পারিবারিক নির্যাতনকে অপরাধ গণ্য করা হয় না

অর্ধশতক ধরে নারী অধিকার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল। তিনি মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোটের চেয়ারপারসন। করোনাকালে পারিবারিক নির্যাতন পরিস্থিতি এবং প্রতিকার নিয়ে কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে। ১২ জানুয়ারি তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক নাজনীন আখতার

  • পারিবারিক নির্যাতন ‘হতেই পারে’—এ ধারণার প্রশ্রয় রয়েছে পরিবারে, সমাজে, নীতিনির্ধারকদের মননে।

  • স্বামীর অত্যাচারের বিষয়ে নালিশ করলে মা-বাবাও বলেন, ‘একটু মেনে নে’।

  • কোভিডের সময় পারিবারিক নির্যাতনের প্রবণতা নিয়ন্ত্রণ না করার পরিণতি এখনো ভোগ করতে হচ্ছে।

  • নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলোকে ঢালাওভাবে মিথ্যা বলার সুযোগ নেই।

সুলতানা কামাল

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: গত বছর গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর সংকলিত করে বিভিন্ন সংগঠন জানিয়েছে, নারীর প্রতি যত ধরনের নির্যাতন হয়, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয়েছে পারিবারিক নির্যাতন। এই সময়ে পারিবারিক নির্যাতন বেড়েছে ১০ শতাংশ। নির্যাতনের এই ঊর্ধ্বগতির কারণ কী?

সুলতানা কামাল: পারিবারিক নির্যাতন বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে, সংস্কৃতিগতভাবে আমাদের চিন্তা-চেতনায় এটা যে একটা অপরাধ, সেই বিষয়টিই আমরা সঞ্চারিত করতে পারিনি। এই নির্যাতনের গ্রহণযোগ্যতা পরিবারে, সমাজের গভীরে প্রোথিত আছে। এটা রাতারাতি বদলানো যাবে না—এই বলে রাষ্ট্রও ছাড় দেয়। আসলে পারিবারিক নির্যাতনকে গুরুত্ব দিয়ে অপরাধ বলে গণ্যই করা হয় না। পারিবারিক নির্যাতন ‘হতেই পারে’—এই ধারণার প্রশ্রয় রয়েছে পরিবারে, সমাজে, রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারকদের, এমনকি এর প্রতিকার দেওয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিদের মননেও। আমরা পুরুষতান্ত্রিক চিন্তাভাবনা দিয়ে এমনভাবে প্রভাবিত যে আমরা কত সহজে বিশ্বাস করে নিই যে পুরুষেরা বাইরে চাপে থাকে, তার নানা দুঃখকষ্ট, অপমান বঞ্চনার প্রতিকার করতে না পেরে শক্তি প্রদর্শন করতে হলে, দুঃখ কমাতে হলে সেই চাপ ঘরে এসে তোলে নারীর ওপর। কোভিডে ঘরবন্দী সময়ে সার্বক্ষণিকভাবে ক্ষমতা প্রদর্শনের অনেক সময় পেয়েছে পুরুষ।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: ২০২০ সালে যতটা ঘরবন্দী সময় ছিল, ততটা তো ২০২১ সালে ছিল না। তা–ও নারী নির্যাতন বাড়ল?

সুলতানা কামাল: পারিবারিক নির্যাতনের প্রবণতাকে তো কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে না। বিচারযোগ্য বিষয় বলে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনাই করা হয় না। যেহেতু কোভিডের সময় এই প্রবণতা নিয়ন্ত্রণ করা হয়নি, তাই এখন সে রকম ঘরবন্দী অবস্থা না থাকলেও নির্যাতন চলমান আছে। কোভিডের কারণে অনেকে বেকার হয়েছেন, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। সেই প্রভাব এখনো রয়ে গেছে। কোভিড একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। যেকোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে নারী নির্যাতন বাড়ার প্রবণতা এবং বিচারহীনতা মিলিয়ে কোভিডের প্রভাবের সেই পরিণতি (পারিবারিক নির্যাতন) এখনো আমরা ভোগ করছি।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯–এ করা কল পর্যবেক্ষণ করে আমরা দেখেছি, ২০২১ সালে নারীর প্রতি সহিংসতা নিয়ে যত কল এসেছে, তার মধ্যে ৪৭ শতাংশই স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ। এক বছরে এমন অভিযোগ বেড়েছে ১৭৪ শতাংশ। বিষয়টি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন।

