পুলিশ সদস্যদের আরও আন্তরিকতা-নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ৩৭তম ব্যাচের শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণ দেন
ছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাইবার ক্রাইম, মানি লন্ডারিং, মানব পাচার, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকের মতো মারাত্মক সামাজিক অপরাধ দমনে পুলিশ সদস্যদের আরও আন্তরিকতা-নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী আজ রোববার সকালে রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ৩৭তম ব্যাচের শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ আহ্বান জানান। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও লিংকের সাহায্যে ভার্চ্যুয়ালি এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।

অপরাধের ধরন বদলাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন আধুনিক প্রযুক্তির যুগ। সাইবার ক্রাইম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটাকে আমাদের দমন করতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গতানুগতিক অপরাধের পাশাপাশি সাইবার ক্রাইম, মানি লন্ডারিং, মানব পাচার ইত্যাদি বৈশ্বিক অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকের মতো মারাত্মক সামাজিক ব্যাধি এবং নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা-নির্যাতনসহ নিত্যনতুন সামাজিক অপরাধ। এসব অপরাধকে আরও দক্ষতার সঙ্গে দমন করতে হবে।

পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, কেবল দেশে নয়, এ জন্য বিদেশে পাঠিয়ে উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। এটা অব্যাহত রাখা দরকার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি, একটা সময় অন্তর অন্তর তাঁদের প্রশিক্ষণ দিলে তাঁরা যতক্ষণ কাজে থাকবেন, তাঁদের কর্মদক্ষতা আরও বৃদ্ধি পাবে। সে ব্যবস্থাও করতে হবে।’

ফেসবুক, অ্যাপস বা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে গুজব ছড়ানো বা মিথ্যা তথ্য প্রদানসহ কিশোর ও উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েরা নানা অপরাধে যুক্ত হচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেখান থেকে তাদের বের করে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নিতে হবে। সাধারণভাবে গুজব রটানো বা এ ধরনের কাজ যেন করতে না পারে, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।’

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা ও গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে পুলিশ সদস্যদের নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়ার জন্যও শেখ হাসিনা আহ্বান জানান।

এসব কাজে পুলিশের শক্তিশালী ও সাহসী ভূমিকার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী কর্তব্য পালনকালে মৃত্যুবরণকারী পুলিশ সদস্যদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা, মানুষের সেবা দেওয়া, তাদের জীবনমান উন্নত করা—এগুলো আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। পুলিশের আইজিপি বেনজীর আহমেদ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, পুলিশ একাডেমির প্রিন্সিপাল খন্দকার গোলাম ফারুক, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সরকারের ঊর্ধ্বতন সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান অনুষ্ঠানে প্রশিক্ষণ গ্রহণকালে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পুরস্কার বিতরণ করেন।

সব বিষয়ে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য সহকারী পুলিশ সুপার স্নেহাশিষ কুমার দাস ‘বেস্ট প্রবেশনার’ পুরস্কার লাভ করেন।

অনুষ্ঠানে শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের শপথবাক্য পাঠ করানো হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানানো হয়। তিনি মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ দেখেন।