পান্ডারা যে কারণে বাঁশ খায়

.
.

বিরাট একটা বাঁশবাগানে থাকত অনেক অনেক পান্ডা। পান্ডারা তখন আকাশের মেঘ খেত। গুলতি দিয়ে আকাশের সাদা মেঘ পেড়ে গিলে ফেলত কপ করে। সুখে–শান্তিতেই ছিল সবাই। কিন্তু ঝামেলা বাধল দলপতি নির্বাচনের সময়। কারচুপির আশঙ্কায় নির্বাচনে অংশ নিল না বিপক্ষ দল। ফলে ফাঁকা মাঠে গোল দিল পুরোনো দলপতির দলটাই। বেধে গেল তুমুল গন্ডগোল। বাঁশবাগানের আকাশে দুর্যোগের ঘনঘটা। দলপতির দল বলল, ‘এই নির্বাচনে আমরাই জয়ী।’ বিপক্ষ দলের দাবি, ‘এই নির্বাচনে কেউ ভোটই দেয়নি, আবার নির্বাচন চাই।’
নির্বাচন তো আর চাইলেই পাওয়া যায় না। ওদিকে দলপতি তাঁর দল নিয়ে বেশ আরামেই বাঁশবাগান শাসন করতে লাগলেন। বিপক্ষ দল খালি মাথা কুটে মরে। দলটির প্রধান তাঁর আস্তানায় বসে একদিন হুমকি দিলেন, ‘এবার কঠোর আন্দোলন হবে!’ পাতিনেতারাও তুমুল উৎসাহে গলা মেলাল, ‘এবার কঠোর আন্দোলন হবে!’
বাঁশবাগানের মাথার ওপর চাঁদ ওঠে, সূর্য ওঠে, আবার ডুবেও যায়, আন্দোলন আর হয় না। বিপক্ষ দলের কর্মীরা তাদের নেতাকে বলে, ‘লিডার, আন্দোলন হবে না?’ নেতা আবার নড়েচড়ে বসেন, ‘অবশ্যই! এবার কঠোর আন্দোলন হবে!’
তার পরও আন্দোলনের ‘আ’ও হয় না। আসলে তো সমস্যা অন্য জায়গায়। বাঁশবাগানের প্রধান অস্ত্র হলো ওই মেঘ পাড়ার গুলতিগুলো। নিয়মানুযায়ী সেগুলো ছিল দলপতির হাতে। ফলে মেঘ পেড়ে খেতে হলে দলপতির কাছেই হাত পাততে হয়। কিন্তু বিপক্ষ দলের কর্মীরা দলপতির সামনে হাত পাতে কোন মুখে! কাজেই না খেয়ে না খেয়ে তারা অপুষ্টির শিকার। স্বাভাবিকভাবেই শরীরে বল নেই। আন্দোলনেও বেগ নেই।
‘এভাবে তো চলতে পারে না।’ এক পাতি নেতা ভয়ে ভয়ে বলেই ফেলল, ‘এভাবে চললে আমরা একদিন নাই হয়ে যাব!’ বিপক্ষ দলের নেতা গা ঝাড়া দিয়ে বললেন, ‘ঠিক ঠিক, এভাবে আর কত দিন! এবার কঠোর আন্দোলন হবে। আগামীকাল তোমরা সবাই একটা সমাবেশ ডাকো। এই দলপতিকে গদি থেকে নামাতেই হবে।’ আশার আলো দেখল কর্মীরা। পরদিন বাঁশবাগানের মাঝখানে তুমুল উৎসাহে জড়ো হলো সবাই। শুরু হলো বক্তৃতা। একে একে সব পাতি নেতা বক্তৃতা করে আর বলে, ‘কঠোর আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। এবার আমাদের নেতা আসবেন বক্তৃতা করতে।’ সময় বয়ে যায়, নেতার দেখা নেই! কর্মীরা হতাশ, মনে ক্ষোভ! একি তামাশা তাদের নিয়ে! এক কর্মী আর সহ্য করতে না পেরে নেতার আস্তানার দিকে রওনা হলো কয়েকজনকে নিয়ে। আকাশে তখন বর্ষার মেঘ—গুরুগুরু, গুড়ুম গুড়ুম! কর্মীরা আস্তানার সামনে গিয়ে উঁকি মেরে দেখে—নেতা একটা বাঁশপাতার মালার দিকে চিন্তিত মুখে তাকিয়ে আছেন। মালাটা মাথায় পরবেন না গলায় পরবেন বুঝতে পারছেন না! কর্মীরা একে অপরের মুখের দিকে হতাশ ভঙ্গিতে চাওয়া–চাওয়ি করতে লাগল। ফিসফিস করে এক নবীন কর্মী বলল, ‘এই বাঁশের কচি পাতাই যত নষ্টের গোড়া, এগুলো না থাকলে মালাও বানানো যেত না, নেতাকে আর ভাবতেও হতো না মালা কোথায় পরবেন।’ সবচেয়ে প্রবীণ কর্মীটি বলল, ‘এবার কঠোর আন্দোলন হবে!’ বাকিরা অবাক হয়ে তাকাল তার দিকে, ‘আবার আন্দোলন?’ প্রবীণ কর্মী একটা কচি বাঁশের ডগা চিবুতে চিবুতে বলল, ‘বাঁশবাগান উজাড় করার আন্দোলন! এই বাঁশবাগান উজাড় করলেই যদি নেতার হুঁশ হয়!’
প্রবীণের কথায় বাকিরাও ঝাঁপিয়ে পড়ল বাঁশবাগানের ওপর। সেই থেকে পান্ডারা বাঁশ খেতে শুরু করল। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত খেয়েই যাচ্ছে!