পর্যটক টানতে ধরে রাখতে হবে নৈসর্গিকতা

সাইফুল ইসলাম

হালতি বিল দেশের সর্ববৃহৎ বিলাঞ্চল চলনবিলের একটা অংশ। এর সৌন্দর্যও অতুলনীয়। বিলটিতে একদিকে আছে দেশীয় প্রজাতির মাছ, অন্যদিকে আছে নানা প্রজাতির পাখির উপস্থিতি। কিন্তু মৎস্য ও পাখি শিকারিদের অবাধ বিচরণ, যত্রতত্র পুকুর খনন ও ফসলে কীটনাশক প্রয়োগের ফলে হালতি বিলের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। তাই হালতি বিলের সৌন্দর্য রক্ষা করতে হলে এখনই বিজ্ঞানভিত্তিক প্রকল্প গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করা দরকার।

হালতি বিলে একসময় ঝাঁকে ঝাঁকে হালতি পাখি বসতো। সেই পাখির নামের সঙ্গে মিল রেখে এই বিলের নামকরণ করা হয়। দুঃখের বিষয়, হালতি বিলে এখন আর হালতি পাখি চোখে পড়ে না। পাখি শিকারিদের কারণে হালতিসহ স্থানীয়ভাবে পরিচিত কিছু পাখির উপস্থিতি একেবারে কমে গেছে।

পাখি শিকার বন্ধে প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় লোকজনকে সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে বর্ষা শেষে যখন পানি কমতে শুরু করে তখন পাখির নিরাপদ অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। পাখির আশ্রয়ের জন্য বিল ঘেঁষে বেশি করে বৃক্ষ রোপণ করতে হবে। পাখি শিকারে বন্দুক, ইয়ারগান ও আদিবাসীদের তীর ধনুক বন্ধে আইন প্রয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

হালতি বিলের মাঝে রয়েছে একগুচ্ছ গ্রাম। গ্রামবাসীর যাতায়াতের সুবিধার জন্য ডুবন্ত সড়ক তৈরি করা হয়েছে। এই সড়ক পর্যটকদের আকৃষ্ট করলেও পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে জীববৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে। পরিবেশের ওপর এমন অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে।

বিলের তলদেশে অধিক হারে পলি পড়ছে। ফলে বিলের আয়তন ও গভীরতা কমে যাচ্ছে। মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী বসবাসের জায়গা হারাচ্ছে। সারা বছর পানি না থাকায় মা মাছ নিধন হচ্ছে। এতে প্রাকৃতিকভাবে মৎস্য প্রজনন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সরকারিভাবে মা মাছ সংরক্ষণে হালতি বিলে কিছু ট্যাংক তৈরি করা হলেও তা পর্যাপ্ত না। এই বিলের দেশীয় ৩৯ প্রজাতির মাছের বেশ কয়েকটি ইতিমধ্যে বিলুপ্ত হয়েছে। বাকিগুলো বাঁচাতে হলে বিলের উল্লেখযোগ্য অংশে সারা বছর পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা নিতে হবে।


সাইফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক, চলনবিল জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটি