পলাতক আসামি অভির রিট মামলার বিচারকাজ বন্ধ

সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নি
সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নি

বিজ্ঞাপনের মডেল সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নি হত্যা মামলার বিচার প্রায় ছয় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশে। এর মধ্যে তিন বছর স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়ানোর আদেশের কোনো কপি বিচারিক আদালতে জমা দেওয়া হয়নি।
ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রধান সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) খোন্দকার আবদুল মান্নানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি অ্যাটর্নি জেনারেল বরাবর চিঠি লিখবেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম প্রথম আলোকে বলেন, স্থগিতাদেশের কারণে মামলাটির বিচার যে এত দিন ধরে বন্ধ রয়েছে, তা পিপি অফিস থেকে তাঁকে জানানো হয়নি। যত দ্রুত সম্ভব তিনি এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
২০০২ সালের ১০ নভেম্বর বুড়িগঙ্গায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর নিচে তিন্নির লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় কেরানীগঞ্জ থানা-পুলিশ অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে মামলা করে। তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ৮ নভেম্বর সাবেক সাংসদ গোলাম ফারুক অভির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামি অভি কানাডায় পলাতক রয়েছেন। ২০১০ সালের ১৪ জুলাই আসামি অভির বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত। হত্যা মামলায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হওয়ায় আইন অনুযায়ী অভির পক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রীয় খরচে শাহ ইলিয়াস রতন নামের এক আইনজীবী নিযুক্ত করেন আদালত।
শাহ ইলিয়াস রতন প্রথম আলোকে বলেন, ২০০৬ সালের ৩ নভেম্বর অভির পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তাই তিনি পাসপোর্টের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেন কানাডার অটোয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনে। কিন্তু বহুবার লিখিত তাগিদ দেওয়ার পরও তাঁর পাসপোর্ট ফেরত দেওয়া হয়নি। তিনি বিচারের সম্মুখীন হতে চান। কিন্তু তাঁর পাসপোর্ট দিচ্ছে না বাংলাদেশ হাইকমিশন। অভির পাসপোর্ট ইস্যু করার জন্য ২০১০ সালে তাঁর পক্ষে রিট করা হয়। একাধিকবার শুনানি শেষে মামলার কার্যক্রম স্থগিত রাখার আদেশ দেন হাইকোর্ট। ওই রিটের সর্বশেষ শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল কে এম মাসুদ প্রথম আলোকে বলেন, তিন্নি হত্যা মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া স্থগিতাদেশ বাতিল চেয়ে আপিল করেনি রাষ্ট্রপক্ষ।
মামলার নথিতে দেখা গেছে, পলাতক আসামি অভি কানাডা থেকে তাঁর আইনজীবী বরাবর এক চিঠি লেখেন। এর কপি দেওয়া হয় ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রধান সরকারি কৌঁসুলিকেও। তাতে অভি দাবি করেন, ১৯৯৬ সালে বরিশাল-২ আসন থেকে তিনি সাংসদ নির্বাচিত হন। তিনি আইনের শাসনে বিশ্বাসী। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তিন্নি হত্যা মামলায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। মামলার এজাহারে তাঁর নাম ছিল না। বিশ্বস্ত সূত্রে তিনি জানতে পারেন, তাঁকে গ্রেপ্তার করে নির্যাতন করা হতে পারে। এমন আশঙ্কা থেকে দেশ ত্যাগ করে তিনি কানাডায় যান।
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, অভির প্ররোচনায় বিজ্ঞাপনের মডেল তিন্নি তাঁর স্বামীকে তালাক দেন। কিন্তু এরপর অভি তিন্নিকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানালে তিন্নি এসব তথ্য মিডিয়ায় ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দেন। ক্ষিপ্ত হয়ে অভি ২০০২ সালের ১০ নভেম্বর সন্ধ্যার পর রাতের যে কোনো সময় তিন্নিকে হত্যা করে লাশ গুম করার জন্য গাড়িতে করে কেরানীগঞ্জ থানাধীন ১ নম্বর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর কাছে ফেলে রাখেন।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনাকারী ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, ২০১০ সালের ১০ জুলাই হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের কপি আদালতে জমা দেন অভির আইনজীবী। কিন্তু ২০১৩ সালের ৩১ জুলাইয়ের পর থেকে স্থগিতাদেশ বাড়ানোর কোনো আদেশ জমা দেওয়া হয়নি।