পি কে হালদারের ১৪ সহযোগীকে দুদকে তলব

পি কে হালদার
ছবি: সংগৃহীত

ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড থেকে ভুয়া কোম্পানির নামে ঋণ জালিয়াতির অভিযোগে পি কে হালদারের ১৪ সহযোগীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ১০ ও ১১ ফেব্রুয়ারি তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। দুদকের সংশ্লিষ্ট সূত্র প্রথম আলোকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রাশেদুল হক গত মঙ্গলবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তিনি অর্থ আত্মসাতের অনিয়ম ঢাকতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়ার তথ্য তুলে ধরেন। ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে ঋণের নামে অর্থ আত্মসাতে পি কে হালদারকে সহায়তাকারীদের নামও সেখানে উঠে আসে। এর দুই দিনের মাথায় সহযোগীদের ডেকে পাঠাল দুদক।

দুদকে তলব পাওয়া ১৪ জন হলেন আর বি এন্টারপ্রাইজের মালিক রতন কুমার বিশ্বাস, আর্থস্কোপ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রশান্ত দেউরি ও পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান, নিউট্রিক্যাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান স্বপন কুমার মিস্ত্রি, ওয়াকামা লিমিটেডের চেয়ারম্যান সুব্রত দাস, পরিচালক সুভ্রা রানী ঘোষ ও তোফাজ্জল হোসেন, কোলাসিন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উত্তম কুমার মিস্ত্রি, চেয়ারম্যান অতশি মৃধা, হাল ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুস্মিতা সাহা, জিঅ্যান্ডজি এন্টারপ্রাইজের মালিক গোপাল চন্দ্র গাঙ্গুলী, দ্রিনান অ্যাপারেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবু রাজিব মারুফ, কণিকা এন্টারপ্রাইজের মালিক প্রসাদ রায় এবং ইমেক্রোর মালিক ইমাম হোসেন।

আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে রাশেদুল হক বলেছেন, পি কে হালদারের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরীর গভীর সম্পর্ক ছিল। তাঁর অন্যতম ক্ষমতার উৎস ছিলেন এস কে সুর চৌধুরী। তাঁর মাধ্যমেই পি কে হালদার বিভিন্ন অনিয়মকে ম্যানেজ করতেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন বিভাগ থেকে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং পরিদর্শন করার জন্য বছরে দুবার সহকারী পরিচালক থেকে যুগ্ম পরিচালক পদের দুজন কর্মকর্তা আসতেন। তখন অনিয়ম করার (অনিয়ম না ধরার জন্য) জন্য তাঁদের প্রতিবার পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা করে ঘুষ দেওয়া হতো। এর ভিত্তিতে তাঁরা ইতিবাচক প্রতিবেদন দিতেন। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক শাহ আলমকে প্রতি মাসে দেওয়া হতো দুই লাখ টাকা করে।

রাশেদুল বলেছেন, ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের বোর্ড মেম্বারদের মধ্যে মো. নওশারুল ইসলাম, মমতাজ বেগম, বসুদেব ভট্টাচার্য, পাপিয়া ভট্টাচার্য অনিয়ম করে বেআইনিভাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠান যেমন এমটিবি, এমএসপি ফার্মা, নিউট্রিশনাল, জিঅ্যান্ডজি এন্টারপ্রাইজের নামে ঋণ নিয়ে জমা না দিয়ে তা পি কে হালদারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করতেন। আনান কেমিক্যাল, রহমান কেমিক্যাল, নর্দান জুট ম্যানুফ্যাকচারিংসহ বিভিন্ন কোম্পানির নামে যাচাই-বাছাই ছাড়াই পি কে হালদারের কথামতো ঋণ দেওয়া হয়, যা পরবর্তী সময়ে পি কে হালদারের প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করা হতো।

জবানবন্দিতে রাশেদুল হক বলেছেন, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালক ও সাবেক চেয়ারম্যান এ কে এম সাহিদ রেজার বিভিন্ন কাগুজে প্রতিষ্ঠানকে পি কে হালদারের নির্দেশে ঋণ প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া সিমটেক্সের মালিক সিদ্দিকুর রহমান, ব্যাংক এশিয়ার সাবেক এমডি ইরফান উদ্দিন আহমেদ, পিপলস লিজিংয়ের চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দী, রাজীব সোম, কাজী মোমরেজ মাহমুদ, ডিজাইন অ্যান্ড সোর্সের মালিক মো. জাহাঙ্গীর আলম, সন্দীপ করপোরেশনের মালিক স্বপন কুমার মিস্ত্রী, উত্তম কুমার মিস্ত্রী, সুখাদা প্রোপার্টির মালিক অমিতাভ অধিকারী, মুন এন্টারপ্রাইজের মালিক শঙ্খ ব্যাপারী, হাল ইন্টারন্যাশনালের মালিক সুস্মিতা সাহা, গোপাল চন্দ্র গাঙ্গুলী, অতশী মৃধা, অমল চন্দ্র দাস, রতম কুমার বিশ্বাস ছিলেন পি কে হালদারের সহযোগী এবং তাঁদের নামে পি কে হালদার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বানিয়ে ঋণপত্র তৈরি করে নিজে টাকা সরিয়ে নিতেন। বেশির ভাগই ছিল কাগুজে প্রতিষ্ঠান।

এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক এমডি পি কে হালদার বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্তত সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লোপাট করেন বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে উঠে আসে। পি কে হালদারের দখল করা প্রতিষ্ঠান চারটি হলো ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, পিপলস লিজিং, এফএএস ফাইন্যান্স ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)। এর মধ্যে পিপলস লিজিং অবসায়নের জন্য অবসায়ক নিয়োগ করা হয়েছে, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ও বিআইএফসিতে চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়েছেন আদালত।