পুরোনোদের নিয়েই অষ্টগ্রাম বিএনপির নতুন কমিটি

তিন মাস আগে ঘরোয়া পরিবেশে হয় কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম বিএনপির সম্মেলন। শুক্রবার হঠাৎ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া হলো এই উপজেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা। এতে বেশির ভাগই পুরোনো নেতা। এই কমিটির সক্ষমতা নিয়ে এরই মধ্যে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।

জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত অষ্টগ্রাম উপজেলা কমিটি ১০১ জনের। এতে সভাপতি করা হয়েছে আগের কমিটির আহ্বায়ক সাঈদ আহমেদকে। সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে আগের কমিটির সদস্যসচিব জাকির হোসেনকে। আহ্বায়ক কমিটির আগের কমিটিতেও তাঁরা একই পদে ছিলেন।

নেতা-কর্মীদের ভাষ্য, নতুন কমিটির ৯০ শতাংশ সদস্যই পুরোনো। বেশির ভাগের পদ–পদবিতেও পরিবর্তন নেই। নতুনদের ঠাঁই হওয়ার সংখ্যা হাতে গোনা। অনেকের প্রতিক্রিয়ায় এই কমিটি দিয়ে সংগঠনের গতি ফেরানোর চেয়ে আরও বেশি মন্থর হয়ে পড়বে।

নতুন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রেজা চৌধুরী। তিনি আগে ছিলেন উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি। দেড় যুগ নেতৃত্ব দিয়েছেন যুবদলের হয়েও। ফেসবুকে কমিটি দেখে সঙ্গে সঙ্গে পদ থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা এসেছে তাঁর কাছ থেকে।
সরে যাওয়ার কারণ জানতে মুঠোফোনে মাসুদ রেজা প্রথম আলোকে বলেন, অষ্টগ্রামের বিএনপির নেতৃত্ব শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। সাংগঠনিক চর্চার জায়গা খুঁজে পাওয়া কঠিন। তাঁর মতে, ফেসবুকে কমিটি ভেসে আসা দুর্বল সাংগঠনিক চর্চার ফসল। এ কারণে তিনি ঠিক করেছেন দলে থাকলেও নেতৃত্বে থাকবেন না।

দলীয় সূত্র জানায়, অষ্টগ্রাম উপজেলা বিএনপির সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয় ছয় বছর আগে। ওই কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন নতুন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। অষ্টগ্রাম উপজেলা কিশোরগঞ্জ-৪ সংসদীয় আসনের অন্তর্ভুক্ত। আসনটি জেলার হাওর উপজেলা অষ্টগ্রাম, ইটনা ও মিঠামইন নিয়ে। স্বাধীনতার আগ থেকে বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এই আসন থেকে নৌকা প্রতীকে জয় পেয়ে আসছেন। রাষ্ট্রপতির বড় ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ এখন টানা তিনবারের সাংসদ।

স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলছেন, নানা কারণে হাওরে বিএনপি রাজনীতি অনেকটা কঠিন হয়ে পড়েছে। স্বাধীনতার পর জিয়াউর রহমানের শাসনামলে এই আসন থেকে কেবল একবার ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ফরহাদ আহমেদ কাঞ্চন জয় পান। এরপর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি ফজলুর রহমান হাওরে বিএনপি রাজনীতির নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। কিন্তু দিন যতই যাচ্ছে সব কটি হাওর উপজেলায় বিএনপির সাংগঠনিক ভিত ততই দুর্বল হচ্ছে। সংগঠনের কর্মসূচি ছাড়া বিশেষ কোনো কর্মসূচি অষ্টগ্রামে দৃশ্যমান নেই।

এমন অবস্থায় নেতৃত্ব পরিবর্তনের দাবি জোরালো হয়। ঘটা করে কমিটি করতে তিন মাস আগে সম্মেলন করা হয়। কিন্তু ওই দিন পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা যায়নি। কেবল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়। কিছুদিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার প্রতিশ্রুতি থাকলে তিন মাস লেগে যায়, তা–ও প্রকাশ পায় ফেসবুকে। বিষয়টি অনেকে সহজে মেনে নিতে পারেনি। দু–একটি জায়গায় পরিবর্তন ছাড়া পুরোনো কমিটির সঙ্গে নতুন কমিটির কোনো পার্থক্য না থাকায় অনেকে হতাশ হয়ে পড়েছেন।

সৈয়দ ফাইয়াজ আহমেদ উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক। বর্তমান কমিটিতে তাঁকে ১ নম্বর সদস্য রাখা হয়েছে। নতুন কমিটির আকার ও নামের তালিকা দেখার পর তাঁর শঙ্কা আগের কমিটিকে তো শহীদ মিনারে পাওয়া যেত, এখন ফেসবুকের এই কমিটিকে শহীদ মিনারে দেখা পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।

বর্তমান কমিটির সহসভাপতি নয়জন। এর মধ্যে জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি গিয়াস উদ্দিন আশরাফি বলেন, এখন দলের দুর্দিন যাচ্ছে। সত্য অস্বীকার করার জো নেই, ফেসবুকের এই কমিটি দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন।

তবে দলের অপর একটি অংশ ফেসবুকেই বর্তমান কমিটিকে স্বাগত জানাচ্ছে। তাঁদের দলের ত্যাগী নেতা হিসেবে আখ্যা দিচ্ছে। আগামী দিনে হাওরে বিএনপি রাজনীতির কাঙ্ক্ষিত প্রত্যাশা পূরণ কেবল তাঁদের দিয়েই অর্জিত হওয়া সম্ভব বলে মন্তব্য করছে।

নবগঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন জানালেন, নতুনদের জায়গা কম হলেও পুরোনোরা পরীক্ষিত। বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারবিরোধী আন্দোলন করা কঠিন। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে পরীক্ষিত নেতা বেশি প্রয়োজন। কমিটিতে এই সংখ্যাটি যথেষ্ট রয়েছে।

পুরোনোদের দিয়ে নতুন কমিটি করার কারণ জানতে কথা হয় জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলমের সঙ্গে। নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদকের মতো তিনিও বলেন, এখন দলে প্রয়োজন পরীক্ষিত নেতা। পরীক্ষিতদের দিয়েই কমিটি করা হয়েছে।