পর্যটনে পথ দেখাচ্ছে অনলাইন গ্রুপ

বাংলাদেশে এখন পর্যটন মৌসুমফাইল ছবি

‘মেয়েদের একা বেড়ানোর জন্য বাংলাদেশ এখনো প্রস্তুত নয়। তাই গ্রুপ করে ট্যুর দেওয়া হয়। প্রতিটি গ্রুপ ট্যুরে ৩৬ জন মেয়ে থাকে। তবু কেউ কেউ হোটেলে কক্ষ ভাড়া দিতে চায় না। ৩৬ জন নারীর গ্রুপেও অন্তত ১ জন ছেলে সদস্য খোঁজে তারা।’ এভাবেই নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানালেন সাকিয়া হক। পেশায় চিকিৎসক এ নারী আরেক চিকিৎসক বন্ধুকে নিয়ে গড়ে তুলেছেন ‘ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশ—ভ্রমণ কন্যা’ নামে ফেসবুক গ্রুপ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এ গ্রুপে প্রায় ৫৫ হাজার নারী সদস্য আছেন। গত ৩ বছরে ৮৬টি ট্যুর পরিচালনা করেছে ‘ভ্রমণ কন্যা’। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে নয়, শুধু খরচের ভিত্তিতে ট্যুর পরিচালনা করে তারা।

আলাদা করে নারীদের বেড়াতে নিয়ে যেতে এমন বেশ কয়েকটি গ্রুপ কাজ করছে দেশে। এদের কেউ কেউ বাণিজ্যিকভাবে ট্যুর চালাচ্ছে। আর এর বাইরে নারী-পুরুষ সম্মিলিতভাবে ট্যুর চালানোর অনলাইন গ্রুপ আছে প্রায় ৫০০। এদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্রাভেলার্স অব বাংলাদেশ (টিওবি) গ্রুপটি চলছে স্বেচ্ছাশ্রমে। তারা নতুন নতুন জায়গা খুঁজে বের করছে। দেশের মধ্যে ভ্রমণে উৎসাহী করছে। আর পর্যটকদের পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল করে তুলছে। দেশের পর্যটন খাতে পথ দেখাচ্ছেন এসব গ্রুপের তরুণেরা।

একাধিক ট্যুর গ্রুপের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের পর্যটনের বিকাশে গত এক দশকে এগিয়ে এসেছেন দেশের তরুণেরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের নেটওয়ার্ক কাজে লাগিয়ে অভ্যন্তরীণ পর্যটনের জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে চলেছেন তাঁরা। নতুন নতুন গন্তব্য তৈরি করে চলেছেন নিয়মিত। করোনাকালে গতানুগতিক ট্যুর অপারেটররা যখন লোকসান গুনছে, তখন অনলাইনভিত্তিক এসব গ্রুপ মোটামুটি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। করোনার মধ্যে কয়েক মাস বন্ধ থাকলেও পর্যটন স্পট খুলে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব গ্রুপের ব্যস্ততা বেড়ে গেছে।

অনলাইন ট্রাভেলার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ওটাব) ও বাংলাদেশ ই ট্রাভেলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বেটা) নামে দুটি সংগঠন গড়ে উঠেছে। ওটাবের সদস্যসংখ্যা ৭৫, আর বেটায় সদস্য আছেন ১৪০ জন। সংগঠনের নেতারা বলছেন, এদের অনেকে বিদেশেও ট্যুর পরিচালনা করে। ইতিমধ্যে কোনো কোনোটা নিজস্ব স্থাপনা রিসোর্ট, রেস্তোরাঁ, প্রমোদতরি গড়ে তুলেছে।

২০১৪ থেকে ট্যুর গ্রুপ বাংলাদেশ (টিজিবি) নামে ফেসবুকে গ্রুপ খুলে ব্যবসা করছেন তিন বন্ধু। এ পর্যন্ত ৯০০টি ট্রিপে ১১ হাজার পর্যটককে সেবা দিয়েছেন তাঁরা। প্রায় ছয় লাখ সদস্য আছেন তাঁদের ফেসবুক গ্রুপে। এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমরানুল আলম বলেন, পর্যটকদের সুবিধার্থে কয়েকটি এলাকায় রিসোর্ট, গাড়ি ও ভ্রমণতরি বানিয়েছে টিজিবি।

অভ্যন্তরীণ পর্যটন ও কমিউনিটি বেজড পর্যটনে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সব সুযোগ-সুবিধা দিয়ে গ্রামে পর্যটক নিয়ে যেতে হবে। একজন পর্যটক ১০ জনের কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারেন।
জাবেদ আহমেদ, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা

তিন বছর ধরে ট্যুর পরিচালনা করছে ৩০ হাজার সদস্যের গ্রুপ হিট দ্য ট্রেইল। মূলত পার্বত্য এলাকার বিভিন্ন স্পটে নিয়ে যায় তারা। এ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা আতাউল ইসলাম বলেন, ‘ছাড়া পেয়ে সবাই এখন ঘুরতে যেতে চাচ্ছেন। একসঙ্গে চারটি ট্রিপ দিচ্ছি। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে পর্যটকদের চাপ বেশি।’ বৃত্ত ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা মাযহারুল ইসলাম বলেন, গতানুগতিক স্পটে নয়, বরং অনেক দুর্গম এলাকায় নিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। তাই এসব গ্রুপে পর্যটক বাড়ছে। আর করোনায় কয়েক মাস বন্দী থাকার পর এখন বেড়ানোর জন্য ছুটছেন পর্যটকেরা।

আগামী এক বছর আন্তর্জাতিক পর্যটনের কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপালে কমিউনিটি বেজড ট্যুরিজম গড়ে উঠলেও দেশে তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না। অনলাইন গ্রুপগুলো বলছে, তারা বিভিন্ন এলাকায় এটি করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাবেদ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, অভ্যন্তরীণ পর্যটন ও কমিউনিটি বেজড পর্যটনে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সব সুযোগ-সুবিধা দিয়ে গ্রামে পর্যটক নিয়ে যেতে হবে। একজন পর্যটক ১০ জনের কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারেন।