পাখি ধরা

অলংকরণ: আরাফাত করিম

বাস থেকে নেমে কাঁচা রাস্তায় খানিকটুকু হাঁটার পর চারদিকে তাকিয়ে মুহিব বলে, বেশ লাগছে।

লাগবেই তো। শালা, তুই একটা ঘুণপোকা।

তুই শালা শামুকের ডিম।

তুহিনের মনে পড়ে, ছোটবেলায় ও আর নসু নিজেদের এভাবে গালাগাল করত। ওরা কখনো অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করতে পারত না। এখন সাংবাদিকতার কাজে এসে মুহিবের সঙ্গে বন্ধুত্ব হওয়ার পর ও মাঝে মাঝে ছোটবেলা ফিরে পায়। যেন একটা দারুণ খেলা, ঘুণপোকার মতো শৈশব কাটা। কাটতে কাটতে জমে ওঠা কাঠের গুঁড়ির স্তূপের আড়ালে নিজেদের লুকিয়ে রাখা।

ঠান্ডা বাতাস ছুটছে এলোপাতাড়ি। মাথার ওপর বর্ষার আকাশ। ছাই রঙের মেঘ। যেন ওগুলো মুখ তোবড়ানো হাজি বিবির চোখের কটা রঙের তারা, যাকে ওরা একটু আগে দেখেছে পথের ধারে গিমা শাক খুঁটে তুলতে। বুড়িকে দেখে তুহিন চেঁচিয়ে বলে, ‘দেখ, দেখ মানুষের ফসিল।’

আমার তো মনে হচ্ছে, ভিন্ন গ্রহের কেউ।

তুহিন বুড়ির সামনে উবু হয়ে বসে বলে, ‘আপনার নাম কী নানি?’

হাজি বিবি।

হাজি বিবি? কয়বার হজ করেছেন?

বুড়ি মাথা নাড়ে। প্রশান্ত হাসি হেসে বলে, ‘করি নাই। হজে য্যাবার আশা করছিলাম। তাই মানষে নাম দিছে হাজি বিবি। তোমরা কেডা নাতি? শহর থ্যাকা আসছ? ক্যান আসছ? কামডা কী?’

বাব্বা, এত কিছু জানতে চাচ্ছেন!

কই যাবি? দুইডা টেকা দে।

মুহিব পকেট থেকে একটা টাকা বের করে দিয়ে বলে, ‘কী করবেন?’

বিস্তৃত হয়ে যায় দন্তবিহীন কোঁচকানো চামড়ার ভূগোল। বলে, বিড়ি, নাতি, বিড়ি। না টানলে বাঁচি না।

হাজি বিবি খপ করে টাকাটা নিয়ে আঁচলের খুঁটে বেঁধে ধূসর দৃষ্টিতে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। অদ্ভুত লাগে দুজনের। মনে হয়, যে গ্রামটা খোঁজার জন্য ওরা শহর থেকে এসেছে, ওটা এমনই—গিমা শাক তোলা একজন বুড়ির রগ ওঠা হাতের শিরার মতো। ক্ষীণ প্রবাহে রক্ত বয়ে যায়, বেঁচে থাকার নমুনা হিসেবে জেগে থাকে কোটরাগত চোখ।

মুহিব জিজ্ঞেস করে, ‘তরিকুলকে চেনেন নানি?’

চিনুম না ক্যান? কয়দিন আগে পুলিশে অরে বাইন্ধা নিল না?

শুনেছি ঘটনার দিন ও গ্রামে ছিল না।

মিছা কথা। যেই দিন ঘডনা ঘডছে, ওই দিন পোলাডা গেরামেই ছেলো। আমারে কইছিল, নানি তোমারে শহর থাইকা সিগারেট আইনা দিমু। বিড়ি খাওন লাগব না। আমি কইছিলাম, সিগারেট খামু না। বিড়িই ভালা। কড়া। ধুঁয়া বুকের মধ্যে পাক খায়। চোখ বুইজা আসে।

হাজি বুড়ি আরও অনেক কথা বলতে চেয়েছিল ওদের সঙ্গে। ওদের শোনার সময় ছিল না। আজই ওদের ঢাকায় ফিরতে হবে। ওরা হাতিয়ার ধর্ষণ ঘটনার নেপথ্য সূত্র বের করার জন্য এ গাঁয়ে এসেছে।

একসময় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে মুহিব বলে, ‘আমরা যদি প্রমাণ করতে পারি যে হাতিয়ার ধর্ষণ পুলিশেরই অপকর্ম, তাহলে কী হবে রে?’

