পরীক্ষা শেষে বাবার লাশ নিয়ে ফিরলেন তিন্নি

ছবিটি প্রতীকী
ছবিটি প্রতীকী

মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে—সেই স্বপ্ন দেখছিলেন বাবা মৃণাল দাশ। তাই ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে যাওয়া মেয়ের সঙ্গে নিজেও গিয়েছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরীক্ষা শেষে নগরে ফিরতে মেয়েকে নিয়ে উঠেছিলেন শাটল ট্রেনে। কিন্তু সেখানেই আচমকা পড়ে যান তিনি। একটু পরে মেয়ের সামনেই নিথর-নিস্তব্ধ হয়ে পড়েন বাবা। হাসিমুখে ফেরার বদলে বাবার লাশ নিয়ে ফিরতে হলো তিন্নি দাশকে।

মর্মান্তিক এই ঘটনা ঘটেছে গতকাল বুধবার দুপুরে। হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃণাল দাশের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। এমন মৃত্যু কাঁদিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থী ও ভর্তি-ইচ্ছুক পরীক্ষার্থী ও তাঁদের অভিভাবকদের। অনেকে ফেসবুকে তাঁদের শোকের কথা জানিয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ‘সি’ ইউনিটের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন তিন্নি। পরীক্ষা শেষে বেলা দেড়টার চট্টগ্রাম নগরগামী শাটল ট্রেনে উঠছিলেন বাবা-মেয়ে। শাটলে আগে থেকেই পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকের ভিড় থাকায় স্বাভাবিকভাবে বসার জায়গা ছিল না। কোনোভাবে একটি সিট পেয়েছিলেন তিন্নি। পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন বাবা মৃণাল দাশ। এর একটু পরেই গরমের কারণে অসুস্থতার কথা অন্যদের জানান মৃণাল। এরপর তাঁকে বসতে দেওয়া হয়। কিন্তু এর মধ্যেই লুটিয়ে পড়েন তিনি। পরে শিক্ষার্থীরা তাঁকে দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যান। তবে শাটল ট্রেনেই মৃণাল দাশের মৃত্যু হয় বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু তৈয়ব। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, খুবই মর্মান্তিক একটি ঘটনা। হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

মৃণাল দাশের বাড়ি সাতকানিয়ার আমিলাইশ গ্রামে। তবে পরিবার নিয়ে তিনি নগরের এনায়েতবাজারের গোয়ালপাড়া এলাকায় বাস করতেন। গতকাল সন্ধ্যায় নগরের বলুয়ারদীঘিরপাড়ে শ্মশানে দাহ করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া সাতকানিয়ার শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘সাতকানিয়া–লোহাগাড়া স্টুডেন্ট ফোরামে’–এর সভাপতি জহিরুল ইসলাম বলেন, পরিবারের তিন ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন তিন্নি। তাই তাঁকে নিয়ে বেশি স্বপ্ন দেখছিলেন বাবা মৃণাল দাশ। এ জন্য মেয়েকে উৎসাহিত করতে নিজেও ক্যাম্পাসে আসেন। মেয়ে হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বেন। কিন্তু বাবার সেটা আর দেখা হলো না। এমন ঘটনা মানতে পারছি না। আকস্মিক বাবাকে হারিয়ে বাক্‌রুদ্ধ হয়ে পড়েছেন তিন্নি।’

তাঁর বড় ভাই সানি দাশ প্রথম আলোকে বলেন, বাবাকে হারিয়ে তাঁরা বাক্‌রুদ্ধ। তাঁর বোন কারও সঙ্গে কোনো কথা বলছেন না।