পৌর নির্বাহীদের বেতন গ্রেড বাড়ানোর সিদ্ধান্ত স্থগিত

দেশের পৌরসভাগুলোর পৌর নির্বাহী কর্মকর্তাদের (সাবেক সচিব পদ) বেতন গ্রেড বাড়িয়ে গত মঙ্গলবার প্রজ্ঞাপন জারি করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। প্রজ্ঞাপনের তিন কর্মদিবসের মাথায় আজ রোববার তা স্থগিত করা হয়েছে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের এই প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। এমন পরিস্থিতিতে পৌর নির্বাহীদের বেতন গ্রেড বাড়ানো–সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনটি পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের নগর উন্নয়ন শাখার যুগ্ম সচিব মো. সবুর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্রেড পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন। আরেকটু সময় নিয়ে বিষয়টি পর্যালোচনা করা হবে। তাই আপাতত সিদ্ধান্তটি স্থগিত করা হয়েছে।’    

গত মঙ্গলবারের ওই প্রজ্ঞাপনে বিদ্যমান আইন অমান্য হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন পৌর কর্মকর্তা-কর্মীরা। সেদিন জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, প্রথম শ্রেণির (ক শ্রেণি) পৌরসভার নির্বাহীদের বেতন ষষ্ঠ গ্রেডে উন্নীত করা হয়। দ্বিতীয় (খ) শ্রেণির পৌর নির্বাহীদের বেতন সপ্তম গ্রেডে এবং তৃতীয় (গ) শ্রেণির নির্বাহীদের বেতন নবম গ্রেডে উন্নীত করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বেতন গ্রেড উন্নীত করার ফলে অতিরিক্ত যে অর্থ লাগবে তা সংশ্লিষ্ট পৌরসভার নিজস্ব তহবিল থেকে দিতে হবে। পৌর নির্বাহী কর্মকর্তাদের যোগদানের তারিখ থেকে এ আদেশ কার্যকর হবে।

এই প্রজ্ঞাপন জারির পরেই পৌরসভার বিভিন্ন পদে কর্মরত কর্মকর্তারা বেশ কিছু প্রশ্ন তোলেন। দেশের অধিকাংশ পৌরসভার আয় কম হওয়ায় কর্মীদের বেতন-ভাতা অনিয়মিত। এর মধ্যে পৌর নির্বাহীদের বেতন স্কেল বাড়ানো হয়। পৌরসভাগুলোর এই অতিরিক্ত খরচ বহন করার আর্থিক সামর্থ্য নেই। এ নিয়ে দেখা দেয় জটিলতা। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা প্রশ্ন তোলেন, একজন পৌর সচিব ২০ বছর আগে কোনো পৌরসভায় যোগদানের পর একাধিক পৌরসভায় বদলি হন, তাহলে তাঁর আগের বেতনাদি কোন পৌরসভা পরিশোধ করবে?

পৌরসভার কর্মকর্তারা বলেন, অধিকাংশ পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন বকেয়া। পৌর নির্বাহীদের যোগদান থেকে বেতন গ্রেড কার্যকর হলে একেকজনের ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা বকেয়া যুক্ত হবে। আর যোগদানের সময় থেকে ষষ্ঠ গ্রেড কার্যকর হলে টাইম স্কেল পেয়ে তাঁরা ইতিমধ্যে তৃতীয় গ্রেডে চলে আসার কথা। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত হয়নি।

পৌর নির্বাহী কর্মকর্তাদের যোগদানের তারিখ থেকে বেতন গ্রেড বাড়ানোর সিদ্ধান্তটি সঠিক হয়নি বলে মনে করেন পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংগঠন বাংলাদেশ পৌরসভা সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুল আলীম মোল্লা, যিনি নিজেও একজন পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘পৌর নির্বাহী কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত। নির্বাহীরা দশম, একাদশতম গ্রেডে বেতন পান। অথচ তাঁদের অধস্তনরাও নবম গ্রেডে বেতন পান। প্রজ্ঞাপন জারির দিন থেকে সিদ্ধান্তটি কার্যকর হলে অন্যরা সংক্ষুব্ধ হতো না।’

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি অনুবিভাগের তৈরি করা বেতন স্কেল বা পদমর্যাদা উন্নীতকরণ–সংক্রান্ত কাগজের একটি তালিকা রয়েছে। তাতে ১১টি বিষয় উল্লেখ রয়েছে। বেতন স্কেল উন্নীত করা হলে চেইন অব কমান্ড কোনো সমস্যা হবে কি না, সরকারের প্রতিবছরের আর্থিক সংশ্লেষ, সমজাতীয় অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে অনুরূপ দাবি আসার সম্ভাবনা রয়েছে কি না, এমন বিষয়গুলো পর্যালোচনা করতে হয়।

পৌর কর্মকর্তারা বলছেন, পৌর নির্বাহী ষষ্ঠ গ্রেডের হলে পৌরসভার প্রকৌশল, স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধানেরা তাঁর অধীন হবেন। এতে চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়বে।