কী আর, গিমা শাক!

তাহলে যাচ্ছি কেন?

শুঁটকি মাছের গন্ধে।

শালা, তুই একটা ঘুণপোকা।

ভাগ, পেঁয়াজি করিস না। এই সব গালাগালি ল্যাংটা বয়সে ছেড়ে এসেছি।

দুজনে মনের সুখে খিস্তি-খেউর করতে থাকে। দুজনেরই মনে হয়, ঢাকা শহরের দম আটকানো পরিবেশ থেকে ওরা আচমকা যেন ছিটকে পড়েছে। এভাবেই দুজন নদীর পারে এসে দাঁড়ায়। খেয়ানৌকাটা অন্য পাড়ে চলে গেছে। লোক নামছে। পাঁচজন নারী, তিনজন পুরুষ। কোনো শিশু নেই।

দুজনই আবার পরস্পরের দিকে তাকায়। কেন ওরা শিশু খুঁজছে? ওরা বুঝতে পারে, ঢাকার মহানগর হাকিমের আদালত প্রাঙ্গণে পাঁচ বছর বয়সী হাতিয়া ধর্ষিত হওয়ার পর থেকেই ওরা শিশু-সংক্রান্ত বিবেচনায় খানিকটা বিহ্বল হয়ে যায়। একটু আগে যে দলটি খেয়ানৌকা থেকে নেমে গাঁয়ের দিকে এগিয়ে গেল, তাতে শিশু নেই দেখে স্বস্তি বোধ করে ওরা। ওরা জানে, যখন ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে, তখন আদালত প্রাঙ্গণে কর্তব্যরত পুলিশ ছাড়া আর কেউ ছিল না। কিন্তু আসামি হয়েছে ধনুসার গাঁয়ের একজন, যে ওখানে বসে দিনের বেলা কলা বিক্রি করে। রাতে বারান্দায় ঘুমায় আর সাপ্তাহিক ছুটির দিনে গাঁয়ে ফিরে যায়। লোকটাকে ওরা দেখেছে গাঁ থেকে বেঁধে নিয়ে যাওয়ার পর। গালভাঙা বিধ্বস্ত চেহারা, এই গাঁয়ের এবড়োখেবড়ো সড়কের মতো। কেঁদেকেটে চোখ ফুলিয়েছে। দরুদ পড়ার মতো অনবরত আউড়েছে একটিই বাক্য, ওই তারিখে আমি গাঁয়ে ছেলাম। কেউ শোনেনি তার কথা। শুধু মুহিব আর তুহিনের মনে হয়েছে, নিজেদের চামড়া বাঁচাবার জন্য ওকে পুলিশের দরকার। মরণ ছাড়া ওর আর কোনো পথ নেই। তাই ওরা সরেজমিনে বিষয়টি জানতে এসেছে।

খেয়ানৌকা ফিরে আসছে এ পাড়ে। ওপারের ছোট দলটি অনেক দূরে চলে গেছে। তুহিন কনুই দিয়ে মুহিবকে ঠেলা দিয়ে বলে, ‘দেখ, দেখ, ওই দলে কোনো বালিকা নেই।’

মুহিব ঘোঁত করে ওঠে, বালিকারা নদী পার হতে জানে না।

তুহিন হা হা করে হাসে, বালিকারা কি কলা খেতে জানে?

শালা। মুহিব আবার খিস্তি করে।

নৌকা প্রায় ওদের কাছাকাছি চলে এসেছে। ছোট নদী। পাশে দাঁড়ানো একজন বলল, ‘ছোট হলে হবে কী, নদীর স্রোত দেখেন! রাতে মনে হবে যে এইটুকু নদী তো হেঁটেই পার হওয়া যায়। কিন্তু নামলেই...’

কথা শেষ না করে লোকটি জোর করে অদ্ভুত শব্দে হাসতে থাকে।

নামলে কি স্রোত টেনে নিয়ে যাবে? তুহিন জিজ্ঞেস করে।

লোকটি ঘাড় ঘুরিয়ে বলে, হ্যাঁ।

এতে এত হাসির কী হলো?

হাসব না? মনে পড়ল, একবার এক চোরকে ধরে এই স্রোতে ফেলে দিয়েছিলাম।

বাব্বা! আপনি চোরও ধরতে পারেন! কী করেন?

আমি গ্রাম পুলিশ।

এতক্ষণে নৌকা পাড়ে ভিড়েছে। লোকজন ঠেলাঠেলি করে উঠছে। তুহিনের কানের কাছে মুখ নিয়ে মুহিব বলে, পুলিশ আর গ্রাম পুলিশের মধ্যে তফাৎ কী রে?

তফাৎ রাত-দিনের।

কেমন?

এই বেটাদের পেটে ভাত নেই। ঠিকমতো খেতে পায় না।

বুঝেছি। আর ওরা বেতনের টাকার বাইরেও সবচেয়ে বড় পাঙাশ মাছটা কিনতে পারে।

বুঝে ঢোল হয়ে গেছিস। আয়।

বলে তুহিন লাফিয়ে নৌকায় ওঠে। সঙ্গে সঙ্গে নৌকা ছেড়ে দেয় মাঝি। বেশ লাগে দুলে ওঠার ঝাঁকুনি। দুজনই ভেবেছিল, বেশ একটা স্নিগ্ধ বাতাসের আমেজ পাওয়া যাবে, কিন্তু হলো উল্টোটা। নৌকার ওপরে ঘন হয়ে বসার জন্য মানুষের শরীর থেকে ঘামের গন্ধ আসছে। বমি পায় মুহিবের। ভাবে, গ্রাম পুলিশটা বুঝি সাত দিন গোসল করেনি। ওর পিঠে পিঠ লাগিয়ে বসেছে পুলিশটা। ছোট পরিসর। ঠাসাঠাসি অবস্থা। মুহিব দুহাতে নাক চেপে ধরে বসে থাকে। তুহিন অস্ফুট স্বরে গালি দিয়ে বলে, ‘শালা, যেন ভিড়ের মধ্যে ঢুকিসনি কখনো। মনে হচ্ছে ধরে নদীতে আছাড় মারি।’

মুহিব নাক থেকে হাত সরায় না। দূরে তাকিয়ে থাকে। দেখে কোথাও থেকে একটা ধোঁয়ার কুণ্ডলী উড়ছে। তুহিন গ্রাম পুলিশকে বলে, ‘ওখান থেকে ধোঁয়া উঠছে কেন জানেন?’

কাউকে পোড়ানো হচ্ছে।

ওখানে কি শ্মশান আছে?

জানি না।

তবে?

তবে আবার কী? কারও পুড়ছে। আইজকাল কতভাবেই তো মানষে পুড়ে যায়।

গ্রাম পুলিশের কণ্ঠ ঝাঁঝালো হলেও ভঙ্গি নির্বিকার। যেন বলতে চায়, হরহামেশা যা ঘটছে, তা নিয়ে এত প্রশ্ন কেন? মুহিব নিজেও গলায় ঝাঁঝ রেখে বলে, এই গাঁয়ের এই অবস্থা! গাঁয়ের নাম কী?

আমার দাদার মুখে শুনেছিলাম যে অনেক কাল আগে গ্রামটাকে মানুষ একটা ভিন্ন নামে ডাকত। আস্তে আস্তে সেই নাম হারিয়ে অন্য একটা নাম হয়েছে। তারপর এক পয়সাওয়ালা লোক টাকাকড়ি দিয়ে, ওয়াজের মানুষজনকে এনে নিজের নামে গাঁয়ের নামটা বদলে দিয়েছে। এখন এটার নাম বরকতপুর।

‘আপনি তো অনেক কিছু জানেন দেখছি।’ তুহিন কপালে চোখ তুলে বলে।

এ গাঁয়ের ওপর শকুনের দৃষ্টি আছে।

কেমন?

শকুন দুই রকম। ফতোয়াবাজ আর পুলিশ। শহর থেকে পুলিশ এসে গাঁয়ের মানুষ ধরে নিয়ে যায়। নিজেদের চামড়া বাঁচায়।

ওরে বাব্বা!

দুজন বিস্ময়ে তাকায়। গ্রাম পুলিশ ভ্রুক্ষেপ করে না। এতক্ষণে নৌকা ঘাটে ভিড়েছে। সে লাফ দিয়ে নেমে যায়। হনহনিয়ে হাঁটতে থাকে। মুহিব নামতে নামতে তুহিনকে খোঁচা দিয়ে বলে, ‘তুই যে বললি, বেটাদের পেটে ভাত থাকে না। এখন তো দেখছি মগজেও ভাত আছে।’

পেটে নেই বলেই মগজে আছে। কারণ ওটা তো সত্যিকারের ভাত না। চল, ধোঁয়া উড়ছে কেন দেখে আসি।

ওই গ্রাম পুলিশ বেটা কোন দিকে গেল রে?

যেদিকে খুশি যাক না, আমাদের কী দরকার?

দরকার থাকলেও ও আমাদের দরকারে আসবে না। শুনিসনি কীভাবে কথা বলল?

এভাবে কথা বললে ও বেশি দিন টিকতে পারবে না। ওকে মরতে হবে। অপঘাতে মৃত্যু।

মুহিব ঘাড় ঝাঁকিয়ে বলে। তাকিয়ে দেখে লোকটা বাম দিকে অনেকখানি চলে গেছে। ওরা যাবে ডানের পথে। যেতে যেতে ওরা একজনকে জিজ্ঞেস করে, ‘ধোঁয়া উড়ছে কোথায় বলতে পারেন?’

তরিকুলের বাড়ি পুড়ত্যাছে। মোল্লারা পোড়ানোর ফতোয়া দ্যাছে।

কেন?

আকাম করছে।

ও তো ওই দিন গাঁয়ে ছিল।

হ, আমি দেখছি। ছিলই তো।

তাহলে?

লোকটা ঠোঁট ওলটায়। ‘জানি না’ বলে পাশ কাটিয়ে চলে যায়।

ওরা যখন আরও খানিকটা এগিয়ে সেই পোড়া বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়, তখন আগুন প্রায় নিভে এসেছে। তরিকুলের বাবা চোখে অশ্রু নিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। তার কোল ঘেঁষে বসে আছে তরিকুলের শিশু মেয়ে দুটি। দুজনেরই মনে হয়, ওদের দৃষ্টিতে হাজি বিবির দৃষ্টির ধূসরতা। বালিকারা বুড়িয়ে গেছে।

মুহিব বিড়বিড় করে বলে, কেমন ভৌতিক মনে হচ্ছে গ্রামটাকে!

পুলিশ আর ফতোয়াবাজরা গ্রামটার নিয়তি।

তুহিনের কণ্ঠে ঘড়ঘড় শব্দ।

ভিড়ের মধ্য থেকে একজন বুড়ো প্রশ্ন করে, ‘তোমরা কেঠা বাবা?’

পাশ থেকে আরেকজনের মন্তব্য, মনে হয় সাদা পোশাকের পুলিশ।

ওরা দুজন দুজনের দিকে তাকায়। নিজেদের পরিচয় দিতে পারে না। ভয় করে। সঙ্গে সঙ্গে অনুভব করে, কত অর্থহীনভাবে স্তব্ধ হয়ে গেছে বুকের ভেতরের সমুদয় শব্দ। আর একজনের কণ্ঠ থেকে ব্যঙ্গ বিচ্ছুরিত হয়, মানুষ দুইডা বোবা নাহি?

মুহিব তাড়াতাড়ি বলে, ‘আমার নাম মুহিব। ওর নাম তুহিন। আমরা তরিকুলের কথা জানতে এসেছি। ওকে যে কারণে আসামি করা হয়েছে, তা আমাদের কাছে একটু অবিশ্বাস্য ঠেকছে।’

এ কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে ভিড়ের গুঞ্জন থেমে যায়। ডুকরে কেঁদে ওঠে তরিকুলের বাবা। সে শব্দ যেন নিভে যাওয়া আগুনের উত্তপ্ত ছাই। গরম সিসার মতো পুড়িয়ে দিচ্ছে কর্ণকুহর। মেয়ে দুটো দাদার গলা জড়িয়ে ধরলে ওদের খোলস বদলায়, যেন ওরা ফতোয়ার নিচে গলা পেতে দেওয়া যুবতী নারী।

দুপুরের পর ফিরতে থাকে দুজন। খিদে পেয়েছে। গাঁয়ের বাজারের ভাঙা হোটেলটায় ঢুকে নলা মাছের ঝোল দিয়ে ভাত খায়। হোটেলমালিক জানায়, সেদিন তরিকুল ওর দোকানে বসে অনেকক্ষণ আড্ডা দিয়েছিল।

ওদের পাশের বেঞ্চে বসে পা দোলাচ্ছিল যে মেয়েটি, সে বারবার ওদের দিকে তাকাচ্ছিল। ওর ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি, দৃষ্টিতে কৌতুক। ওরা দুজনই বুঝতে পারে যে মেয়েটি তরিকুলকে চেনে। মুহিব ওর দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বলে, ‘আমরা সাংবাদিক। তরিকুলের ব্যাপারটা নিয়ে কাগজে লিখব। আপনি ওকে চেনেন?’

চিনুম না ক্যান? ওর শরীলের সব চিনি। সেই দিন সাঁঝের বেলা একবার আসছিল আমার কাছে। কইল খুব খারাপ লাগতাছে। মাইঝ রাইতে একবার আসুম। দরজা খোলা রাখিস। আসে নাই। মনে অয় বটতলায় ঘুমাইছিল। ক্যান যে অরে পুলিশ ধইরা নিল বুঝলাম না।

মেয়েটি ওদের কাছে প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য অপেক্ষা করে না। হোটেলঅলাকে ভাতের দাম দিয়ে চলে যায়। ওরা বুঝে যায় যে মেয়েটি কে। ওরা হোটেলঅলাকে জিজ্ঞেস করে, ওর বিরুদ্ধে ফতোয়া হয় না?

ক্যান হইব? ও তো সব্বাইর কামে লাগে।

দুজনের মুখের ওপর কেউ বুঝি গরম সিসা ঢেলে দেয়। ওরা নিজেদের দিকে তাকাতে পারে না। দাম চুকিয়ে বেরিয়ে আসে। বাইরে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখে। অনেক দূরে ছোট কালো একটা পাখি উড়ে যায়। তুহিন ঠেলা দিয়ে বলে, ‘আমার তো মনে হচ্ছে হাতিয়ার ধর্ষণের দিন তরিকুল গাঁয়েই ছিল।’

মনে হচ্ছে মানে?

মুহিব আগুনে দৃষ্টিতে তাকায়।

ইয়ে মানে—

ও ঢোক গেলে।

মুহিব গলায় তপ্ত সীসা ঢেলে গনগনে কণ্ঠে বলে, ছিলই তো। সেই তারিখে ও এখানেই ছিল।

এমন নির্দোষ মানুষটাকে পুলিশের কেন দরকার হলো রে?

উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর জন্য।

বেশ মজার খেলা না?

হ্যাঁ, পাখি ধরা খেলা।

দুজন খেয়া নৌকায় উঠে নদীর এ পাড়ে এসে নামে। হাজি বুড়ি খেয়াঘাটে বসে আছে। সারা দিনে বাড়ি ফেরেনি। আঁচলের খুঁটেতে গিমা শাক বাঁধা। কানে আধা পোড়া বিড়ি গোঁজা ছিল। ওদের দেখে বিড়িটা ঠোঁটে গুঁজে বলে, ‘ম্যাচ দে।’

আকস্মিক আনন্দে দুজনের মন ভরে যায়। মুহিব ম্যাচটা বুড়ির হাতে গুঁজে দিয়ে বলে, ‘ইচ্ছেমতো বিড়ি টেনে দুনিয়াটা ফুঁকে দাও নানি!’