পূজার ৩৬ টাকার চাল ১০ টাকায়

চালের ছবিটি প্রতীকী।
চালের ছবিটি প্রতীকী।

মির্জাপুরে সিন্ডিকেটের কারণে দুর্গাপূজা উপলক্ষে সরকারি অনুদানের চালের ন্যায্যমূল্য পায়নি পূজামণ্ডপ কমিটি। সরকারের কেনা ৩৬ টাকা কেজির চালে তারা পেয়েছে মাত্র ১০ টাকা। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় ও খাদ্যগুদামের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিষয়টির সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে পূজারিদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে।

এ বছর মির্জাপুর পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়নে মোট ২৩৬টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা হয়। সরকারিভাবে প্রতিটি মণ্ডপে ৫০০ কেজি করে মোট ১১৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে খাদ্যগুদামে থাকা চাল খাওয়ার অনুপযোগী বলে বেশির ভাগ মণ্ডপ কর্তৃপক্ষ চাল না নিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়। এই সুযোগে খাদ্যগুদাম ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে থাকা ব্যবসায়ীরা একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। তাঁদের মধ্যে গুদামের শ্রমিকদের সর্দার হারুন মিয়া, ব্যবসায়ী মো. ছিবার উদ্দিন, মোশারফ হোসেন, জামিল হোসেন, আলহাজ মিয়াসহ ১৫ জন রয়েছেন।

গতকাল মঙ্গলবার মির্জাপুর বাজারে নিম্নমানের মোটা চাল ২৫ থেকে ২৭ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে চালের বাজার তেমন ওঠানামা করেনি। তবে সিন্ডিকেটের সদস্যরা পূজামণ্ডপগুলোতে বরাদ্দ দেওয়া চাল মাত্র ১০ টাকা কেজি দরে কিনেছেন।

এ বিষয়ে বানাইল ইউনিয়নের গ্রামাটিয়া পূর্বপাড়া চন্দ্রমোহন মাস্টারের বাড়ির পূজামণ্ডপ কমিটির সভাপতি বাবু লাল চৌধুরী বলেন, ‘আমারে ৫ হাজার টাকা দিল। ওখানে আমাদের কিছু লোক বলল, এভাবে নিমু না। পরে বাধ্য হয়ে আনলাম। টাকাটা দুই তলার ওপরে অফিস (খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয়) থেকে দিল। সেখানে তিনডা কইরা রিসিপের মধ্যে দুইড্যা রাখল। আর একটা গুডাউনে দিয়্যা খালি সিগনিচার দিয়া আইলাম।’

পৌর এলাকার জয় মা দুর্গা যুব সংঘের সভাপতি অভিজিৎ সূত্রধর বলেন, তিনিসহ এলাকার সব মণ্ডপ কর্তৃপক্ষই ৫ হাজার টাকা চালের দাম পেয়েছেন।

উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের থলপাড়া রাধানগর পূজামণ্ডপের সভাপতি মন্টু পাল বলেন, ‘আমি ৫ হাজার টাকার কথা শুইন্যা পিছিয়ে আইছিলাম। দেখলাম আমাদের চাইতে অনেক ভালো কোয়ালিটির লোক হইহুল্যা করল। লাভ অইল না। এ জন্য আমরাও নিয়্যা নিছি।’

>

ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত পূজারিরা
সিন্ডিকেট সদস্যরা পূজামণ্ডপগুলোতে বরাদ্দ দেওয়া চাল মাত্র ১০ টাকা কেজি দরে কিনেছেন
সিন্ডিকেটে হারুন মিয়া, ছিবার উদ্দিন, মোশারফ, জামিল হোসেনসহ ১৫ জন রয়েছেন

বানাইল ইউনিয়নের ভূষণ্ডি সর্বজনীন দুর্গাপূজা মণ্ডপ (একতা ক্লাব) কমিটির সভাপতি স্বপন কুমার মণ্ডল বলেন, ‘৫ হাজার টাকা দেওয়া নিয়ে সবার মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। গুডাউনে গিয়্যা বলছিলাম, টাকা এই রকম ক্যা। ব্যবসায়ীরা বলল, সবার একই দেওয়া হইছে। ডিও দেয়ার আগে সবাই বক্তৃতায় বলল, সর্বোচ্চটা দিব। কিন্তু পূজা কমিটির লোকজন তার ধারেকাছেও গেল না। আমি শংকর দাকে বললাম, দাদা ওখানে যান। সবাই গেছে, কি দিচ্ছে না দিচ্ছে একটু দেখেন।’

উপজেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রমথেশ গোস্বামী ওরফে শংকর বলেন, এখানে একটি সিন্ডিকেট কাজ করেছে। তিনি প্রতিবাদ করেছেন। সিন্ডিকেটের সঙ্গে পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের কেউ জড়িত নন।

খাদ্য পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ বলেন, চালের দর ওঠানামা করলেও খাদ্যগুদামের চাল ন্যূনতম ২০ টাকা কেজি হবে। সরকার এই বছর ওই চাল ১৮ টাকা ভর্তুকি দিয়ে ৩৬ টাকা দরে কিনেছিল। বিতরণ আদেশ পাওয়ার পর চাল গুদাম থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এরপর বাইরে কী হয়েছে, তা তাঁর জানা নেই।

খাদ্যগুদাম সূত্র জানায়, ১১৮ টন চালের মধ্যে ১১০ টন চাল পূজারিরা বিক্রি করে টাকা নিয়েছেন। সে হিসাবে চালের দাম ২০ টাকা কেজি দরে টনপ্রতি ১০ হাজার টাকা কম দিয়ে প্রায় ১১ লাখ টাকা সিন্ডিকেট সদস্যরা পকেটে নিয়েছেন। তাঁরা বাজারে ২২ থেকে ২৩ টাকায় চাল বিক্রি করেছেন। এতে তাঁরা বাড়তি আরও প্রায় ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা লাভ করেছেন।

এ বিষয়ে সিন্ডিকেট সদস্য মো. ছিবার উদ্দিন দাবি করেন, ‘যাঁরা চাল বিক্রি করেছেন, তাঁদের কাছে আমরা ১০ টাকা দরে চাল চেয়েছিলাম। তাঁরা ইচ্ছে করেই চাল দিয়েছেন। এতে ব্যবসায়ীদের কেউ হস্তক্ষেপ করেননি।’

টাঙ্গাইল জেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার শুন বলেন, জেলার অন্য স্থানে ৫০০ কেজি চালের দাম সাড়ে ৮ হাজার থেকে সাড়ে ৯ হাজার টাকা পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে, মির্জাপুরে মাত্র ৫ হাজার টাকা দিয়ে পূজারিদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। বিষয়টি জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। পূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষে এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।