প্রকাশকদের স্বপ্নভঙ্গ

ঘাত–প্রতিঘাতে জর্জর এবারের অমর একুশে বইমেলার আয়ু ফুরিয়ে যাচ্ছে দুদিন আগেই। গতকাল শনিবার মেলায় বাংলা একাডেমির তথ্যকেন্দ্র থেকে মাইকে মেলার ইতি টানার ঘোষণা দেওয়া হয়। কাল সোমবার শেষ হচ্ছে মেলা।

করোনা অতিমারির কারণে অনিশ্চয়তা ছিল মেলা নিয়ে। দ্বিধাদ্বন্দ্বের অবসানের পর ফেব্রুয়ারির মেলা শুরু হয়েছিল মার্চের ১৮ তারিখে। শেষ হওয়ার কথা ছিল ১৪ এপ্রিল পয়লা বৈশাখে। এবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী—এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে নিয়ে প্রকাশকেরা বিভিন্ন ধরনের বই প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। দেড় মাসের বেশি সময় পরে মেলা শুরু হওয়ায় বিক্রি নিয়ে একরকমের সন্দেহ-শঙ্কা সবার মনেই ছিল। শেষ পর্যন্ত তা–ই সত্যি হলো।

করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় তিন দফায় মেলার সময় পরিবর্তন করা হয়। শুরু হয়ে যায় বিধিনিষেধ। ফলে মেলায় লোকসমাগমও অনেক কমে যায়। ঢাকার বাইরে থেকে ক্রেতারা আসতে পারেননি। এসব কারণে এবারের মেলায় বই বিক্রির পরিমাণ ছিল অনেক কম। এমনও দিন গেছে, অনেক স্টলে বিক্রিই হয়নি। এবার লাভ তো দূরের কথা, লোকসান গুনতে হচ্ছে প্রকাশকদের।

গতকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলার মাঠে লোকসানের কথাই বলছিলেন জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ। একাডেমির তথ্যকেন্দ্র থেকে মেলা শেষ হওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, এক বছর ধরে প্রকাশকদের বেচাবিক্রি প্রায় বন্ধ। বইমেলা ঘিরে তাঁরা ঘুরে দাঁড়ানোর যে আশা করেছিলেন, তা–ও নস্যাৎ হয়ে গেল। বেচাকেনা না হওয়ায় ছোট–বড় সব প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকেই লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে। হাতে গোনা কিছু বড় প্রতিষ্ঠান হয়তো এটা কাটিয়ে উঠতে পারবে। অন্যদের জন্য টিকে থাকা খুব কষ্টকর হয়ে উঠবে।

মেয়াদের আগেই মেলা বন্ধের ঘোষণার কারণ সম্পর্কে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর একক সিদ্ধান্তে কোনো কিছু হচ্ছে না। এবার মেলা শুরু থেকে সময় পরিবর্তন—সবকিছুই সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তে হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত মেলা করার সিদ্ধান্ত থাকলেও ওই দিন থেকে সর্বাত্মক লকডাউন শুরু হচ্ছে। তাই দুই দিন আগেই মেলা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত। প্রকাশকেরা যেন লকডাউন শুরুর আগেই তাঁদের বই ও স্টল সরিয়ে নিয়ে মাঠ খালি করে দিতে পারেন, সে কারণে দুই দিন আগেই মেলা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।

নতুন বই: গতকাল মেলার তথ্যকেন্দ্রের হিসাব অনুসারে নতুন বই এসেছে ১০৮টি। উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে ইউপিএল এনেছে আনন্দ বিকাশ চাকমার কার্পাস মহল থেকে শান্তি চুক্তি: পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় নীতির ইতিহাস, পাঞ্জেরী এনেছে কামাল চৌধুরীর কাব্য স্তব্ধতা যারা শিখে গেছে, বাতিঘর এনেছে শফিক আফতাবের শওকত আলীর কথাসাহিত্য: বিষয় ও শিল্পকৌশল, সংবেদ এনেছে মাহফুজ সরকার ও শাহারিয়ার জিমের গবেষণা ধর্ষণের তত্ত্ব তালাশ: পুরুষ তন্ত্র বনাম নারীবাদ, অন্যধারা থেকে এসেছে মোজাফফার বাবুর উপন্যাস কুহেলিকা, মিজান পাবলিকেশন থেকে সেলিনা হোসেনের শিশুতোষ আকাশপরী ও ফারুক নওয়াজের শিশুতোষ ভুতুড়ে লাল বাড়ি, রেনেসাঁ থেকে হাবীবুল্লাহ সিরাজীর কাব্য কৃষ্ণ কৃপাণ ও অন্যান্য কবিতা, অন্যপ্রকাশ থেকে পিয়াস মজিদের গল্প রিমঝিম মাংস বিতান, উৎস এনেছে আলী ইমামের আদিবাসীদের লোকগল্প কতো কাল ধরে।