পার্বত্য চট্টগ্রামে শতবর্ষ আগেও ছিল বাঘ ও গন্ডার

হাচিনসন অন্তত তিন ধরনের হরিণ, সেরো (হরিণজাতীয় প্রাণী), দুই শৃঙ্গ গন্ডার, গাউর, চিতা বাঘ, বেঙ্গল টাইগারসহ বর্তমানে বিলুপ্ত বহু বন্য প্রাণী ও পাখির দেখা পেয়েছিলেন।

অলংকরণ: এস এম রাকিবুর রহমান

পাহাড়ে চলাফেরা করতে হলে আপনাকে সতর্কতা হিসেবে সঙ্গে রাখতে হবে অন্তত দুটি বন্দুক। একটি শটগান, অন্যটি রাইফেল। একটু অসতর্ক হলেই ঘাড় মটকে দিতে পারে হিংস্র বাঘ কিংবা চিতা। ভোরে আর সন্ধ্যায় সামনে পড়ে যেতে পারে ভালুক আর গন্ডারের পাল। অজগর, বিষধর সাপ কিংবা নদীতে হিংস্র হাঙরের উপস্থিতি তো আছেই।

শ্বাপদসংকুল এই জায়গা পার্বত্য চট্টগ্রাম। ১১৬ বছর আগে ১৯০৬ সালে কলকাতার ‘দ্য বেঙ্গল সেক্রেটারিয়েট বুক ডিপো’ থেকে প্রকাশিত তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রামের ইংরেজ প্রশাসক আর এইচ স্নেইড হাচিনসনের বইয়ে এমন বিবরণ পাওয়া গেছে।

অ্যান অ্যাকাউন্ট অব দ্য চিটাগাং হিল ট্র্যাক্টস নামের ২৮৮ পৃষ্ঠার এই বইয়ে ১৮৯০ থেকে ১৯০১ সাল পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের বিবরণ পাওয়া যায়। এই সময়ে হাচিনসন যেসব প্রাণী, পাখি ও সরীসৃপের দেখা পেয়েছিলেন, তার দু–একটি বাদে সবই এখন বিলুপ্ত হয়েছে।

পাহাড়ে হাচিনসন

আর এইচ স্নেইড হাচিনসন প্রথম প্রশাসক হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োগ পান ১৮৯০ সালে। রাঙামাটিতে অল্প কিছুকাল দায়িত্বে থাকার পর তাঁকে তৎকালীন মিজোরামের দক্ষিণ লুসাই পাহাড়ে বদলি করা হয়। সেখানে ব্রিটিশ সরকারের সামরিক অভিযানে অংশ নিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতার ঝুলি সমৃদ্ধ হয়। এরপর দ্বিতীয় দফায় ১৯০০ সালে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে ফিরে আসেন।

পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস বইয়ের লেখক জামাল উদ্দীনের মতে, আর এইচ স্নেইড হাচিনসন চার দফায় পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রশাসক (হিল সুপারিনটেনডেন্ট) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই তথ্য তিনি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে রক্ষিত সরকারি কর্মকর্তাদের তালিকা থেকে পেয়েছেন বলে জানান। ১৯০৬ সালে সুপারিনটেনডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালেই তিনি অ্যান অ্যাকাউন্ট অব দ্য চিটাগং হিল ট্র্যাক্টস বইটি লেখেন বলে জামাল উদ্দীন জানান।

অপূর্ব নিসর্গ

হাচিনসন তাঁর বইয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের যে বিবরণ দিয়েছেন, তা একালের পাঠককেও মুগ্ধ করবে। তিনি লিখেছেন, ৫ হাজার ১৩৮ বর্গমাইল আয়তনের পার্বত্য চট্টগ্রাম ছবির মতো সুন্দর। ফেনী, কর্ণফুলী, সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদী উপত্যকায় ঢেউখেলানো পাহাড় আর ঘন জঙ্গলে ঢাকা এই জনপদের ১ হাজার ৩৮৩ বর্গমাইল সংরক্ষিত বন। তবে পাহাড়ি অঞ্চলটির প্রায় বেশির ভাগ এলাকাই দুর্ভেদ্য আদিম অরণ্যের (ভার্জিন ফরেস্ট) অংশ।

যেখানে প্রায় সব ধরনের বন্য প্রাণীর অবাধ বিচরণ। এখানকার পাহাড়ে আলোছায়ার খেলা চলে অবিরত। নদীগুলো এই যেন গলিত সোনার মতো খানিক ঝলকে উঠছে আবার পরমুহূর্তেই ঢেকে যাচ্ছে ঘন ছায়ায়। এসব দৃশ্য কোনো মানুষ একবার দেখলে তার পক্ষে আর ভোলা সম্ভব নয়।

নদী ও সড়কপথে পার্বত্য চট্টগ্রামে যেতে তখন বেশ সময় লেগে যেত। রাঙামাটি যাওয়ার পথ ছিল চট্টগ্রাম-দেমাগ্রি-লুংলে-হাকা সড়কপথে। সামরিক বাহিনীর প্রয়োজনে তৈরি এই সড়ক ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামের লাইফলাইন।

হাচিনসনের দেখা বন্য প্রাণী

অন্তত তিন ধরনের হরিণ, বনছাগল (হরিণজাতীয় প্রাণী), দুই শিংয়ের গন্ডার, হাতি, তিন ধরনের ভালুক, মার্বেল ক্যাট (ছোপযুক্ত বিড়াল), গয়াল, বনগরু, চিতা বাঘ, বেঙ্গল টাইগার, বন্য শূকর, বনমোরগ, ময়ূর, কাঠবিড়ালি, বন্য মহিষ, অজগর, কয়েক রকমের বিষধর সাপ, নদীর হাঙরসহ বর্তমানে বিলুপ্ত বহু বন্য প্রাণী ও পাখির দেখা পেয়েছিলেন হাচিনসন। তবে এর মধ্যে আধা পোষমানা গয়াল, হাতি, বন্য শূকর আর হরিণের সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি।

শিকার ও শিকারি

ছায়ায় আচ্ছন্ন পাহাড়ের অপূর্ব শোভার মাঝেও পাহাড়িদের টিকে থাকতে হতো বুনো জন্তুদের সঙ্গে লড়াই করে। সেই সময় খুব কম পাহাড়ির কাছেই বন্দুক ছিল। শিকারে প্রধান অস্ত্র ছিল গুলতি, বর্ষা আর তির-ধনুক। এর মধ্যে গুলতির অব্যর্থ নিশানা অনেক অস্ত্রকেও হার মানাত। পাহাড়িদের গুলতির নিশানা নিয়ে একটি চমৎকার বিবরণ আছে হাচিনসনের বইতে।

হাচিনসন লিখেছেন, ‘একবার আমি বাংলোর বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ দেখলাম, এক পাহাড়ি বালক গুলতি নিয়ে হেঁটে আসছে। তার হাতের নিশানা দেখার জন্য একটা খুঁটির ওপর ডিম রাখলাম। ১৫ কদম দূর থেকে ডিমে গুলতির গুলি লাগাতে পারলে চার আনা পুরস্কার। মাটির ঢেলা গোল করে রোদে শুকিয়ে গুলতির জন্য যে গুলি তৈরি করা হয়, তা লোহার মতোই শক্ত।

ছেলেটি সেই গুলতিতে গুলি নিয়ে প্রথমবার খুঁটির গায়ে লাগাল। দ্বিতীয়বার ডিমটি ফেটে চৌচির। আমি ভাবলাম, এটা হয়তো ঝড়ে বক মরেছে। তাই দ্বিতীয়বার আবারও একটা ডিম রেখে চার আনা পুরস্কার ঘোষণা করলাম। এবার সে একবারেই ডিমটা ফাটিয়ে দিল। সাধারণ পাহাড়ি ছেলেদের হাতের নিশানা কমবেশি এমনই। তবে কুকি সম্প্রদায়ের তাংহুয়াদের মতো শিকারি সবাই হতে পারে না।