সুলতানা কামাল: নারীরা বিবাহিত জীবনে আইনগতভাবে-সামাজিকভাবে স্বামীর নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। যে মা–বাবা কন্যাশিশুকে অনেক আদর-যত্নে বড় করেন, সেই মেয়ে স্বামীর অত্যাচারের বিষয়ে মা–বাবার কাছে নালিশ করলে তাঁরা বলেন, ‘একটু সহ্য করে নে, একটু মেনে নে’। এ ধরনের চিন্তাভাবনা মনের মধ্যে এমনভাবে ছাপ ফেলে যে নারীরা মনে করে তাদের এই পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসার কোনো উপায় নেই। সমাজে নারীর ওপর পুরুষের প্রশ্নাতীত নিয়ন্ত্রণের সেই সংস্কৃতি তো আজও বহাল রয়ে গেছে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: একজন সাবেক প্রতিমন্ত্রীর স্ত্রীও ৯৯৯–এ স্বামীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন।

সুলতানা কামাল: পারিবারিক নির্যাতন সব স্তরেই বিস্তৃত। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত—ভেদাভেদ নেই। সবক্ষেত্রেই পুরুষতান্ত্রিকতার প্রভাব সাংঘাতিকভাবেই রয়েছে। উচ্চবিত্ত নারীরা তত প্রকাশ করে না। মধ্যবিত্ত নারীরা সহায়, সম্পত্তি, সামাজিক পরিচয়ের কথা ভেবে প্রকাশ করতে চায় না। নিম্নবিত্তে অত্যাচার বেশি হয় বলা হয়, কারণ নিম্নবিত্ত নারীরা নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা প্রকাশ করে, কুণ্ঠা বোধ করে না। আমার অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, কোন শ্রেণিতে অবস্থান সেটা বড় কথা নয়। প্রতিটি ক্ষেত্রেই নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। কেউ প্রকাশ করে, কেউ করে না।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় স্বামীর নির্যাতনে অতিষ্ঠ এক নারী বিষ পান করেছিলেন। পুলিশ বাসা থেকে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে জানা যায়, ওই নারী স্বামীর বাড়িতে ফিরে গেছেন। এ নিয়ে আপনার কাজের অভিজ্ঞতা কী বলে?

সুলতানা কামাল: এটা বাস্তব চিত্র। নারী ভাবে, অভিযোগ করলে কে তার দায়িত্ব নেবে। বরং তার শ্বশুরবাড়ির সবাই তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে। কন্যাসন্তান এত দুর্ভাগা যে অনেক ক্ষেত্রে মা–বাবাও নিরাপত্তা দিতে চায় না। বিয়ে দিয়ে দায়িত্ব হস্তান্তর করে। আগের পরিসংখ্যানের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, নির্যাতনের ঘটনা যত ঘটে, তার তুলনায় মামলা হয় ১০ শতাংশ। বিচার হয় আরও কম, ৩ শতাংশ। আপাতভাবে অপ্রাসঙ্গিক মনে হলেও বলতে চাই, রাষ্ট্রও ভোটের দিন ছাড়া আর একটি দিনেও নারীর নাগরিক সত্তার স্বীকৃতি দেয় না।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের এক জরিপে বলা হয়েছে, স্বামীর অনুমতি ছাড়া কোনো কর্মকাণ্ডে জড়াতে ভয় পায় ৮০ শতাংশ মেয়ে। এই প্রেক্ষাপটে কী বলবেন?

