পোড়াদহ মেলায় মাছ উৎসব

বগুড়ার গাবতলীর পোড়াদহ মেলা ঘিরে গতকাল উৎসবের আমেজ তৈরি হয়। মেলায় ৬০ কেজি ওজনের এ বাগাড় মাছটির দাম হাঁকা হয় এক লাখ টাকা l ছবি: প্রথম আলো
বগুড়ার গাবতলীর পোড়াদহ মেলা ঘিরে গতকাল উৎসবের আমেজ তৈরি হয়। মেলায় ৬০ কেজি ওজনের এ বাগাড় মাছটির দাম হাঁকা হয় এক লাখ টাকা l ছবি: প্রথম আলো

সাতসকালেই ইছামতী নদীর তীরে মানুষের স্রোত। নদীর তীরে বসেছে ৪০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা। মেলায় উঠেছে যমুনা-বাঙ্গালী নদীতে ধরা পড়া বিরাট বিরাট মাছ। চার শতাধিক দোকানে এসব মাছের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা।
মেলা উপলক্ষে আশপাশের অর্ধশত গ্রামে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। নাইওর এসেছেন মেয়ে ও জামাইরা। নিমন্ত্রণ করা হয়েছে আত্মীয়স্বজনকে। দূর-দূরান্ত থেকে দলে দলে লোকজন মেলায় এসেছেন মাছ কিনতে। সবাই সাধ্যমতো মাছ কিনে বাড়ি ফিরছেন।
বগুড়ার গাবতলী উপজেলার পোড়াদহ মেলার গতকাল বুধবার ভোরের এ ছবিটি। এবার মেলায় ৬০ কেজি ওজনের একটি বাগাড় ওঠে। বিক্রেতা বিপ্লব প্রামাণিক মাছটির দাম চান এক লাখ টাকা। কয়েকজন ক্রেতা মাছটি ৭০ থেকে ৭২ হাজার টাকায় দর-কষাকষি করছিলেন।
গতকাল সকাল ১০টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, মেলায় মানুষের ঢল নেমেছে। বগুড়া শহর থেকে পোড়াদহ পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সিএনজি অটোরিকশা, ভটভটি, ইজিবাইক, রিজার্ভ বাস, রিকশা-ভ্যান ও মোটরসাইকেলের দীর্ঘ জট। মেলামুখী অন্য সড়কেও একই চিত্র। মেলায় খেলনার দোকানগুলো সরগরম শিশুদের ভিড়ে। নাগরদোলা আর হোতা খেলায় ভিড় করেছে শিশুরা।
মেলা কমিটির সদস্য আবদুর রহিম মোল্লা বলেন, ‘এবার চার শতাধিক মাছের দোকান বসেছে। প্রতিটি দোকানে গড়ে কুড়ি মণ করে মাছ উঠেছে। অন্যবার মেলায় নদীতে ধরা পড়া বড় বড় মাছ বেশি উঠলেও এবার বড় মাছের আমদানি কিছুটা কম। তবে বড় মাছের চেয়ে ক্রেতার চাহিদা বেশি ছিল ছোট মাছের প্রতি। আজ (গতকাল) মেলায় মাছ কিনে জামাইদের আপ্যায়ন করা হবে। কাল (আজ বৃহস্পতিবার) বউ-ঝিরা প্রসাধনী কিনতে আসবে।’
নানা কারণে এ মেলা ঐতিহ্য হারাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন গোলাবাড়ী বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামিম হাসান। তিনি বলেন, প্রায় ৪০০ বছর আগে নদীতীরের বটবৃক্ষতলে সন্ন্যাসী পূজা উপলক্ষে প্রথম মেলা বসে। সেই ঐতিহ্য অনুসারে এখনো প্রতিবছরের মাঘের শেষ বুধবার মেলা বসে। গতবারও মেলার জৌলুশ ছিল। কিন্তু এবার তুলনামূলকভাবে দর্শনার্থী কম। প্রশাসনের কড়াকড়িতে যাত্রা ও পুতুলনাচের আয়োজন নেই। তাই রমরমা ব্যাপারটাও কম।
গোলাবাড়ী গ্রামের ইসরাফিল হোসেন (৬৫) বলেন, ‘মেলা উপলক্ষে মহিষাবান, গাবতলী সদর, দুর্গাহাটা, বালিয়াদীঘি, নশিপুর ইউনিয়নের অর্ধশত গ্রামে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। মেলা থেকে কেনা বড় বড় মাছ দিয়ে আপ্যায়ন করা হচ্ছে অতিথি ও আত্মীয়স্বজনকে।
৩০ বছর ধরে মেলায় মাছ বিক্রি করতে আসেন সিরাজগঞ্জ সদরের ব্যবসায়ী আবদুস সামাদ। তিনি বলেন, ‘অন্যবার বড় মাছের আমদানি ও ক্রেতা দুটিই বেশি ছিল। এবার আমদানি বেশি, ক্রেতা কম।’
গাবতলীর রানীরপাড়া গ্রামের সোহেল রানা ১৫ কেজি ওজনের একটি বাগাড় কিনেছেন ১৬ হাজার টাকায়। তিনি বলেন, ‘গতবার নদীর আইড় কিনেছিলাম। এবার শখ করে বাঘাইড় কিনলাম।’