পাঁচটি কাঁচা সড়কে মানুষের ভোগান্তি

মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বালিদিয়া ইউনিয়নের পাঁচটি কাঁচা সড়কে দীর্ঘদিনেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। গ্রামীণ অবকাঠামো ও সড়ক উন্নয়নের আওতায় না আসায় এসব সড়কের প্রায় ১৬ কিলোমিটার কাঁচা রয়ে গেছে। এতে ইউনিয়নের ১৭টি গ্রামের অন্তত ১০ হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, গ্রামের এসব গুরুত্বপূর্ণ কাঁচা সড়ক বর্ষাকাল এলেই চাষ দেওয়া ধানখেতের মতো হয়ে যায়। থিকথিকে কাদা। কেউ অসুস্থ হলে কোলে করে এই কাদাপথ পার হতে হয়। কৃষকেরা কৃষিপণ্য বাজারে নিতে পারেন না। এ সময় স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে যায়। বিকল্প না থাকায় গ্রামের বাসিন্দাদের নিয়মিত এই কাদা মাড়িয়ে যাতায়াত করতে হয়। বছরের পর বছর ধরে চলাচলের অনুপযোগী সড়কগুলো গ্রামীণ সড়ক উন্নয়নের আওতায় আসছে না।

বেহাল সড়কগুলো হচ্ছে বড়রিয়া বাবু মোল্লার বাড়ির সেতু থেকে মৌশা গুচ্ছগ্রাম হয়ে নিখড়হাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (তিন কিলোমিটার), বড়রিয়া নতুন বাজার থেকে মৌশা আদর্শ গ্রাম হয়ে নিখড়হাটা হাফেজিয়া মাদ্রাসার পাশ দিয়ে ছোট কলমধারী (চার কিলোমিটার), বালিদিয়া শিকাদার মোড় থেকে নিখড়হাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে গোলাবাড়ি মৌশা হয়ে কানুটিয়া বাজার (পাঁচ কিলোমিটার), বালিদিয়া ইউপির চেয়ারম্যান পান্নু মোল্লার বাড়ির সামনে থেকে ঘোষপুর মোড় হয়ে মৌশা মোল্লাপাড়া পর্যন্ত (দুই কিলোমিটার) এবং বড়রিয়া মেলা এলাকা থেকে নিখড়হাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (দুই কিলোমিটার) সড়ক।

গ্রামীণ এই পাঁচ সড়কপথে ধোয়াইল, বড়রিয়া, নিখোড়হাটা, বালিদিয়া, শ্রীপুর, ছোট কলমধারী, মঙ্গলহাটা, মৌলী, চাবিনগর, গোপিনাথপুর, কাওড়া, চাপাতলা, কানুটিয়া, মাইজপাড়া, ঘোষপুর, আউনাড়া, যশপুরসহ আশপাশের ১০ হাজারের বেশি মানুষ চলাচল করে।

মহম্মদপুর উপজেলা সদর থেকে পাকা সড়ক ধরে তিন কিলোমিটারের মতো গেলেই বালিদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন। প্রধান সড়ক থেকে গ্রামের ভেতর যাওয়ার অধিকাংশ সড়কই কাঁচা। গত শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, মৌশা ও নিখোড়হাটা গ্রামের সড়কপথে কাদা মাড়িয়ে জুতা হাতে কয়েকজন পথচারী যাচ্ছেন। মৌশা গ্রামের বাহারুল ইসলাম ও বাদশা সিকদার প্রাণপণ চেষ্টায় তাঁদের ভ্যান টেনে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। ওই সড়কে বাইসাইকেলে করে যাওয়ার সময় নিখোড়হাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে কাদায় পড়ে যান এক আরোহী। মৌশা গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা দিনমজুর মঞ্জুর হোসেন বলেন, ‘রাস্তার যা অবস্থা, বড় কষ্টে আছি। কায়দা থাকলি এই গ্রাম ছাড়ে চলে যাতাম।’

মৌশা গুচ্ছগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলী আকবর বলেন, বর্ষায় ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে আসতে খুব কষ্ট হয়। অনেকে স্কুলে আসতে গিয়ে রাস্তায় পড়ে শরীরে কাদা মেখে বাড়িতে ফিরে যায়।

ধোয়াইল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক অলিয়ার রহমান বলেন, ‘ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তাগুলো আমার দাদার আমলের। অথচ গ্রামীণ সড়ক উন্নয়নের আওতায় আসেনি।’

মাইজপাড়া গ্রামের গৃহবধূ বিলকিস বলেন, ‘আমরা বর্ষকালে ঘরের মধ্যে আটকা পড়ে থাকি। কেউ অসুস্থ হলে কোলে করে দুই মাইল নিয়ে পাকা রাস্তায় উঠতে হয়।’

দুর্ভোগ সম্পর্কে বালিদিয়া ইউপির চেয়ারম্যান পান্নু মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ওই রাস্তাগুলো পাকা করার জন্য স্থানীয় সাংসদকে অনুরোধ করেছি।

মহম্মদপুর উপজেলা প্রকৌশলী বিকাশ চন্দ্র নন্দী বলেন, ‘সড়কগুলো উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবভুক্ত (ডিপিপি) হলে আমরা উন্নয়ন করব। আর যদি তা না হয়ে থাকে, তাহলে স্থানীয় সাংসদের সঙ্গে পরামর্শ করে উন্নয়নের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’