সুলতানা কামাল: কন্যার তো নিজস্ব কোনো ঠিকানা নেই। ও তো বাপের বাড়ি ছেড়ে এসেছে। ও বাড়ির মানুষ হিসেবে আর ফেরত যেতে পারে না, বাবার বাড়ি যায় বাইরের মানুষ, অতিথি হিসেবে। তার ঠিকানা ওই টুকুনই, স্বামীর ঘর। তাই স্বামী যতই নির্যাতন করুক, সহ্যের বাইরে না গেলে অভিযোগ করে না। ১৯৯৫ সালে এক গবেষণা করেছিলাম, যেখানে চিংড়ি চাষে যুক্ত নারীদের সঙ্গে কথা হয়েছিল। ওখানে বহুবিবাহের একটা আধিক্য দেখেছিলাম। পরিস্থিতিটা এমন যে নারীরা উপার্জন করে, আর তাদের স্বামীরা স্ত্রীদের উপার্জনে আরাম–আয়েশের জীবন কাটায়। মেয়েদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘আপনারা কেন সহ্য করেন?’ জবাব পেয়েছিলাম, ‘একটা ঠিকানা তো লাগে!’ সাংস্কৃতিক ও সামাজিকভাবে যত দিন নারীর ব্যক্তিস্বাধীনতা স্বীকৃতি না পাবে, তত দিন পর্যন্ত দুঃখজনকভাবে নারীর ওই ঠিকানার প্রয়োজনটুকু থাকবেই।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: বাল্যবিবাহকে ঘিরে নিজ পরিবারেও মেয়েরা নির্যাতনের শিকার হয় কি?

সুলতানা কামাল: বাল্যবিবাহকে হয়তো সরাসরি পারিবারিক নির্যাতন বলা যায় না। তবে এটাকে বেআইনি এবং নির্যাতনের পর্যায়ে ফেলা যায় এই অর্থে যে শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত হওয়ার আগেই মেয়েটিকে এমন এক ভূমিকার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়, যা পালন করতে গিয়ে তাকে অনেক কষ্টের মধ্যে পড়তে হয়। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েকে এসএসসি পরীক্ষায় বসিয়ে দিলে পারবে? প্রস্তুতি না থাকায় মেয়েটি সংসারের প্রতিটি পদে পদে অক্ষমতার পরিচয় দিতে বাধ্য হবে। এভাবে তাকে নির্যাতনের ক্ষেত্রের মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়। আমরা মা–বাবা হয়েও কন্যাসন্তানের দায়িত্ব নিচ্ছি না। কেন বাল্যবিবাহ দিচ্ছেন? কোনো মা–বাবাকে এ প্রশ্ন করলে বলেন, ‘আপনি কি আমার মেয়ের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবেন?’ অনেক সময় ওই বাবা-মায়েদের বলি, বিয়ের পর যে মেয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে, সেটাই বা কীভাবে জানেন! সে প্রশ্নের উত্তর তো তাদের কাছে নেই। যেসব জায়গায় বাল্যবিবাহ বেশি হয়েছে, দেখা গেছে ওই মেয়েরা নানা অত্যাচারের সম্মুখীন হয়েছে। তাদের প্রজনন অধিকার, জীবনকে গড়ে নেওয়ার ও নিজের মতো করে যাপনের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ আইন আছে। আইনটির প্রয়োগ নিয়ে অসন্তোষও আছে।

সুলতানা কামাল: ২০১০ সালের আগে পারিবারিক নির্যাতনকে আইনগতভাবে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হতো না। এখন পারিবারিক নির্যাতন (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন রয়েছে। তবে প্রয়োগ কোথায়? স্বামী বা আত্মীয়স্বজন নারীর সঙ্গে অপরাধ করলে তিনি অপরাধীকে চিহ্নিত করতে চান না। কারণ, তিনি স্বামী বা স্বামীর স্বজনের ওপর নির্ভরশীল। আইনটি খুবই জরুরি। তবে এই আইনের প্রয়োগের জন্য সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংস্কার প্রয়োজন।

কিন্তু আইনটি তৈরি হলেও এর প্রজ্ঞাপন জেলায় জেলায় ইউনিয়নে পাঠানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করা হয়নি। বেসরকারি সংগঠনগুলোর উদ্যোগে এবং আন্দোলনে সেই পরিস্থিতির কিছুটা পরিবর্তন ঘটেছে। আর যাঁরা আইনটি প্রয়োগ করবেন, তাঁরাও সংস্কারের বাইরে যেতে পারেন না। যদিও সর্বস্তরে আইন না মেনে পার পাওয়ার বিষয়টিই স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। আইনটির উল্লেখযোগ্য কার্যকারিতা দেখতে পাই না।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তথ্য অনুসারে, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত যৌতুকের কারণে নির্যাতনের মামলা ১৩ শতাংশ বেড়েছে।

সুলতানা কামাল: যৌতুকও একটি পারিবারিক নির্যাতন। এটি পরিবারের মধ্যেই হয় এবং পারিবারিক নির্যাতনের একটি গুরুতর ধরন।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: নারী নির্যাতনের মামলার সত্যতা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তোলেন। বিশেষ করে যৌতুকের কারণে মামলার বিষয়ে। বিষয়টিকে একটু স্পষ্ট করবেন কি?

