন ইনশা আল্লাহ।’