পাহাড়িদের মধ্যে যোদ্ধা ও শিকারি হিসেবে কুকিদের বিশেষ নামডাক ছিল। কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে দক্ষ শিকারিকে সমাজে বিশেষ মর্যাদার চোখে দেখা হতো। এমন শিকারিকেই সম্মান করে তাংহুয়া (বীর শিকারি) উপাধি দেওয়া হতো। কুকিদের মধ্যে তাংহুয়া হতে হলে তাকে হাতি, গয়াল, বড় বন্য শূকর, ভালুকের মতো হিংস্র প্রাণী শিকার করতে হতো।

কোনো তাংহুয়ার ঘরে শিকার করা এসব প্রাণীর মাথা যত্নে ঝুলিয়ে রাখা হতো। এমন কোনো ঘরে ঢুকলেই বোঝা যেত পার্বত্য এলাকার বন্য প্রাণীর প্রাচুর্যের বিষয়টি। তবে তাংহুয়ারা গন্ডার আর বাঘ শিকার করত না। এই দুই প্রাণী শিকারে অমঙ্গল বয়ে আনে বলে তাদের বিশ্বাস ছিল।

মারি তো গন্ডার

হাচিনসন লিখেছেন, রাঙামাটির থেগা, মাইনী আর থুইচংয়ের পাহাড়ি এলাকায় গন্ডারের অবাধ বিচরণ ছিল। খুব ভোরে গন্ডারের দেখা মিলত। ঠিক জায়গায় গুলি লাগাতে পারলে এদের হত্যা করা খুব সহজ। বিশেষ করে ঘাড় ও কানের পাশের জায়গা খুব স্পর্শকাতর। তবে কেবল মাংস নয়, গন্ডার হত্যার মূল কারণ এর শিং। কালো আইভরি হিসেবে পরিচিত গন্ডারের শিং চূর্ণ এক পাউন্ড বিক্রি হতো ৪০ রুপিতে। ঔষধি গুণ থাকায় এ দেশেও গন্ডারের শিংচূর্ণের কদর ছিল। নারীরা বন্ধ্যত্বের দাওয়াই হিসেবে এই শিংচূর্ণ খেতেন।

হাচিনসনের অধীনে কাজ করা এক পুলিশ কর্মকর্তা তাঁকে অনুরোধ করেছিলেন স্ত্রীর জন্য গন্ডারের শিংচূর্ণ জোগাড় করে দিতে। হাচিনসন লিখেছেন, ‘ভাগ্য সুপ্রসন্নই বলতে হবে। এমন অনুরোধ পাওয়ার কদিন বাদেই গোর্খা পুলিশ সদস্যরা একটি গন্ডার হত্যা করে। আর তাতে আমিও পুলিশ কর্মকর্তার আবদার মেটাতে পেরেছিলাম।’

কুকিদের গয়াল ও হাতির খেদা

পাহাড়ে সবচেয়ে বেশি দেখা মিলত বন্য শূকর আর গয়ালের। দিনের বেলায় গয়ালের পাল জঙ্গলে থাকলেও সন্ধ্যার শুরুতেই আবার ফিরে আসত গ্রামে। বিশাল দেহী গয়ালের দুধ অত্যন্ত ঘন ও ননিতে ভরা। তবে পরিমাণে ছিল খুবই কম। অবশ্য কুকিরা দুধ দোয়াতো না। কেবল উৎসবে গলায়ের মাংসের প্রয়োজন হলে তারা পাল থেকে বাছাই করে নিয়ে হত্যা করত। তবে বন্য অবস্থায় গয়াল সবচেয়ে বেশি পাওয়া যেত রামগড় ও মানিকছড়িতে।

হাতির মতো বিশাল প্রাণীকে তাড়িয়ে নিয়ে ঢোকানো হতো চারদিকে গাছের গুঁড়ি দিয়ে তৈরি বড় খেদায়। পোষ মানানোর জন্য এভাবেই হাতি ধরা হতো। পাশাপাশি মাংসের জন্যও হাতি হত্যা করা হতো। কুকিদের মধ্যে হাতি শিকার ছিল সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ। হাতি শিকারের জন্য বড় একটি গাছে বন্দুক নিয়ে অপেক্ষা করতে হতো শিকারিকে। এরপর কাছাকাছি এলে তাকে গুলি করা হতো। হত্যার পর হাতির দাঁত ও মাংস যতটুকু পারা যেত, নিয়ে যাওয়া হতো গ্রামে।

বাঘ, বাঘ...

বাংলাদেশের সুন্দরবন এলাকায় সীমাবদ্ধ হয়ে পড়া বেঙ্গল টাইগার বা ডোরাকাটা বাংলার বাঘের একসময় বিচরণভূমি ছিল পার্বত্য চট্টগ্রাম। পাশাপাশি ছিল চিতা বাঘও। হাচিনসনের বইয়ে উল্লেখ আছে, বাঘের সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে পাহাড়িদের নানা কৌশল উদ্ভাবন করতে হয়েছে। বাঘের হামলা থেকে বাঁচতে ফাঁদ পাতা হতো গ্রামের প্রবেশমুখে। একটি বড় বাঁশের মাথায় ভারী তিনটি গাছের গুঁড়ি বেঁধে দেওয়া হতো। এরপর একটি শূকরছানা রাখা হতো ফাঁদের ভেতরে। বাঘ এসে সেই শূকরছানা ধরে টানলেই বাঁশের মাথায় বাঁধা কাঠের গুঁড়ি পড়ে যেত। আর চিড়েচ্যাপ্টা হয়ে যেত বাঘ।

বাঘের মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে হাচিনসন লিখেছেন, ‘১৯০১ সালের বড়দিন ছিল সেদিন। আমি জঙ্গলে ঢুকেছি বনমোরগ শিকারে। হঠাৎ দেখলাম যেখানে দাঁড়িয়ে আছি আর কিছু দূরেই পাহাড় থেকে একটি বাঘ নেমে আমার দিকেই আসছে। এটি ১৫০ ফুটের মধ্যে আসার সঙ্গে সঙ্গেই আমি শটগান রেখে রাইফেল নিয়ে গুলি ছুড়লাম। এর আরও একদিন বাঘের মুখোমুখি হয়েছি।

আমরা সেদিনও শিকারে বের হয়েছিলাম। আমাদের সঙ্গে নারীরা বসেছিলেন ঝরনাতলায় গাছের ছায়ায়। একটা বাঘ মুহূর্তের মধ্যে বসে থাকা নারীদের মাথার ওপর দিয়ে লাফিয়ে চলে গেল। বাঘটি অক্ষতই ছিল। একটাও গুলি ছোড়ার আগেই সেটি পালিয়ে গিয়েছিল।’

কোথায় গেল বাঘ-ভালুক

বন্য শূকর, হাতি, অজগরসহ কিছু বন্য প্রাণী বাদে হাচিনসনের উল্লেখ করা বেশির ভাগ প্রজাতিই পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বিলুপ্ত হয়েছে। তবে এখনো ওই এলাকার দুর্গম ও বিচ্ছিন্ন কিছু জঙ্গলে কিছু বন্য প্রাণী আশ্চর্যজনকভাবে টিকে আছে বলে সম্প্রতি এক গবেষণায় জানা গেছে।

২০১৬ সালে যুক্তরাজ্যের দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকা ‘টাইগার কান্ট্রি? সায়েন্টিস্ট আন কভার ওয়াইল্ড সারপ্রাইজ ইন ট্রাইবাল বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি সচিত্র অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে। জেরেমি হেনসের লেখা ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের অজ্ঞাত একটি বনে (সংরক্ষণের স্বার্থের বনটির নাম উল্লেখ করা হয়নি) গবেষকদের চালানো বন্য প্রাণী জরিপের তথ্য তুলে ধরা হয়।

ক্রিয়েটিভ কনজারভেশন অ্যালায়েন্স (সিসিএ) পরিচালিত ওই জরিপে গাছের গায়ে ক্যামেরা ফাঁদ লাগিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় বন্য প্রাণীদের ছবি ও বিচরণের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়েছে এমন অনেক প্রাণীর সন্ধান পাওয়া যায় সেই গবেষণায়। গাউর, মারবেল ক্যাট, সম্বর হরিণ, গয়াল, সূর্য ভালুক, ঢোল (বন্য কুকুর), আরাকান ফরেস্ট টারটল নামের বিরল কচ্ছপের সন্ধান পেয়েছিলেন ওই গবেষণায়।

প্রতিবেদনটিতে বন্য প্রাণী গবেষক ও সিসিএর সহপ্রতিষ্ঠাতা শাহরিয়ার সিজার রহমান, ইশতিয়াক সোবাহান ও বাঘ বিশেষজ্ঞ মনিরুল এইচ খানের বক্তব্য নেওয়া হয়। গবেষণার একপর্যায়ে গবেষক দল ১৩ সেন্টিমিটারের বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে পায়। পায়ের ছাপের ছবি বাঘ বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠিয়ে তাঁরা সে বিষয়ে নিশ্চিতও হন।

গবেষক মনিরুল এইচ খান গার্ডিয়ান–এ বলেছিলেন, তাঁর ধারণা, ওই এলাকায় ১৫টির মতো বাঘ এখনো বিচরণ করছে।

সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মনিরুল এইচ খানের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয় এ নিয়ে। তিনি জানান, গত এক শতাব্দীতে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে গন্ডার, বর্মি ময়ূর, বানতেং (এক ধরনের মহিষ), শ্লথ বেয়ার পুরোপুরি হারিয়ে গেছে। তবে আশার কথা, ছোট ছোট বিচ্ছিন্ন জঙ্গলে জীববৈচিত্র্য এখনো অনেক সমৃদ্ধ।

গবেষকেরা কিছুদিন আগে ঘোষণা দিয়েছিলেন, প্যারা হরিণ ও গাউর পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে গেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে। মনিরুল এইচ খান বলেন, সাম্প্রতিক কিছু অনুসন্ধানে প্যারা হরিণ ও গাউর দুটোই দেখা গেছে। এ ছাড়া গত বছর রাঙামাটির দুর্গম কাচালং বনে গিয়ে তিনি সূর্য ভালুক, কালো ভালুক, সম্বর হরিণসহ বেশ কিছু বন্য প্রাণীর দেখা পেয়েছেন। এ ছাড়া ওই বনে বেঙ্গল টাইগারের বিচরণেরও তথ্য–প্রমাণ পেয়েছেন তিনি।

মনিরুল এইচ খান বলেন, তবে যেভাবে চোখের সামনে বন ধ্বংস হচ্ছে, এই জীববৈচিত্র্য রক্ষাও কঠিন হয়ে পড়েছে। তাঁর মতে, পার্বত্য চট্টগ্রামের খুব অল্প অংশ আইনগতভাবে রক্ষিত। তবে বাস্তবে সেসব বন রক্ষার ব্যবস্থাপনায় অগ্রগতি নেই। কেবল কাগজ–কলমে নয়, এসব বন সংরক্ষণে বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

হাচিনসনের আশঙ্কা

হাচিনসন তাঁর বইয়ের শেষ দিকে পার্বত্য অঞ্চলের এই বনের টিকে থাকা নিয়ে আশঙ্কাও প্রকাশ করেছিলেন। তিনি লিখেছেন, ‘অচিরেই হাতি এবং বাঘের আবাসস্থল এই নীরব অন্ধকার বনের অধিকার নেবে উজ্জ্বল শস্যখেত। সেই সঙ্গে হারিয়ে যাবে সহজ–সরল পাহাড়িদের বিচিত্র জীবনের নানা অনুষঙ্গ ও আচার-উপচার। এমনটা যে ঘটবে, সে বিষয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই আমার।’