পশ্চিমবঙ্গ-আসামের নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান ঘটেছে

শমসের মবিন চৌধুরী

ভারতে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক যে ঘটনাই ঘটুক না কেন, বাংলাদেশের ওপর এর প্রভাব পড়ে। নিকটতম প্রতিবেশী ও ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে এটা ঘটে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক শক্তির উল্লম্ফন ঘটেছে, যা উদ্বেগ ও শঙ্কার।

পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের নির্বাচনের ফল ও বাংলাদেশে প্রভাববিষয়ক এক ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় আজ রোববার একাধিক বক্তা এসব কথা বলেছেন। স্টাডি গ্রুপ অন রিজওনাল অ্যাফেয়ার্স ওই আলোচনার আয়োজন করে।

ভারতের রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান রোধ এবং প্রকৃতপক্ষে রাজনীতিতে অসাম্প্রদায়িক বাতাবরণ, অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ও মানবিক উপমহাদেশ চাইলে নতুন করে সবাই মিলে ভাবার সময় এসেছে বলে মত উঠে আসে ওই আলোচনায়।
গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেস। দলটি পেয়েছে রেকর্ড ২১৩ আসন। বিজেপি ৭৭ আসন পেয়ে প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসছে; যা ওই রাজ্যে বিজেপির সেরা সাফল্য। এদিকে আসামে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসছে বিজেপি।

আনু মুহাম্মদ

সাবেক রাষ্ট্রদূত ও পররাষ্ট্রসচিব সমশের মবিন চৌধুরী বলেন, ভারতের রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িকতা গত ১০-১৫ বছর ধরে ক্রমাগত বেড়েই চলছে। এবার এটি আরও বেশি। তবে পশ্চিমবঙ্গে এসে তারা ধাক্কা খেয়েছে। বিজেপি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে পশ্চিমবঙ্গে দাঁড়িয়েছে ও আসামে ঘাঁটি গেড়ে রেখেছে। বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অভিনন্দন জানিয়েছেন মমতাকে। কেউ কেউ বলছেন, মমতা অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক শক্তি। আসামের নির্বাচনে ফলাফলে কোনো অভিনন্দন বার্তা পাঠাননি। এর মধ্যে বার্তা রয়েছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ভারতে যে ঘটনাই ঘটুক—সেটি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বা সাংস্কৃতিক প্রতিবেশী ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হওয়ার কারণে এ দেশের রাজনীতি, অর্থনীতিসহ সবকিছুর ওপর এর প্রভাব পড়ে। তিনি বলেন, ‘ভারতে যদি দেখি অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিকাশ হচ্ছে, বাংলাদেশেও তা অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক বিকাশে সহায়তা করে। অযোধ্যায় বাবরী মসজিদ ভাঙা থেকে যদি খেয়াল করি, অনেকগুলো ঘটনা দেখব যে ভারতে যতই বিজেপি চাঙা হচ্ছে, শক্তি বৃদ্ধি হচ্ছে, বাংলাদেশেও সাম্প্রদায়িক শক্তি বৃদ্ধি হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচনে জয়ের জন্য বিজেপি বেপরোয়া ছিল।

রানা দাশগুপ্ত

বাংলাদেশে নরেন্দ্র মোদির সফরও ছিল নির্বাচনকে কেন্দ্র করে।’
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ বা আসাম নিয়ে ভাবলে হবে না। উপমহাদেশ নিয়ে ভাবা দরকার। শুধু আসাম বা পশ্চিমবঙ্গ নয়, ভারতের রাজনীতির মধ্যেও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির উত্থান হচ্ছে। প্রকৃত পক্ষে রাজনীতিতে অসাম্প্রদায়িক বাতাবরণ, অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ও মানবিক উপমহাদেশ চাইলে নতুন করে সবাইকে ভাবতে হবে। পাশাপাশি নিজেদের দিকেও তাকাতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আমেনা মোহসিন বলেন, বিজেপি রাজনীতি ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের রাজনীতি অনেকটা মনে করিয়ে দেয়। ১৯৪৭ সালে যে রাজনীতি দেখেছি, তার পুনরাবৃত্তি লক্ষ করা যাচ্ছে।

আমেনা মোহসিন

ওখানে নির্বাচন শুরু হচ্ছে আর নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশে এসে মতুয়া সম্প্রদায়ের মন্দিরে গেলেন। তিনি বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক রাজনীতির লক্ষণ দেখছি। নিজের দেশের অ্যাজেন্ডা আরেক দেশে নিয়ে এলেন—এটি ঠিক নয়। ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার হলেও এর প্রভাব বাংলাদেশ পড়ে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী অভিনন্দন জানিয়ে যে চিঠি দিয়েছেন, তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।’

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন স্টাডি গ্রুপ অন রিজওনাল অ্যাফেয়ার্সের সমন্বয়কারী আমীর খসরু। তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরাট উল্লম্ফন লক্ষ্য করছি। বলা হচ্ছে, সাম্প্রদায়িকতা রুখে দেওয়া হয়েছে নির্বাচনে। কিন্তু বিজেপি সরকার গঠন করতে না পারলেও তাদের ভোট ও আসনসংখ্যা বেড়েছে। আর আসামে নির্বাচনে বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে।