পানির লাইনে ১৪ হাজার ছিদ্র

চট্টগ্রাম মহানগরে ওয়াসার পানির পাইপলাইনের ছিদ্র কিছুতে বন্ধ হচ্ছে না। একদিকে মেরামত করা হচ্ছে, অন্যদিকে আবার ছিদ্র হচ্ছে। দিন দিন এটা বাড়ছে। গত চার বছরে ১৪ হাজারের বেশি ছিদ্র মেরামত করেছে ওয়াসা। চলতি অর্থবছরে আর​ও চার হাজার ছিদ্র ভরাটের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

ওয়াসার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। তাঁরা জানান, পুরোনো পাইপলাইন এখানে একটা সমস্যা। তার ওপর ছিদ্রগুলো ভরাটের ক্ষেত্রেও ত্রুটি আছে। ফলে পানির চাপ বাড়লেই পুরোনো ছিদ্র আবার সচল হওয়ার পাশাপাশি নতুন ছিদ্রও তৈরি হচ্ছে। প্রতি মাসে গড়ে ৩০০টি ছিদ্র মেরামত করা হচ্ছে, তবু সামাল দেওয়া যাচ্ছে না​। দিন দিন ছিদ্রের সংখ্যা বাড়ছে। এর ফলে একদিকে পানির অপচয় যেমন হচ্ছে, অন্যদিকে ময়লা ও জীবাণু ​মিশে পানি দূষিত হচ্ছে।

ওয়াসার সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত চার বছরে ১৪ হাজার ২৩৪টি ছিদ্র মেরামত বা সংস্কার করেছে ওয়াসা। এ কাজে খরচ হয়েছে ৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

এর মধ্যে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ হাজার ৯৯৩টি, পরের অর্থবছরে ৩ হাজার ৬৬৪টি, তারপরে ২০১৭-১৮ সালে ৩ হাজার ৯৪২টি এবং সর্বশেষ চলতি বছরের মে পর্যন্ত ৪ হাজার ৬৩৫টি ছিদ্র সংস্কার করা হয়। নতুন অর্থবছরে চার হাজার ছিদ্র ভরাট বা মেরামতের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সংস্থাটি। এ জন্য সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ১৯ লাখ টাকা।

এই কাজের সঙ্গে যুক্ত একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ছিদ্রগুলো ঝালাই করা হচ্ছে না। ছিদ্রের মুখে কাঠের গুঁড়ি লাগিয়ে দেওয়া হয়। কিছুদিনের মধ্যেই গাছের গুঁড়িতে পচন ধরে এবং সেটি খসে পড়ে।

বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, বেসরকারি চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউএসটিসি) সামনের জাকির হোসেন সড়কে পাইপলাইন ছিদ্র হয়ে সড়ক ফুঁড়ে অবিরত পানি বের হচ্ছে। একইভাবে পাইপলাইন ছিদ্র হয়ে পানি বের হতে দেখা গেছে নগরের চকবাজারের অলি খাঁ মসজিদের সামনে ও তেলিপাট্টি মোড়ে এবং বহদ্দারহাটের কাঁচাবাজারের মুখে। স্থানীয় লোকজন জানান, বহদ্দারহাট কাঁচাবাজার ও তেলিপাট্টি মোড়ে পানির লাইনের ছিদ্রগুলো গত এক বছরে অন্তত তিনবার সংস্কার করা হয়। কিন্তু আবার ছিদ্র হয়ে পানি বের হচ্ছে।

ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী কাজী ইয়াকুব সিরাজউদ্দৌলা প্রথম আলোকে বলেন, পাইপ পুরোনো হওয়ার কারণে এভাবে ছিদ্র হচ্ছে। তাঁর দাবি, ‘ঠিকঠাকভাবেই ছিদ্র সংস্কার করা হচ্ছে।’

২০১৬ সালের আগস্টে চট্টগ্রাম ওয়াসার কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প-১ পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হলে ভূগর্ভস্থ পাইপলাইন ছিদ্র হয়ে পানি ছড়িয়ে পড়ে রাস্তাঘাটে। বাধ্য হয়ে তিন দিনের মাথায় পানি সরবরাহ কমিয়ে দেয় ওয়াসা। পরে ২০১৭ সালের নভেম্বরে নতুন পাইপলাইন স্থাপন এবং পুরোনো পাইপলাইন সংস্কারের জন্য কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প-২ হাতে নিয়েছে ওয়াসা। ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা।

ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী বলেন, এ প্রকল্পের কাজ প্রায় অর্ধেক শেষ হয়েছে। ২০২২ সালে কাজ শেষ হওয়ার কথা। এরপর পাইপলাইনের ছিদ্র কমে আসবে।

চট্টগ্রাম ওয়াসার গ্রাহক প্রায় ৭২ হাজার। প্রতিদিন পানির চাহিদা ৫০ কোটি লিটার হলেও ওয়াসা সরবরাহ করতে পারে ৩০ থেকে ৩৪ কোটি লিটার। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ অপচয় হচ্ছে। ওয়াসার কর্মকর্তাদের মতে, এই অপচয়ের বেশির ভাগই হচ্ছে পাইপলাইনের ফুটোর কারণে।

পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহসভাপতি প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, লাইনে ছিদ্রের কারণে বিভিন্ন এলাকায় পানিবাহিত রোগ হচ্ছে। ছিদ্রগুলো দ্রুত ও সঠিকভাবে সংস্কার করা হলে কিছুটা হলেও রক্ষা পাওয়া যাবে। তাঁর মতে, নতুন প্রকল্পের অধীন ইতিমধ্যে যেসব এলাকায় পাইপলাইন বসানো হয়েছে, ওয়াসা চাইলে সেগুলো ধারাবাহিকভাবে চালু করে দিতে পারে।