সুলতানা কামাল: যৌতুকের ক্ষেত্রেই মিথ্যা মামলার প্রসঙ্গ বেশি টানা হয়। যে মামলাগুলো আদালতে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে, সেগুলো এই কারণে হয়েছে যে ২০১০ সালের আগে পারিবারিক নির্যাতন (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইনটি ছিল না। ফলে পারিবারিক নির্যাতন যৌতুকসংক্রান্ত না হলে কোনোভাবেই আইনি প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ থাকত না। অনেক ক্ষেত্রে সালিসের মাধ্যমেই নিষ্পত্তি করা হতো। কিন্তু তা যৌতুকের প্রকোপ কমাতে খুব কার্যকর হয়নি। তাই চরম পারিবারিক নির্যাতনের ক্ষেত্রে বিচার চাইতে গেলে কখনো আইনজীবীরা যৌতুকের ধারায় মামলা করার পরামর্শ দিয়েছেন। তাই বলে নির্যাতনের বেশির ভাগ মামলাকে ঢালাওভাবে মিথ্যা বলার সুযোগ নেই। কথা হচ্ছে, অনেক খুনের মামলাও মিথ্যা প্রমাণিত হয়, জায়গাজমি নিয়ে মামলাও মিথ্যা প্রমাণিত হয়। তাহলে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে হওয়া মামলার বিষয় এলেই মিথ্যা মামলা প্রসঙ্গটি এত উৎসাহের সঙ্গে টানা হয় কেন? অন্য মামলার উদাহরণ তো টানা হয় না। যদি কোনো মিথ্যা মামলা হয়ে থাকে, সেগুলো পারিবারিক নির্যাতন নিয়ে প্রতিকার পাওয়া যেত না বলেই হয়েছে। এখন আইন আছে। এ বিষয়ে জটিলতা নিরসন হবে আশা করা যায়।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: ‘বিয়ের কথা বলে ধর্ষণ’–এর অভিযোগে অনেক সময় মামলা হয়। এটা নিয়ে কিছু বলবেন?

সুলতানা কামাল: ধর্ষণের বিষয়ে আইনটি যে ভাষায় প্রণয়ন করা হয়েছে, তার আরও বিশ্লেষণ হওয়া প্রয়োজন। আইনটির শিরোনাম প্রকৃত অবস্থাকে তুলে ধরে কি না, সেটা নিয়েও ভাবনা-চিন্তা করা প্রয়োজন।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধে কোন বিষয়কে আপনি বেশি গুরুত্ব দেবেন?

সুলতানা কামাল: সবচেয়ে বড় কথা, নারী-পুরুষের মধ্যে যে অধিকার ও মর্যাদার বৈষম্য রয়েছে, সেই পুরুষতান্ত্রিক চিন্তাধারা বদলানোর জন্য কাজ করতে হবে। সেই চিন্তাধারাকে অপসারণ করার জন্য শিক্ষাব্যবস্থা ও সাংস্কৃতিক আচার-আচরণ নিয়ে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে। নারীর ব্যক্তিসত্তার স্বীকৃতি দিতে হবে। সংবিধানে শুধু জনজীবনে নারীর সমতার কথা বলা আছে। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনেও সমতার অঙ্গীকার থাকতে হবে। দেশে বরং এর বিপরীতে আইন প্রচলিত আছে। পারিবারিক আইন অনুযায়ী নারীকে পুরুষনির্ভর ও পুরুষের নিয়ন্ত্রণে থাকার জীবন দেওয়া হয়েছে। এর বিন্দুমাত্র হেরফের হলে নারীকে জবাবদিহি ও শাস্তির মধ্যে পড়তে হয়। নারীর অধিকার ও মর্যাদাকে জাতির উন্নয়নের অংশ হিসেবে দেখতে হবে। শুধু কাঠামোগত উন্নয়ন বা প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করে নারীর অধিকার রক্ষা করা যাবে না। যারা নারীবিদ্বেষ ছড়ায়, নারীর বিরুদ্ধে ঘৃণা উদ্রেক করায়, তাদের প্রশ্রয় দেওয়া বন্ধ করতে হবে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।

সুলতানা কামাল: আপনাকেও ধন্যবাদ।